সর্বাত্মক লকডাউন ছাড়া সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করার জন্য গতকাল সোমবার তৃতীয়বারের মতো দেশজুড়ে লকডাউনে দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউনের প্রথম দিন মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে জনস্রোত দেখা গেছে। বহু মানুষের মুখে মাস্ক নেই, নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দুইভাবে রোধ করা যায়। একটি উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং দ্বিতীয় উপায় হলো টিকা নেওয়া। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও আইসিইউ বেড বাড়ানো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ভাইরাসটির সংক্রমণ এত দ্রুত হারে বাড়ছে যে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজার, পরিবহন সব চালু রেখে দেওয়া চলমান লকডাউনটি কোনো কাজেই আসছে না। সংক্রমণ বাড়ছে, কারণ লোকেজন গাদাগাদি করে একে অপরের সংস্পর্শে আসছে। বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে এটাই প্রথম কারণ।
কারিগরি কমিটির বিশ্বাস, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষকে দুই সপ্তাহ ঘরের ভেতর রাখা। বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহন দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখতে হবে। এই কাজটি করতে পারলে সংক্রমণের গতি কমানোতে বড় ধরনের সাফল্য দেখতে পাব। সংক্রমণ বন্ধ না হলেও, সংক্রমণের হার অনেক কমে যাবে। এর বিকল্প কোনো নেই—এবং এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।
কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ায় আমরা এখন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছি। ধরনটির বিস্তার এখনই থামাতে না পারলে পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে।
মুসলিমদের দুই বৃহত্তম উৎসবের একটি, ঈদ-উল-আযহা, পালিত হবে সপ্তাহ দুয়েক পরেই। লোকজন যদি আগের বছরগুলোর মতোই এবারও ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যায়—এবং কোরবানির পশু কেনার জন্য যদি কোরবানির হাটেও যায়—তাহলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে।
গত দুটি ঈদের সময় আমরা সংক্রমণের এ ধরনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করেছি। কোরবানির হাটগুলো বন্ধ রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু আমরা জানি, তা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমাদের অনলাইনে পশু কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প কয়েকজন মানুষ যদি হাটে যায়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলে আশা করা যায়।
কিছু মানুষ আছেন দিনমজুরের কাজ করেন। তাদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে একটি খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং লকডাউনের সময় দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। কর্মসূচিটি সফল হয়েছে।
সরকারের উচিত আগামী দুই সপ্তাহের জন্য এরকম আরও কিছু কর্মসূচি নেওয়া। সরকারের পাশাপাশি ধনী ও এনজিওগুলোরও উচিত দরিদ্রদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা। এমনকি কারও কাছ থেকে সহায়তা না পেলেও, জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে সুবিধাবঞ্চিতদেরকে।
বিদ্যমান হাসপাতালগুলো আরও কিছু কোভিডাক্রান্ত রোগীর জায়গা দিতে পারবে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, হাসপাতালগুলোতে অচিরেই শয্যা সংকট দেখা দেবে। এ কথাও সত্য যে, হাসপাতালের শয্যা, আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এ কারণে, সংক্রমণ রোধ করার ওপরই আমাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ করার খরচ অনেক কম।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে তথ্য প্রচার করে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সরকার-আরোপিত লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে যারা বিধি লঙ্ঘন করবে, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
- লেখক: চেয়ারম্যান, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি