ব্যাক টু ট্রেঞ্চেস: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকৌশল কি আধুনিক না মান্ধাতার আমলের?
মহাকাশ থেকে উপগ্রহের নজরদারি, দূর-নিয়ন্ত্রিত ড্রোন, নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারার মতো বোমা, গোলা, হাইপারসনিক মিসাইল, হাতে বহনযোগ্য জ্যামার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে আরো অগণিত প্রযুক্তি দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এতে যুদ্ধ কৌশলে আসছে ব্যাপক রুপান্তর। শত্রুর ওপর সর্বদা নজরদারি করতে পারার সাথে সাথে মারাত্মক সব অস্ত্র দিয়ে তার ওপর আঘাত হানা যাচ্ছে। এতে ট্যাংকের মতো প্রথাগত প্লাটফর্ম হয়ে পড়ছে সেকেলে ও অকার্যকর; ফলে এমন অস্ত্র দিয়ে প্রচলিত কৌশলে বড় ধরনের আক্রমণ অভিযান হয়ে উঠেছে দুঃসাধ্য।
সামরিক বিশ্লেষক ডেভিড জনসনের মতে, 'আমার মনে হয়, সামরিক ইতিহাসের এক কেন্দ্রীয় মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে। প্রতিরক্ষার নতুন ধারার অভ্যুদয়– যুদ্ধের চূড়ান্ত রূপ হয়ে উঠছে।'
ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্যিক প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে সংঘাতের কাজে লাগানো 'ইউক্রেন রণাঙ্গনে এক প্রকৃত সামরিক বিপ্লব' তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন সমরকৌশলবিদ টি. এক্স. হেমিস।
গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী ও পেন্টাগনের উপদেষ্টা এরিখ স্মিত বলেছেন, 'ইউক্রেন প্রমাণ করেছে ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে ড্রোনের মাধ্যমে, এবং তা হবে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক।'
তাহলে ইউক্রেন কি শুধুই নতুন প্রযুক্তি ও অস্ত্রের পরীক্ষাগার? যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যে কিন্তু তা ফুটে ওঠে না। বরং, যুদ্ধক্ষেত্রের ছবিতে আমরা দেখছি কর্দমাক্ত দীর্ঘ পরিখার সারি – যার সাথে ভবিষ্যতের যুদ্ধের ময়দান নয়, বরং প্রথম মহাযুদ্ধের অতি-চেনা দৃশ্যেরই মিল বেশি।
প্রথম মহাযুদ্ধের একটি রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গন ছিল ফ্ল্যান্ডার্স। উভয়পক্ষের বিপুল গোলাবর্ষণ মাটির বুকে বিশাল বিশাল গর্ত তৈরি করেছিল। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রেও আমরা দেখছি, গোলায় ক্ষতবিক্ষত ভূমি ও চারপাশের সবকিছুর ধ্বংসস্তূপ। প্রচলিত গোলন্দাজ ইউনিটের লাখ লাখ রাউন্ড শেলের আঘাতে যা সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনে এত বিপুল পরিমাণ গোলা ব্যবহার হয়েছে যে, এমনকি রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর উৎপাদন সক্ষমতায় টান পড়েছে।
এই যুদ্ধে বিপরীত সব দৃশ্য চোখে পড়ে। একদিকে আমরা দেখছি, কোড লেখকরা সামরিক সফটওয়্যার তৈরি করছেন– তারই সাথে দেখছি, সমরাস্ত্র কারখানায় লাখো রাউন্ড প্রচলিত গোলা উৎপাদনের তোড়জোড়।
তাই শুধু আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এ যুদ্ধকে বিচার করার সুযোগ নেই। বরং, সঠিক প্রশ্নটি হলো– কতখানি ব্যতিক্রম এই সংঘাত? কীভাবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি - মান্ধাতার হয়ে পড়া অস্ত্র-সরঞ্জামের সাথে একইসাথে যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে?
এর একটি উত্তর হলো- ইউক্রেনে যেসব উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে অনেকক্ষেত্রে সেগুলো নতুন হলেও – তারা যে ফল অর্জন করে- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা কিন্তু নতুন নয়। তাছাড়া, সেনাবাহিনী নিত্যনতুন হুমকি মোকাবিলার সক্ষমতা গড়ে, সেদিক থেকেও উভয়পক্ষের পাল্টা-ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে– নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জামের প্রকৃত ধ্বংস-ক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ, যতোটা হাই-টেক কল্পনা করা হচ্ছে, তার চেয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে বহু দিক বিবেচনায়- অতীতের সংঘাতগুলোরই মিল বেশি পাওয়া যায়। যেমন ইউক্রেনে বিস্তৃত মাইন ফিল্ডগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এর আগেও বিভিন্ন সময় সামরিক কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার আভাস দেওয়া হয়েছে, যদিও তা কখনোই রাতারাতি বাস্তবে পরিণত হয়নি। এই বিষয়টি সামরিক পরিকল্পনাকারীদের মাথায় রাখা উচিত। যুদ্ধের মাঠপর্যায়ে যা হচ্ছে – সেদিকটি ঘনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করা উচিত নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকদের। এই অধ্যয়নের ফলাফল, সামরিক কৌশলে ব্যাপক রূপান্তর আনবে– এমন প্রত্যাশাও তাদের থাকা উচিত নয়। বরং, সামরিক ডকট্রিনে নাটকীয় পরিবর্তন আনার বদলে, অতীতের বিভিন্ন সময়ের মতো- পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত করাই হবে সঠিক রাস্তা।
বিপুল ক্ষয়ক্ষতি কী বার্তা দেয়?
যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানিও তেমনই। প্রতিপক্ষের সামষ্টিক ক্ষতি নতুন অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাইয়ের একটি পন্থা হতে পারে।
ইউক্রেনে সমর-বিজ্ঞানের বিপ্লব হচ্ছে বলে যারা মনে করেন, তাদের মতে, ড্রোনের মতো নজরদারির নতুন সরঞ্জাম এবং তার সাথে প্রিসিশান বা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারার মতো ক্ষেপনাস্ত্র বা লয়টারিং মিউনিশনের ব্যবহার– আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রকে বৈপ্লবিকভাবে আরও প্রাণঘাতী স্থান করে তুলেছে।
অথচ রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ে এ ধরনের যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তাদের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি – অতীতের কয়েকটি যুদ্ধের চেয়ে নজিরবিহীন এমন বলা যাবে না। বরং কিছুক্ষেত্রে তা কমই হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এই যুদ্ধে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংসের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা যায়। বিপ্লবপন্থীরা মনে করেন, বিপুল পরিমাণ ট্যাংক ধ্বংস হওয়ার ঘটনা – আধুনিক ট্যাংক-বিধবংসী অস্ত্রের মুখে তাদের বাতিল হয়ে যাওয়ারই প্রমাণ। নিঃসন্দেহে এ যুদ্ধে অগণিত সাঁজোয়া ইউনিট হারিয়েছে উভয়পক্ষ।
অনুমান করা হয়, রাশিয়া ও ইউক্রেন যে পরিমাণ ট্যাংক নিয়ে এ যুদ্ধ শুরু করেছিল- তার অর্ধেকের বেশি তারা হারিয়েছে। যেমন আগ্রাসনকালে রুশ সেনাবাহিনীর অ্যাকটিভ সার্ভিসে যুক্ত ছিল প্রায় ৩,৪০০ ট্যাঙ্ক। কিন্তু, যুদ্ধের প্রথম ৩৫০ দিনে তারা প্রায় এক হাজার ৬৮৮টি ট্যাঙ্ক হারায় (চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ওরিক্স)। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য তিন হাজার ২৫৩টি রাশিয়ান ট্যাংক ধ্বংস বা কব্জা করার দাবি করেছে। এসব তথ্য অনুসারে, রুশ ট্যাংকের ক্ষতির হার ৫০ থেকে ৯৬ শতাংশের মতো।
