স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে চট্টগ্রাম রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
হঠাৎ করেই যেন ভেঙে পড়েছে তাদের জীবনের স্বপ্ন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত হাজী ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্স এর টায়ার ব্যবসায়ী নজিম উদ্দিন ও ব্যাটারি ব্যবসায়ী শাহিন দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন।
তবে ফিরে এসে আর দোকান দেখতে পাননি। ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে তাদের দোকান ছাই হয়ে গেছে।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০ জুলাই নারায়নগঞ্জের চট্টগ্রাম রোডে আগুনে পুড়ে ভেঙে গেছে এমন অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন।
নিজেদের স্বল্প পুঁজি দিয়ে তারা সাজিয়েছিলেন ভাগ্য বদলের বিতান। তবে এ ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া ভাগ্যের চাকা কীভাবে নতুন করে ঘুরাবেন তারা, সেটা জানা নেই তাদের।
দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু প্রথম তলাতেই প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ছিল ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিমরাইল শাখা; যার সব কিছু পুড়ে গেছে। তৃতীয় তলায় ছিল রেস্টুরেন্ট। তবে এ দুই ফ্লোরে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।
দোকানিরা ধারণা করছেন, ভবনটির ৮ তলা থেকে গুলি না করলে আন্দোলনকারীরা এমন অগ্নি সংযোগ হয়ত করতো না। এভাবে হয়ত তারা নিঃস্ব হতেন না।
পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবরে দোকানগুলো আন্দোলনকারীদের আক্রোশের মুখে পড়ে বলে জানান তারা।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে পোড়া দোকান ছাই সরানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায়ী নিজাম ও শাহিন। তারা জানালেন, তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। দোকান থেকে এক টাকার মালামালও সরানোর সুযোগ হয়নি।
তাদের একজন শোক করতে করতে বললেন, "আমাদের এখন আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে জানা নেই আমাদের।"
নিজাম উদ্দিন বলেন, "আগুনে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমন ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেব তা জানি না।"
শাহিন জানান তার প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটাই তার একমাত্র অবলম্বন ছিল। সব হারিয়ে দিশেহারা তিনি।
পোড়া শো-রুমের ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত ছিলেন অটোমেশন গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আজিজ।
তিনি বলেন, "আমরা মূলত শিল্পকারখানার ইলেক্ট্রিক ডিভাইস বিক্রি করে থাকি। এই শো-রুমে প্রায়ই আড়াই হাজার ধরনের যন্ত্রাংশ ছিল। যার ক্রয়মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা; যা পুড়ে শেষ। পাশে রঙের দোকান থাকায় ভবনের ভিতরে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।"
হামদর্দ ওয়াকফ বাংলাদেশ এর শাখা ছিল এই ভবনে। শাখার এরিয়া ম্যানেজার ইউসুফ ভইয়া জানিয়েছেন, তাদের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, "সবকিছু পুড়ে গেছে। দোকান বন্ধ করে যাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আগুন লাগে এখানে।"
বাইসাইকেলের দোকানদার আল আমিনের বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে আল আমিনের। ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন আল আমিন, জানা নেই তার।
ওষুধের দোকানি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, তার প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এই দোকান। আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়েছে তার।
তিনি আরও জানান, এই মার্কেটে বিআরবি ক্যাবলের শো-রুম ছিল; তাদের প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রং ব্যবসায়ীরও প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঋণ করে দোকান সাজিয়েছিলেন, জীবনের সব অর্জিত সম্পদ দিয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এখন তারা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কবে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, সেটাও তাদের জানা নেই।
চিটাগং রোডের এই ব্যবসায়ীরা এখন হতাশার অন্ধকারে। হাইওয়ের যাতায়াত ও যানবাহনের শব্দে পরিবেশ স্বাভাবিক মনে হলেও, ব্যবসায়ীদের মনে গভীর ভাবনা আর নির্বাক স্তব্ধতা বিরাজ করছে।
এখন এই ব্যবসায়ীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন কি না এবং কীভাবে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবেন, সেটাই দেখার বিষয়।