বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রধান অজয় বাঙ্গা
স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে তাদের ঋণ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রাক্তন মাস্টারকার্ড প্রধান অজয় বাঙ্গা। এই পদের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনোনীত মি. বাঙ্গা প্রথম ভারতীয় আমেরিকান হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রধান হয়েছেন । খবর বিবিসির।
জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ডেভিড ম্যালপাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি। মি. বাঙ্গা তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু করবেন ২ জুন থেকে।
বর্তমানে মার্কিন নাগরিক মি. বাঙ্গা তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন জন্মভূমি ভারতে, যেখানে তার বাবা সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। মাস্টারকার্ডে যোগদানের আগে তিনি নেসলে এবং সিটি গ্রুপে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি সময় কাটিয়েছেন এক দশকেরও বেশি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে "একজন রূপান্তরকামী নেতা" বলে অভিহিত করেছেন, যার বিশ্বব্যাংক পরিচালনার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, "জলবায়ু পরিবর্তনসহ দারিদ্র্য নিরসনের মূল লক্ষ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিকশিত এবং প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে তিনি [অজয় বাঙ্গা] প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচালনা করতে সাহায্য করবেন।"
মি. বাঙ্গাকে বিশ্বব্যাংক প্রধান হিসেবে ঘোষণা করার সময় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকরা বিবৃতিতে জানান যে, "উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সমস্ত কিছু" তার সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।
বিশ্বব্যাংকের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি নির্বাচন করার দায়িত্বে থাকে, যারা প্রতি বছর অন্যান্য দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলো অতীতে মার্কিনদের এই মনোনয়নের বিষয়ে অভিযোগ করলেও মি. বাঙ্গাই ছিলেন প্রেসিডেন্ট পদে একমাত্র প্রার্থী।
ভোট সম্পর্কে একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, "অজয় নির্বাহী পরিচালকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিশ্বব্যাংকের সদস্য দেশগুলো থেকেও শক্তিশালী সমর্থন পেয়ে তার ম্যান্ডেট শুরু করবেন।"
উন্নয়ন সংস্থাটির এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মি. বাঙ্গার এই নিয়োগ হতে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য ব্যাংকটিকে তার ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হলেও সেটি কম বলে দাবি করেছে তারা। তাদের দাবি অনুযায়ী, ঋণের অঙ্ক হওয়া উচিৎ ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশ উদ্বিগ্ন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর বেশি গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য-নির্মূলীকরণ থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশগুলো মহামারী, খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং ঋণের অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোনো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মি. বাঙ্গাকে এই বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।
গত মার্চ মাসে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, "আমাদের সকলের যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য আছে, তা পূরণের জন্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।"