এদিকে যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেন প্রায় ৯০০ ট্যাংক মোতায়েন করে। যুদ্ধের প্রথম ৩৫০ দিনে তারা ৪৫৯টি ট্যাংক হারায় বলে নিশ্চিত করেছে ওরিক্স। সে অনুযায়ী, তাদের ট্যাংক বহরের ক্ষতির হার অন্তত ৫১ শতাংশ। উভয়দেশই তাদের হারানো ট্যাংকের জায়গায় নতুন ট্যাংক এনেছে। বিশেষত, রাশিয়া পুরোনো ট্যাংক সংস্কার করে, সেগুলো সার্ভিসে যুক্ত করেছে। তাছাড়া, সম্পূর্ণ ধ্বংস না হলে, ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকও অনেক সময় মেরামত করে আবার রণাঙ্গনে পাঠানো হয়। একারণে, ব্যাপক ক্ষতির পরও যুদ্ধের ময়দানে সাঁজোয়া যানের ঘাটতি ততোটা দেখা দেয়নি। তবে যুদ্ধে অনেক ট্যাংক ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি সর্বাঙ্গে সত্য।
একটি বৃহৎ যুদ্ধের বিচারে সাঁজোয়া যানের এত ভারী ক্ষয়ক্ষতি অস্বাভাবিক নয়। প্রথম মহাযুদ্ধের অ্যামিয়েন্সের লড়াইয়ে মাত্র চারদিনে ৯৮ শতাংশ ট্যাংক হারায় যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪৩ সালে জার্মানির ট্যাংক ধ্বংসের হার ছিল ১১৩ শতাংশ। ১৯৪৪ সালে জার্মানদের এই হার দাঁড়ায় ১২২ শতাংশে। ১৯৪৩ ও ৪৪ সালে যথাক্রমে ১০৯ ও ৮০ শতাংশ হারে ট্যাংক হারায় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
১৯৪৪ সালের জুলাইয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনের নরম্যান্ডির লড়াইয়ে মাত্র তিনদিনেই ইউরোপে মোতায়েন করা তাদের ৩০ শতাংশ সাঁজোয়া যান হারায় যুক্তরাজ্য। এরপরও কিন্তু প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ট্যাংককে কেউ অচল বা বাতিল বলে দাবি করেননি।
একইভাবে ইউক্রেনের আকাশে বিমান ধ্বংসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনার দাবি রাখে। অনেকেই বলছেন, আধুনিক বিমান-বিধ্বংসী মিসাইলের সামনে প্রচলিত মনুষ্যচালিত বিমান এতটাই ঝুঁকির মুখে যে, ইতিহাসের আস্তাকুড়েতে নিক্ষিপ্ত হবে তারা। কারণ ট্যাংকের মতোই ইউক্রেনে ভারী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিমান শক্তির। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী অন্তত ৬৮টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে, যা তাদের যুদ্ধপূর্ব বহরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে, যুদ্ধের আগে রাশিয়ার ছিল দুই হাজার ২০৪টি সামরিক বিমান। এরমধ্যে ৮০টির বেশি ইউক্রেন যুদ্ধে হারায় তারা। তারপরও কিন্তু এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি নজিরবিহীন নয়।
যেমন, ১৯১৭ সালে একজন ব্রিটিশ পাইলটের গড় আয়ুস্কাল ছিল মাত্র ১১ দিন। অর্থাৎ, তারা গড়ে এতদিন আকাশযুদ্ধে টিকতে পারতো। ১৯৪৩ সালে জার্মান বিমানবাহিনী বা লুফৎওয়াফা যুদ্ধ শুরুর সময়ের তুলনায় ২৫১ শতাংশ বিমান হারায়। ১৯৪৪ সালে এই ক্ষতির হার ছিল আরও উচ্চ। যেমন ওই বছরের জানুয়ারিতে লুফৎওয়াফার যে পরিমাণ বিমান ছিল– তার অন্তত ১৪৬ শতাংশ হারায় পরের ৬ মাসে।
সে তুলনায়, ১৯৪৩ সনে ৭৭ শতাংশ এবং ১৯৪৪ সনে ৬৬ শতাংশ ছিল সোভিয়েত বিমানবাহিনীর ক্ষতির হার। তারপরেও কিন্তু বিমান অকার্যকর একথা ১৯১৭ বা ১৯৪৩ সনে কেউ বলেননি।
গোলন্দাজ বাহিনীর দ্বারা হওয়া ক্ষয়ক্ষতিরও তুলনা করা যায়। বৃহৎ যুদ্ধে কামানের গোলাই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটায়। অনেক যুদ্ধ-পর্যবেক্ষক মনে করেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ান আর্টিলারির হামলায়। ড্রোন এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সেনারা প্রথমে ড্রোন উড়িয়ে শত্রুর লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করছে, এরপর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেই তথ্য সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছে গোলন্দাজ ইউনিটকে। ফলে নির্ভুলভাবে ওই লক্ষ্যবস্তুতে গোলা নিক্ষেপ সম্ভব হচ্ছে।
ইউক্রেনে ব্যবহৃত সব কামান অবশ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ভুল আঘাত হানার উপযুক্ত নয়। অধিকাংশই পুরোনো প্রযুক্তির। তবে ড্রোনের দেওয়া দিকনির্দেশনা অনুসারে এসব কামান দিয়েও অনায়সে লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব হচ্ছে।
যুদ্ধের প্রথম বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮২০ জন রুশ সেনা হতাহত হয়। এসময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী সাড়ে ১৬ লাখ গোলা ছুঁড়েছে বলে হিসাব করেছে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তক সংস্থা- ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট। যদি ধরে নেওয়া হয়, রাশিয়ার ৮৫ শতাংশ সেনা ইউক্রেনীয় গোলায় হতাহত হয়েছে– তাহলে সেই হিসাবে, প্রতি ১০০ রাউন্ড গোলায় গড় হতাহতের সংখ্যা ছিল ৮ জন।
এই হার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হারকে ছাড়িয়ে গেছে, তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়। ঐতিহাসিক ট্রেভর ডুপের প্রাক্কলনমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্তত ৫০ শতাংশ হতাহতের কারণ ছিল আর্টিলারি। সেই হিসাবে মোট হতাহতের হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি ১০০ গোলায় অন্তত ৩ জন হতাহত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে এই হার ছিল প্রতি ১০০ গোলায় ২ জন।
তাহলে দেখা যায়, প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকেই গোলার আঘাতে হতাহতের হার বাড়ছে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধে গোলন্দাজ ইউনিট যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে সেকথা বলার জো নেই। বরং একে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতারই অনুসরণ বলা যেতে পারে।
অচলাবস্থা ও অগ্রগতি
শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি করা যুদ্ধেরই একটি অংশ। কিন্তু, সেনাদলের আরেক লক্ষ্য থাকে ভূমি দখল ও তার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা। বিপ্লবপন্থীদের অনেকে মনে করেন, নতুন যুদ্ধ সরঞ্জাম সেনাদলের অগ্রসর হওয়া বা পিছুহটার ধরন-ধারণ বদলে দিয়েছে। নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র সেনা গতিবিধিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে এগোতে আরও বেশি রক্তক্ষয় করতে হচ্ছে আক্রমণকারী পক্ষকে।
যেমন বাখমুতের লড়াইয়ে জিততে প্রচণ্ড মূল্য দিয়েছে রাশিয়া। এ লড়াইয়ে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ রুশ সেনা হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ২০২২ সালের বসন্তকালীন অভিযানেও রাশিয়া সামান্য ভূমি দখল করতে পেরেছিল। রুশ বাহিনীর হাতে প্রায় তিন মাস অবরুদ্ধ থাকার পর পতন হয় মারিওপোলের। ২০২২ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের খেরসন অভিযান কয়েক সপ্তাহ ধরে চলার পরেও, সেভাবে অগ্রগতি অর্জন করেনি। বরং, ইউক্রেনের অনেক সেনাই এই অভিযানে প্রাণ দেয়।
কিন্তু, অন্য লড়াইগুলো কিন্তু বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়েছে। যেমন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন আগ্রাসন চালায়, তখন রুশ বাহিনীতে সমন্বয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট। তারপরও তারা প্রায় ৪২ হাজার বর্গমাইল এলাকা দখল করে- এক মাসেরও কম সময়ে। আবার মার্চ ও এপ্রিলে ইউক্রেনের পাল্টা অভিযানে দখলমুক্ত হয় ১৯ হাজার বর্গমাইল এলাকা। আগস্টের খেরসন অভিযানে প্রায় ৪৭০ বর্গমাইল ভূমি উদ্ধার করে ইউক্রেন। আর সেপ্টেম্বরের খারকিভ অভিযানে ২,৩০০ বর্গমাইল পুনর্দখল করে। তাই এ যুদ্ধকে কখনোবা সফল আক্রমণ এবং কখনোবা সফল প্রতিরোধের মিশ্র অবস্থার আলোকে দেখা উচিত।
একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, শত্রুর প্রতিরোধ ভেদ এবং কখনোবা অচলাবস্থা – উভয় পরিস্থিতিই নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জাম থাকার পরও ঘটেছে। এবং ট্যাংকের মতো ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র ব্যবস্থা এসব অভিযানের সাফল্য বা ব্যর্থতায় বড় ভূমিকা রেখেছে। এত বড় তারতম্যকে তাই এক কথায় নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সমর-বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা বলাও উচিত নয়।