হাত হারানো শিশুর ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় কারখানা মালিককে তলব
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/20/high_court_2.jpg)
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে ডান হাত হারানো শিশু নাইম হাসানকে ৩০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট হিসাব (এফডিআর) করে দেওয়ার রায় অমান্য করায় ওই ওয়ার্কশপের মালিককে তলব করেছেন আপিল বিভাগ।
শিশুর বাবার করা আদালত অবমাননার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশে আগামী ২১ এপ্রিল তাকে তলব করে, ওইদিন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
আদালতে শিশুটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর ফারুক।
তিনি জানান, "আদালতের আদেশের যে লঙ্ঘন হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে কারখানা মালিককে আদালত অবমাননার দায়ে নোটিশ ইস্যু করে কিশোরগঞ্জের এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে মালিককে ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগে হাজির করা হয়।"
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ১৫ লাখ টাকা এপ্রিলে এবং বাকি অর্থ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদী এফডিআর করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আর শিশুটির এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ওয়ার্কশপের মালিককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আবেদন গত ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দেন আদালত। এরপরও রায় বাস্তবায়ন না করায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে শিশুর বাবা আদালত অবমাননার মামলা করেন।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর 'ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি' শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই রুলের ওপর ৫ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি রায় দেন আদালত।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, নাইম হাসানের বয়স ১০ বছর। পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশা জুতা ব্যবসা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে আনোয়ার হোসেন কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাইমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। এ ওয়ার্কশপের কাজ করতে গিয়েই মাসখানেক আগে তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি।