লেবাননে নিরাপত্তা সংকটে বাংলাদেশি প্রবাসীরা
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলার মধ্যে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন সেদেশে অবস্থানরত হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসী। বড় শহরগুলোকে লক্ষ্য করে চলমান ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ছেড়ে বৈরুতে পালিয়েছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ লেবাননে ৩ জন ও বৈরুতে ২ জন মিলিয়ে মোট ৫ জন বাংলাদেশি চলমান হামলায় আহত হয়েছেন।
আশ্রয়হীন অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। তারা বাংলাদেশে ফিরতে চাইছেন। তবে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা না করায় দেশে ফেরা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
ফলে যারা দেশে ফিরতে চান তাদেরকে নিয়ে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন অভিবাসী শ্রমিকরা।
১৪ বছর ধরে লেবাননে আছেন গোপালগঞ্জের শেখ মামুন। মুঠোফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তিনি বলেন, "শত শত বাংলাদেশি রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন। আমরা প্রবাসী কমিউনিটি– যতটুকু সম্ভব হয় খাবার, পানি এবং অর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছি। দূতাবাসও সহায়তা করছে। তবে এখানে সাহায্যের প্রয়োজন, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।"
বৈরুতে মাজদায় কাজ করা মামুন আরও জানান, কিছু আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হলেও, বাংলাদেশিরা সেগুলোতে ঠিকঠাক আশ্রয় নিতে পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই অনিরাপদে খোলা জায়গায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা বাড়ি ফিরতে চান, তারাও বের হতে পারছেন না।"
মামুন জানান, একটি ছোট আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ জনের দেখাশোনা করছেন তিনি। "এখানে নারী ও শিশুরা আছে। তাদের জন্য খবর ও দুধ প্রয়োজন। লাগাতার বোমা হামলার কারণে তাদের অনেকেই জিনিসপত্র ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারেন নি।"
বেসরকারী হিসেব অনুযায়ী, লেবাননে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন— যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী।
মামুন বলেন, "দক্ষিণ লেবানন থেকে প্রায় ২০,০০০-২৫,০০০ বাংলাদেশি বৈরুতে চলে গেছেন, বিশেষ করে রফিক হারিরি মসজিদ এবং হামরা সানায়া পার্কের আশেপাশের এলাকায় অবস্থান ক্রছেন তারা। তাদের বেশিরভাগই বাড়ি ফিরতে চান, কিন্তু কাগজপত্র ঠিকঠাক না থাকায় এবং বিমানবন্দর বন্ধ থাকার কারণে যেতে পারছেন না।"
সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে মামুন বলেন, "পরিস্থিতির অবনতি হলে, এই মানুষগুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন। দূতাবাসের উচিত রাষ্ট্রের খরচে বিশেষ ফ্লাইটে করে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা।"
লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (শ্রম) মো. আনোয়ার হোসেন মুঠোফোন টিবিএসকে বলেন, "এখানে কেবল লেবাননের জাতীয় এয়ারলাইনের কার্যক্রম চালু আছে, তাও সীমিত পরিসরে। অন্যকোনো দেশ এখন পর্যন্ত তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়নি।"
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে দূতাবাস এবং অভিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করবে।
অভিবাসীদের অনিরাপদে ফাঁকা জায়গায় থাকার বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমরা তাদেরকে আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছি, তবে তাদের অনেকেই শহর থেকে খুব বেশি দূরে যেতে চাইছেন না।"
বৈরুতে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিক বাবু সাহা জানান, লেবাননে অনেক বাংলাদেশি সেদেশের উৎপাদন খাতের শ্রমিক, গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশিরা এখানে মাসে ৩০০ থেকে ৭০০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করেন। লেবানন যখন অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে কিছুটা স্থিতিশীলতার দিকে আগাচ্ছিল ঠিক তখনই এই সংকট আসলো; এই শ্রমিকরাও এর ভুক্তভোগী হবেন।"
২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক লেবাননে পারি দিয়েছেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোআর তথ্য অনুসারে, গত বছর ২,৫৯৪ জন শ্রমিক ওয়ার্ক (কাজ) ভিসায় লেবাননে গিয়েছিলেন– সে তুলনায় এ বছরের প্রথম ৭ মাসেই গিয়েছেন ৪,২২৫ জন।
গত বছরের অক্টোবরে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পরপর লেবাবনে তেমন প্রভাব না পড়লেও, গত সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে।
২৩ সেপ্টেম্বর লেবাবনের দক্ষিণে বিমান হামলা চালানোর পর থেকেই সংঘাত বাড়তে থাকে। যদিও হামলার আগে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সতর্কবার্তা জারি করেছিল ইসরায়েল। আল জাজিরা জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ১,৩০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।
এর চারদিন পর ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হাসান নাসরাল্লাহ এবং দলটির সিনিয়র কমান্ডাররা।