দুর্গোৎসবের বড় আয়োজন এবার থাকছে না সেই শিকদার বাড়িতে!
বেশ কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়ে আসছিল সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। তবে এবার আর সেই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে শিকদার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সেখানে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। বাড়ির সামনের পূজা মণ্ডপটির গেট তালাবদ্ধ।
প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করার পর কাউকে না পেয়ে আয়োজক লিটন শিকদারের বাসভবনে গেলেও সেখানে দেখা হয় বাড়ির কজন নারী সদস্যদের সঙ্গে। তবে দুর্গোৎসব ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ফিরে আসার সময় রাস্তায় মন্দিরের সামনে দেখা মিলল আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি গৌরব শিকদারের সঙ্গে।
এবারের পূজা উদ্যাপনের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে আলোচিত ছিল শিকদার বাড়ির সবচাইতে বড় এই পূজা মণ্ডপটি। প্রতিবছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কারিগরের হাতে চলে দেবদেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ।
এবারের পুজার জন্যও শিকদার বাড়িতে বেশ কয়েকজন কারিগর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তৈরিও করা হয়েছিল কিছু প্রতিমা। কিন্তু প্রধান ভাস্কর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এবার হয়ত আর ধুমধাম সেই আয়োজন থাকছে না। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিকভাবে পুজার ছোটখাটো আয়োজন করা হবে।
হাকিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা নামে এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এলাকার বাইরেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পূজার সময় এক হয়ে কাজ করে। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই।
প্রতিবেশী লক্ষ্মী সাহা বলেন, শিকদার বাড়ির পূজা দেখতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই গ্রামে। তবে এবার কোনো আয়োজনই চোখে পড়ছে না।
শিকদার বাড়ি দুর্গোৎসবের আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, "ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে আমি এটা মেনে নিতে পারিনি। এজন্যই এবার পুজোর বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পূজা করা হবে বলে জানান তিনি।"
উল্লেখ্য সর্বপ্রথম ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন শুরু করে শিকদার বাড়ি। সেই থেকে প্রতিবছর বড় মহাধুমধামে পূজা হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশবিদেশের দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটেছে শিকদার বাড়িতে।