খরচ বাড়ার মাঝে টিকে থাকার পথ খুঁজে বের করছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেনিম থেকে শুরু করে প্যাকেজিং, সাইকেল, গাড়ির ব্যবস্যার সঙ্গে যুক্ত মেঘনা গ্রুপ জ্বালানি-সাশ্রয়ী জেনারেটরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার কৌশলগত বিনিয়োগ করেছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ব্যয় মোকাবিলার লক্ষ্যে নেওয়া এ পদক্ষেপটি লাভজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গ্রুপটি এখন তাদের পূর্ববর্তী জেনারেটর মডেলের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ৬০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারছে।
বর্তমান চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে খরচ কমানোর এ যাত্রায় মেঘনা গ্রুপ একা নয়। ডিবিএল গ্রুপ, এনভয় টেক্সটাইল এবং প্যাসিফিক জিনসসহ এ খাতের অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও অনুরূপ কৌশল গ্রহণ করেছে। রোবোটিক্সসহ দক্ষ যন্ত্রপাতি ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এসব কোম্পানি উৎপাদনের মাত্রা ধরে রাখা বা এমনকি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জ্বালানি, পানি ও জনশক্তির ওপর আগের তুলনায় কম খরচ করছে।
বাজারে প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এসব কোম্পানির কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে কম খরচে ঋণ গ্রহণের মতো বিভিন্ন বিকল্প পন্থাও অবলম্বন করেছে।
এভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম লাভ বজায় রাখার এবং উচ্চমূল্যের ডলার, জ্বালানির ট্যারিফ বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান সুদহার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে মজুরির চাপ মোকাবিলা করার পথ খুঁজে নিচ্ছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ২০ জনেরও বেশি রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা বলেছে। বেশিরভাগই টেক্সটাইল এবং পোশাক খাতের এ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কীভাবে তারা ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক খরচের কারণে মুনাফা ও মূলধন দুইই হ্রাসের সঙ্গে লড়ছেন।
স্থানীয় এবং রপ্তানি বাজার উভয়ের নির্মাতারা একই ধরনের সংকটের মুখে রয়েছে। কিন্তু চাপ রপ্তানি খাতগুলোতে বেশি কারণ এগুলো অভ্যন্তরীণ বাজারের বিক্রেতাদের মতো বৈশ্বিক ক্রেতাদের ওপর অতিরিক্ত ব্যয় চাপাতে পারে না।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে লাভের সঙ্গে আপস করছেন। কেউ কেউ এ মুহূর্তে বাজারে টিকে থাকার জন্য লোকসানও গুনছেন।
উদ্ভাবনের মাধ্যমে মোকাবিলা
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিভিন্ন কৌশলের একটি হলো উদ্ভাবনী হওয়া। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ধেক সক্ষমতায় কারখানা চালাচ্ছে এবং গ্যাস-বিদ্যুতের উচ্চ খরচ আংশিকভাবে পূরণ করতে জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিদেশি ঋণ খুঁজছে, কারণ সেগুলোর সুদহার স্থানীয় ব্যাংকগুলোর তুলনায় কম।
বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসমূহ এক ইউনিটের লোকসান পুষিয়ে নিচ্ছে অন্য ইউনিটের মুনাফা থেকে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পণ্যের দাম বাড়ালে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে গ্রাহক হারানোর আশঙ্কায় কিছু নির্মাতা দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য প্যাকেজ করা পণ্যের ওজন কমানোর পথ বেছে নিয়েছে।
যেহেতু মূল্যস্ফীতি উচ্চ রয়ে গেছে, মজুরির চাপ উৎপাদন খাতের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়-উদ্বেগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
জ্বালানির উচ্চ ট্যারিফ ব্যয় বাড়াচ্ছে
শিল্পমালিকেরা বলেছেন, ২০২৩ সালের শুরু থেকে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া রুটিন সমন্বয়ের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে বিদ্যুতের দাম দুইবার বাড়ানো হয়েছে।
ব্যয়বহুল জ্বালানি সব ধরনের শিল্পকে প্রভাবিত করে, কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লাগে। প্রায় ৪০ কোটি টাকা বার্ষিক রপ্তানিমূল্যের আমান গার্মেন্ট নামক একটি ছোট কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিলে ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন এটিকে এসব ব্যয় বাবদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়, যদিও এর পণ্যের দাম উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে না।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে কথা বলার সময় আমান গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন এক বছর আগের তুলনায় তাদের বিদ্যুৎ বিল ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরেক ব্যবসায়ী মো. খসরু চৌধুরী বর্ণনা করেছেন কেন তার কোম্পানি নিপা গ্রুপকে জুন পর্যন্ত স্রেফ কারখানা সম্পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর জন্য গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম দামে অর্ডার নিতে হয়েছিল।
