৪৩ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হলো জন লেননের অপ্রকাশিত গান
ষাটের দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের সদস্য জন লেননের সাক্ষাৎকার এবং একটি অপ্রকাশিত গানের ক্যাসেট ৪৩ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে আয়োজিত এক নিলামে বিক্রি হয় এটি।
১৯৭০ সালে রেকর্ড করা ৩৩ মিনিটের অডিও ট্র্যাকটি ডেনমার্কের ৪ স্কুলছাত্রের তৈরি। তাদের স্কুল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে তৈরি হয়েছিল এটি। সে অডিও ট্র্যাকে লেননের সাথে তার স্ত্রী ইয়োকো ওনোর সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়।
স্কুল সংবাদপত্রের একটি মূল কপি এবং তাদের তোলা ২৩টি ছবিসহ ক্যাসেটটি কোপেনহেগেনে ব্রুন রাসমুসেন অকশন হাউসের নিলামে তোলা হয়।
তাদের মতে, সাক্ষাৎকারটি যখন নেওয়া হয় সেই সময়ে, লেনন এবং ইয়োকো ডেনমার্কের জুটল্যান্ডে ছিলেন। এ দম্পতির জনপ্রিয়তার কারণে দেশটিতে তাদের উপস্থিতির কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ৭০ এর দশকে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তারা। ফলে, তাদের সাক্ষাৎকার নিতে ছুটে যায় দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম।
তাদের মাঝে ছিলেন স্কুল পড়ুয়া ৪ জন ছাত্রও। তৎকালীন ১৬ বছর বয়সী এই স্কুলছাত্ররা যখন সাক্ষাৎকার নিতে পৌঁছান, তখন আর কেউই সেখানে উপস্থিত ছিল না। অডিওটি রেকর্ড করা কার্স্টেন হোয়েজেন (৬৮) বিবিসিকে বলেন, "যখন আমরা পৌঁছলাম তখন সবাই চলে যাচ্ছিল ... আমরা লিভিং রুমে গিয়ে দেখলাম লেনন এবং ইয়োকো সোফায় বসে আছে। আমরা তাদের সাথে বসলাম এবং বেশ অন্তরঙ্গভাবেই কথাবার্তা চালিয়ে গেলাম"।
লেনন প্রথমে তাদেরকে কোনো রেডিও স্টেশন থেকে আসা সাংবাদিক ভেবেছিলেন বলেও জানান তিনি।
তাদের সেই সাক্ষাৎকারে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ এবং বিশ্বে শান্তিরক্ষার বিষয়ে লেননকে জিজ্ঞেস করেন তারা। লেননকে রেকর্ডিংয়ে বলতে শোনা যায়, "যদি তোমরা নিজে থেকে কোনোকিছু চিন্তা করতে না পারো, তাহলে আমরা যা করছি তা অনুকরণ করো"।
এছাড়া লেননকে বিটলস সম্পর্কে কথা বলতে, এমনকি তার চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে আলোচনা করতেও শোনা যায়।
তাদের সে সাক্ষাৎকারটি বেশ 'স্বস্তিকর' ছিল বলে উল্লেখ করেন কার্স্টেন। সেখানে লেনন এবং ইয়োকোর পাশাপাশি ইয়োকোর প্রাক্তন স্বামী কক্স, তার স্ত্রী মেলিন্ডা, এবং ইয়োকো ও কক্সের সন্তান কিয়োকো উপস্থিত ছিল।
সাক্ষাৎকারে লেননকে একটি গান গাইতে বলা হলে তিনি 'গিভ পিস আ চান্স' গানটি গান। এরপরই তিনি সেই অপ্রকাশিত গান 'রেডিও পিস' এর অংশবিশেষ গেয়ে শোনান। আমস্টারডামে লেননের নিজস্ব এক রেডিও স্টেশনের থিম টিউন হওয়ার কথা ছিল সে গানটির।
কার্স্টেন বলেন, "রেডিও স্টেশনটি কখনই খোলা হয়নি এবং গানটি কখনই প্রকাশিত হয়নি। আমাদের জানামতে, এই গানটি কেবল আমাদের টেপেই রয়েছে।"
সাক্ষাৎকারের কয়েক দশক পর কার্স্টেন সেটি একটি ব্যাঙ্ক ভল্টে সংরক্ষণ করে রাখেন। তিনি এবং তার বন্ধুদের মধ্যে ক্যাসেটের মূল্য ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এটি অবশেষে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
রেকর্ডিংটির কোনো ডিজিটাল কপি নেই এবং এটির বর্তমান মালিকরা এর উপর একচেটিয়া অধিকার বজায় রেখেছে। ফলে, এ অপ্রকাশিত গান বাজানো থেকে বিরত রয়েছে মিডিয়া আউটলেটগুলো। তবে, কোনো জাদুঘর এটি কিনে নিলে ভবিষ্যতে তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অকশন হাউসের পরিচালক আলেক্সা ব্রুন রাসমুসেন বলেন, "এ ধরণের রেকর্ডিং সত্যিই খুব বিরল। এইরকম অন্য কোনো রেকর্ডিং আছে কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই"।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান