আইইএলটিএস পরে হবে, আপাতত অভিনয়ে থাকতে চাই: ঐশী
মেয়েটির জন্ম বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙা নামক এক গ্রামে। স্বপ্ন ছিল আইইএলটিএস দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। সেই পরিকল্পনা থেকেই ঢাকায় আসা। কিন্তু তার পরের গল্পটা একেবারেই আলাদা। দেশের মধ্যে 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' চ্যাম্পিয়ন হয়ে অংশ নিয়েছিলেন মূল প্রতিযোগিতা 'মিস ওয়াল্ড-২০১৮' তে। সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও সারা বিশ্বের ১১৮ জনের প্রতিযোগীর মধ্যে সেরা ৩০- এ জায়গা করে নেন বরিশালের মাটিভাঙার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।
খ্যাতি পাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রূপালী পর্দায় হাজির হয়েছেন ঐশী। গত মাসে মুক্তি পেয়েছে ঐশী অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র, 'মিশন এক্সট্রিম' এবং 'রাত জাগা ফুল'।
নবাগতা অভিনেত্রীর দুটি ছবিই দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। চলচ্চিত্র ও অভিনয় সংক্রান্ত নানা বিষয়ে ঐশীর সাথে আলাপচারিতায় মেতেছিল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
প্রথমেই কথা বললেন মুক্তিপ্রাপ্ত দুই ছবি নিয়ে। ঐশীর ভাষ্যে, 'মিশন এক্সট্রিম' সময়োপযোগী একটি ছবি। এই সময়ের দর্শকের ভালো লাগার কথা মাথায় রেখেই এর কাহিনি লেখা এবং নির্মাণে নতুনত্ব তুলে ধরার চেষ্টা ছিল। একই সঙ্গে আমরা যারা শিল্পী ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, সবারই চেষ্টা ছিল নিজেদের সেরা কাজ তুলে ধরার। আবার রাত জাগা ফুল মীর সাব্বির ভাইয়ের পরিচালিত প্রথম সিনেমা। উনি খুবই যত্ন নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছেন। এটার গল্প ও চরিত্রের মাধ্যমে দর্শক বিউটিফুল বাংলাদেশ দেখতে পারবেন। ছবিটির গানগুলিও খুব সুন্দর।"
এই মুহূর্তে ঐশীর হাতে আছে আরও কয়েকটি ছবি। আদম, নুর নামের ছবিগুলোও আসবে এই বছরই। সেই সাথে আলোচনা চলছে আরও কিছু ছবির।
তবে চলচ্চিত্র বা অভিনয়ের পরিকল্পনা শুরুতেই ছিল না ঐশীর। এইচএসএসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন নাজিরপুরে। পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়েছেন। সমাজকর্মী বাবা ও স্কুল শিক্ষক মা সবসময়ই চাইতেন সাংস্কৃতিক আবহে বড় হোক মেয়ে।
সেই স্মৃতি রোমন্থন করে ঐশী বলেন, "আমরা দুই বোন এবং দুজনকেই বাবা-মা সেভাবে বড় করেছেন। সাংস্কৃতিক চর্চা করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। আর মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-এ যুক্ত হওয়া হুট করেই। যতদূর জানি ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশে এর ফ্র্যাঞ্চাইজি আনা হয়; তখনই ইচ্ছাটা জন্ম নেয়। মনে হতো একদিন আমিও যুক্ত হবো। সেটা যে ২০১৮ সালেই হবে তা বুঝিনি।"
তিনি আরও যোগ করেন, "২০১৮ সালে আমি অনলাইনে রেজিস্টেশন করি। তারপর অডিশন, গ্রুমিংসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চীনে ফাইনাল প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। এর পরের গল্প তো সবার জানা।"
প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে বেশ কিছু নামী দামী ব্রান্ডের মডেল হয়েছেন ঐশী। ২০১৯ সালে শুরু করেন প্রথম চলচ্চিত্র মিশন এক্সট্রিম-এর শুটিং। দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে শুটিং করেন তারা।
ঐশীর কাছ থেকেই জানা গেলো, একসঙ্গে মিশন এক্সট্রিমের দুই পর্বের শুটিং শেষ হয়েছে এবং মুক্তি পেয়েছে একটি। চলতি বছরের ঈদেই মুক্তি পাবে মিশন এক্সট্রিম ২।
আগামী দিনের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে ঐশী বলেন, "আমি এখনও পড়াশোনা করছি। একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সে পড়ছি। এটা শেষ করব, পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়টা চালিয়ে যেতে চাই। ভালো ভালো ছবিতে অভিনয় করতে চাই।"
"সব মানুষের যেমন স্বপ্ন থাকে, আমারও তেমন ছিল। ছোটবেলায় যখন সিনেমা দেখতাম তখন আমারও মনে হতো, একদিন এভাবে অভিনয় করবো। সেই পথটা আরও সহজ হয়েছে বাবা-মার কারণেই। তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এতদূর এসেছি আমি। যেদিন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশ নিতে যাই সেদিন আমি বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগেও নিয়েছি। তারা কোনো কিছুতে আমাকে না করেননি", বলেন এই তারকা।
তবে এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি ছিলো কনফিডেন্স। ঐশী বলেন, "আমি গ্রাম থেকে এসেছি, কিছু পারতাম না। নিজে মেকাপ করতে জানতাম না। সাজতে পারতাম না। হেয়ার স্টাইল সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। অভিনয়-নাচ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার যেটা ছিল সেটা হলো কনফিডেন্স। আমার সবসময় মনে হয়েছে আমাকে দেখিয়ে দিলে পারব। এই কনফিডেন্স থেকেই আমার এতদূর আসা। সামনেও এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।"
তাহলে আইইএলটিএস দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কি হবে?
ঐশী হেসে উত্তর দিলেন, 'সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত অভিনয় নিয়ে থাকতে চাই।'