তিনি আশা করেন, আগামী মাসে একটি অনুকূল মৌসুম আসবে এবং কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, অর্ডার ধীরগতিতে বাড়ছে বলে দাম বাড়াতে তাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী আগস্ট–সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বর্তমানে তারা আগামী গ্রীষ্মের জন্য অর্ডার বুকিং পাচ্ছেন যা জুন পর্যন্ত চলতে পারে। তবে এর মধ্যে মূল্য সমন্বয় করা খুব কঠিন হবে।
'আমরা বর্ধিত দক্ষতার মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ মেটানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু এ মুহূর্তে এটি বেশ কঠিন। কারণ ব্যবসার খরচ আকাশচুম্বী।'
কঠিন সময়ে উদ্ভাবনী হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় মোকাবিলা ও খরচ সাশ্রয়ের জন্য বিকল্প বিভিন্ন উপায়ের চেষ্টা করছে।
পোশাক ও টাইলস শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা গত ছয়মাসে গ্যাস বিলের জন্য অতিরিক্ত ২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করেছেন যা এক বছর আগের তুলনায় ১৪৩ শতাংশ বেশি। উচ্চ সুদহার এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলারের উচ্চমূল্যসহ অন্যান্য আর্থিক ব্যয় ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ১৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা হয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে তারা ৬৫ শতাংশ সক্ষমতায় তাদের কারখানা পরিচালনা করেছেন যা তাদের পরিচালন ব্যয়ও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে তাদের নির্ধারিত আর্থিক খরচ কমাতে কিছু বন্ড ইস্যু করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমান সুদের হার প্রায় ১৪ শতাংশ, যেখানে গত বছরের জুনে ছিল ৯ শতাংশ।
বড় শিল্পগুলো পরিচালন ব্যয় কমাতে জ্বালানি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে শাশা ডেনিমস লিমিটেড অন্যতম।
টিবিএস-এর সঙ্গে আলাপকালে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের গ্যাসের বিল এক বছর আগের তুলনায় ১২০ শতাংশ বেশি দিতে হচ্ছে। যদিও তারা জ্বালানি-সাশ্রয়ী জেনারেটরে বিনিয়োগ করেছেন। 'যদি আমরা এ ধরনের জেনারেটরে বিনিয়োগ না করতাম, তাহলে ১৭৯ শতাংশ দামবৃদ্ধির পরে আমাদের গ্যাস বিল অনেক বেশি হয়ে যেত।'
দাম চড়া, পণ্য কম
স্থানীয় ভোক্তাপণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের দাম বাড়ানো এবং পণ্যের ওজন কমানোর মতো কৌশল বাস্তবায়ন করে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ সমন্বয় সত্ত্বেও, তাদের লাভের মার্জিন সংকুচিত হচ্ছে, এবং কিছুক্ষেত্রে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ভোক্তারা কম খরচ করছেন।
নেতৃস্থানীয় ভোগ্যপণ্য নির্মাতা প্রাণ গ্রুপ স্থানীয় এবং রপ্তানি উভয় বাজারে পণ্য সরবরাহ করে।
টিবিএস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম বাড়ছে, ইউটিলিটি মূল্য গত বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যা তাদের পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৫ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংক সুদের হারও বাড়ছে।
মৃধা পরিচালন ব্যয়, অতিরিক্ত ব্যয় এবং মুনাফা কমিয়ে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে তাদের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। তবে এসব চেষ্টার পরও তারা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের ভোগ, বিশেষত বেভারেজ পণ্যের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে বলে তারা লক্ষ্য করেছেন।
দ্রুত-ভোক্তা পণ্য [ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস; এফএমসিজি] নির্মাতাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করে মৃধা আরও উল্লেখ করেন, তাদের লাভের পরিমাণ বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।
স্থানীয় অর্থায়নের উচ্চ ব্যয় প্রশমিত করার জন্য তারা অভ্যন্তরীণ সুদহারের তুলনায় কম সুদের কারণে বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছেন বলেও জানান তিনি।
খরচ বাড়ছে, রপ্তানিমূল্য কমছে
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর মতে, গত সাতমাসে পোশাক রপ্তানিকারকদের ৩টি প্রধান রপ্তানিপণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে টি-শার্টের ১৭ শতাংশ, ট্রাউজারের সাড়ে শতাংশ এবং সোয়েটারের রপ্তানিমূল্য ১৪ শতাংশ কমে গিয়েছে।
টিবিএস-এর সঙ্গে আলাপকালে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, দাম কমার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের বিক্রি গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, চিনো প্যান্টের দাম গত বছর ১৭ থেকে ১৮ ডলার ছিল। কিন্তু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন একই পণ্য ১০ ডলারে কেনার প্রস্তাব করছে।
একই সময়ে ক্রেতারা একটি বেসিক টি-শার্টের জন্য ১ ডলার প্রস্তাব করছে, যা এক বছর আগে ১ ডলার ৪০ সেন্ট ছিল, রাকিবুল বলেন। 'এখন ক্রেতারা একটি টি-শার্টের দাম একটি সেলাই করা প্যান্টির মতো কম করার চেষ্টা করছে, যা বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ সেন্টের মধ্যে বিক্রি হয়,' মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএ'র এ নেতা বলেন, ফলে কারখানাগুলো তাদের আর্থিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য অর্ডারের সম্পূর্ণ সক্ষমতা বুক করার চেষ্টা করছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে তাদের ব্যাংকদায় বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, রপ্তানিকারকদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ক্রেতাদের দাম কমানোর একটি বড় কারণ।
অতিরিক্ত দায়বদ্ধতার ঝুঁকি এড়াতে কিছু কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে না এবং ভালো সময়ের অপেক্ষা করছে বলেও উল্লেখ করেন রকিবুল। 'অর্ধেক সক্ষমতায় একটি কারখানা চালানো সম্পূর্ণ সক্ষমতার চেয়ে ভালো। সম্পূর্ণ সক্ষমতা দায় বাড়াতে পারে।'
বিজিএমইএ-এর একজন পরিচালক, টিএডি গ্রুপের আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, 'আমাদের এককভাবে নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে দরকষাকষির জন্য আলোচনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় ক্রেতারা আমাদের পণ্যের দাম বাড়াবে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কারখানাগুলো দরকষাকষি সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে ব্যবসা হারাতে পারে, যার উদাহরণ ইতোমধ্যে কিছু শিল্পখাতে দেখা গিয়েছে।
শিল্পাঞ্চলে জ্বালানি সংকট
বেশি বিল পরিশোধের পরও বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়া এবং পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আমান গার্মেন্টের মালিক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আশুলিয়া এলাকায় তাদের কারখানা আট উৎপাদন ঘণ্টার মধ্যে অন্তত পাঁচঘণ্টা বিদ্যুৎবিভ্রাটের মুখে পড়ছে।
তিনি বলেন, 'নির্মাতাদের একার পক্ষে দাম সামঞ্জস্য করা খুব কঠিন হবে কারণ বাড়তি ইউটিলিটি খরচ এবং মজুরিব্যয় তাদেরকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে।'
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের চাপ শূন্য পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চ) থাকে।
'যদিও রাতে গ্যাসের চাপ পাওয়া যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি দেড় থেকে দুই পিএসআইয়ে থাকে। অথচ আমাদের ৮ থেকে ৯ পিএসআই প্রয়োজন।'
তার পরিবারের মালিকানাধীন এমএস ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের কথা উল্লেখ করে হাতেম বলেন, 'আমরা দুর্বল গ্যাস সরবরাহের কারণে মাত্র কয়েকটি কারখানা চালাতে পারছি।'
তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর পরও সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না।
হাতেম বলেন, গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে। 'শিপমেন্টের সময়সূচি মিস হওয়ার কারণে অনেক ক্রেতা বিমানে পণ্য পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। আবার অনেকে ডিসকাউন্টের দাবি করে যা শেষ পর্যন্ত আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন টেক্সটাইল মিলার বলেন, নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের মিলারেরা সম্প্রতি হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, যা তাদের মূলধন বিনিয়োগে প্রভাব ফেলেছে।
হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশকিছু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে, যার কারণে তাদের কারখানা ইউনিটগুলো দুইদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে। ওসব যন্ত্র মেরামতের জন্য এক কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ টেক্সটাইল মিলার বলেন, গত নয় মাসে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে তার গ্রুপের প্রায় ১০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
গ্যাস সংকটের নেই আশু প্রতিকার
এদিকে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই গ্যাস সংকটের কোনো সমাধান হবে না। তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
অভ্যন্তরীণ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও কোনো সুফল পেতে অন্তত দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ফলে এ বছর ছাড়াও আগামী দুইবছর গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। সরকার গ্যাস রেশনিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোবাকিলা করতে থাকবে, কর্মকর্তারা বলেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন, 'দেশে গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কাজ চলছে।'