বিরোধী অবস্থানে থেকেও ইইউ-ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো কেন রাশিয়ার জ্বালানি ছাড়তে পারছে না?
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা অব্যাহত রেখেছে অনেক পশ্চিমা দেশ। অপরদিকে, রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহও করছে তারা!
পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী এই আচরণকে সহজ ভাষায় বলা যায়, রাশিয়ান তেল ত্যাগ করা বিশ্বের দেশগুলোর জন্য বেশ কঠিন। পেট্রোল মেজর বিপি'স স্ট্যাটিস্টিকাল রিভিউ অব ওয়ার্ল্ড এনার্জি-২০২১ অনুসারে, রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস (১৭ শতাংশ) এবং তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী (১২ শতাংশ) দেশ।
বিশ্বে বর্তমানে যেসব পরাশক্তি রয়েছে, তার বেশিরভাগই রাশিয়ান জ্বালানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল। জার্মানির মতো দেশগুলো তাদের শহর এবং শিল্পকে চলমান রাখার জন্য রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভর করে। এ কারণে জনসমক্ষে যতোই নিষেধাজ্ঞার কথা বলুক না কেন, মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে তারা ঠিকই রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা অব্যাহত রেখেছে।
এই একই কারণে, রাশিয়ান জ্বালানি আমদানির জন্য ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থপ্রদানের প্রধান চ্যানেলগুলোকে সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালে রপ্তানির পরিমাণ সামান্য কমলেও রাশিয়া এখনো বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারকদের মধ্যে রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত রাশিয়া থেকে জার্মানি ১৯.৭২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি আমদানি করে। এই একই সময়ে নেদারল্যান্ডস, ইতালি, পোল্যান্ড যথাক্রমে ১১.৯৭, ৯.৩৩, ৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি আমদানি করে।
কয়েক বছর ধরে, রাশিয়া বেশ কয়েকটি দেশে তেল ও গ্যাসের প্রধান সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোর আমদানি করা তেলের অর্ধেকেরও বেশি আসে রাশিয়া থেকে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ার দৈনিক উৎপাদিত তেলের পরিমাণ ছিল ১১.৩ মিলিয়ন ব্যারেল, যার মধ্যে ক্রুড অয়েল ছিল ১০ মিলিয়ন ব্যারেল, কনডেনসেট ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল।
একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক তেল উৎপাদন ছিল ১৭.৬ মিলিয়ন ব্যারেল এবং সৌদি আরবের দৈনিক তেল উৎপাদন ছিল ১২ মিলিয়ন ব্যারেল। যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি উৎপাদনের দিক থেকে রাশিয়াকে ছাড়িয়ে গেলেও যথারীতি বিশ্ববাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারকের জায়গা ধরে রাখে রাশিয়া।
ব্লুমবার্গ এর সংকলিত ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং ডেটা অনুসারে, পশ্চিমা শোধনাগারগুলো জুন মাসে রাশিয়া থেকে দৈনিক ১.৮৪ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।
এনার্জি সাইট অয়েলপ্রাইস ডটকম থেকে জানা গেছে- ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং ফার্ম পেট্রো-লজিস্টিকসের তথ্য অনুসারে, মার্চ মাসে রাশিয়া থেকে সমুদ্রজাত অপরিশোধিত তেলের রপ্তানি ফেব্রুয়ারির তুলনায় দৈনিক ৩ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে, ১৭ জুন পর্যন্ত রপ্তানি শুল্ক থেকে মস্কোর রাজস্ব আয় ৬ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্ভবত আমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা বড় ধরনের প্রভাব ছাড়াই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে পারবে।
অন্যদিকে, ইউরোপিয় দেশগুলোতে রপ্তানি অব্যাহত রেখেও ভারত এবং চীনের কাছে তেল বিক্রিতে প্রচুর ছাড় দিচ্ছে রাশিয়া। অবশ্য ভারত আগেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে কম দামে যেকোনো দেশ থেকেই তেল কিনতে আগ্রহী তারা।
রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করে আমেরিকাও এবার তেলের দামে ছাড় দিয়ে ভারত ও চীনকে নিজেদের দলে নিয়ে আসে কিনা তা-ই এখন দেখার পালা।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া