রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন, নিহত ৪
রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক বগিতে আগুন লেগেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন নিহতের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের মধ্যে একজন যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ট্রেনটিতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় আরও অনেকের দগ্ধ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওয়ারি ডিভিশনের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, 'সায়েদাবাদ স্টেশন অতিক্রম করার পরপরই ট্রেনটিতে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লেগে যাওয়া বগি থেকে অন্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান এক তরুণ।'
রেললাইন প্রধান সড়ক থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে দ্রুত পৌঁছানো কঠিন বলে জানান, ইকবাল হোসেন। 'আগুন খুব দ্রুতই ট্রেনের একাধিক বগিতে ছড়িয়ে যায়,' বলেন তিনি।
ট্রেনটিতে থাকা যাত্রী তাহসিন নাওয়ার প্রাচী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ট্রেনের 'ঙ' বগিতে প্রথমে আগুন লাগে। আগুন লাগে গোপীবাগের রেলস্টেশনে ঢোকার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আউটারে।"
তিনি জানান, ট্রেনের মাঝখানের অংশে থাকা 'ঙ' বগির আগুন সাথে সাথে খুব দ্রুতই বগির সম্পূর্ণ অংশ এবং আশপাশের বগিতে আগুন ছড়িয়ে যায়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স-এর স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসীম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খিলগাঁও ও পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের ৭টি ইউনিট বর্তমানে আগুন নেভাতে কাজ করছে। আরও একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।'
'এ এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো বাড়িতে আগুন লেগেছে। কিন্তু পরে দেখলাম আগুন ট্রেনে ধরেছে,' বলেন ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি নাশকতা না-কি গোলযোগ বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।
ট্রেনটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পরিচালক সায়েম বলেন, 'আমরা কমলাপুর স্টেশনের প্রায় কাছাকাছি ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ পোড়া গন্ধ পাই। এরপর এয়ার কন্ডিশনার বন্ধ করে বের হয়ে পড়ি।' সায়েম জানান, প্রথমে 'চ' বগিতে আগুন ধরে যায়।
'আগুন লাগার পর সবাই তাড়াহুড়ো করে নামার সময় আউটারে পাথুরে ভূমিতে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন,' বলেন ভুক্তভোগী যাত্রী তাহসিন নাওয়ার প্রাচী।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বাধীন (২১) জানান, 'আমরা একটু দূরেই ছিলাম। আগুন দেখে আসি। আমরা বন্ধুরা মিলে কয়েকজনকে জ্বলন্ত ট্রেন থেকে বের করে আনি। আগুনের এত তাপ ছিল, মনে হচ্ছিল জাহান্নামের আগুন।'
যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত তরুণ তাদের সামনেই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন জানিয়ে স্বাধীন বলেন, 'পরে দেখি একজন জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন সময় অর্ধেক জানালা খুলে পড়ে যায়। তিনি ভেতরে আটকে পড়েন। জানালার কাচ ভেঙে যায়। পরে ছেলেটি আমাদের সামনেই অঙ্গার হয়ে গেলেন। কিছুই করতে পারলাম না।'
আরেক স্থানীয় উদ্ধারকারী তরুণ ইমরান (২১) বলেন, তারা ওই তরুণকে টেনে বের করার চেষ্টা করেও সফল হননি। তবে তারা ট্রেনটি থেকে কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করেন।
এ নিয়ে দেশে গত ২৮ অক্টোবরের পর ট্রেনে আগুনের ঘটনায় মোট আটজনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনটির তিনটি বগি পুরোপুরি পুড়ে যায়। পরে একটি বগি থেকে মা ও শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।