সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহারের অনুমতি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সাম্প্রতিক হামলা এবং ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এজন্য বিজিবেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও আজ (২০ জানুয়ারি) জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনার সময় বিজিবি সাউন্ড গ্রেনেড বা টিয়ারশেল ব্যবহার করতে পারেনি। এর কারণ বিজিবির কাছে এসব ছিল না। 'বিজিবির কাছে লিথাল ওয়েপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ছিলে, সেটা ব্যবহা্র করতে পারেনি। এজন্য বিজিবিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ব্যবহারের পারমিশন দিয়েছি,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুব তাড়াতাড়ি এসব কেনা হবে। কেনার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সীমান্তে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। তাই বিজিবিকে অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত করা হচ্ছে।
বৈঠকে জানানো হয়, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, অনুপ্রবেশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা মোকাবিলায় বিজিবির কার্যক্রম আরও জোরদার করf হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'ভারত অভিযোগ করছে বাংলাদেশ উসকানি দিচ্ছে। আমরা অভিযোগ করছি তারা (ভারত বা বিএসএফ) উসকানি দিচ্ছে।'
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত-সংক্রান্ত চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিদেশি বিষয়ে অগ্রগতি ধীরে ধীরে হয়। আগামী মাসে বিজিবি মহাপরিচালক ও বিএসএফের ডিজির সাথে কনফারেন্স আছে। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। কোন কোন পয়েন্টে ভারতের সাথে আলোচনা করা দরকার, তার একটি লিখিতও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাবে যে কোন চুক্তিগুলো অসম হয়েছে। ওইসব চুক্তি রিভিজিট করা দরকার।'
এছাড়া বৈঠকে র্যাব, পুলিশ ও আনসারের নতুন পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আজকে বৈঠকে আমরা নতুন পোশাক নির্ধারণ করেছি। পর্যায়ক্রমে বাহিনীগুলোর সদস্যদের এ পোশাক দেওয়া হবে।'
তিনি বলেন, 'পোশাকের সাথে মন-মানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পোশাক-লোগো সব পরিবর্তন করা হবে। অনেকের মন ভেঙে গেছে, এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না। খুব দ্রুতই তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার্কুলার দিয়ে জানানো হয়েছে যে অনুমোদন ছাড়া কোনো বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করতে পারবে না। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের অনুমোদন নেই, তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবে।
উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের ৩০ অক্টোবর তারিখে দেশে অবৈধ বিদেশি ছিলেন ৪৯ হাজার ২২৬ জন। গত ১৮ জানুয়ারি তারিখে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৪৮ জনে। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০.৫৩ লাখ টাকা এ খাতে জরিমানা করে রাজস্ব পেয়েছে সরকার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতদিন দরকার আছে, ততদিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে।