যুক্তরাষ্ট্রে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, সন্তানও আছে- চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বরখাস্তের কারণ!
নিয়োগের মাত্র সাত মাসের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হন কিন গ্যাং। সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
তবে সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন সেখানে এক নারীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং তারা একটি সন্তানও জন্ম দেন। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে কিনকে পদচ্যুত করা হয়।
আগস্ট মাসে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানো হয়, কিন গ্যাং-এর 'লাইফস্টাইল ইস্যু' নিয়ে তদন্ত করছে কমিউনিস্ট পার্টি। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্ত এক কর্মকর্তার বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, 'লাইফস্টাইল ইস্যু' দিয়ে সাধারণত চীনা কর্মকর্তাদের ভাষায় কোনো ধরনের যৌন অসদাচরণ বোঝানো হয়।
দুইজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক নারীর সাথে কিন গ্যাংয়ের সম্পর্ক হয় এবং তাদের একটি সন্তানও আছে। তারা আরো জানান, বর্তমানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কিন জাতীয় নিরাপত্তার সাথে কোনো আপস করেছেন কিনা।
চীনের প্রধান অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে আদর্শিক যুদ্ধ চলছে। ফলে বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত অভিযান জোরদার করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মঙ্গলবার বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, কিন সম্পর্কে তার কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার মাত্র সাত মাসের মাথায় গত জুলাইতে কিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তিনি। তাকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। এরপর কিনের পূর্বসূরি ওয়াং ই-কে আবারো পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়।
এ ঘটনায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দুই সপ্তাহ জনসম্মুখে দেখা না যাওয়ায় প্রশ্নগুলো আরো বেশি সামনে আসছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বিদেশিদের সাথে বিভিন্ন বাণিজ্য ও সম্পর্ক রক্ষায় কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তা ও শীর্ষ সামরিক জেনারেলদের কড়া নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
চীনের খুব কম কর্মকর্তারই কূটনীতিতে কিনের মতো দ্রুত উত্থান হয়েছে। ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্ব পাওয়া ছিল তার প্রথম ধাপ। পরের ছয় বছরে তার অধীনে অনেক শীর্ষ বিশ্বনেতা চীন সফর করেন।
সম্ভবত এই দায়িত্ব পালনকালেই কিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছাকাছি আসেন। ২০১৭ সালে বেইজিংয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের সাথে একটি ছবিতে তাকে দেখা গেছে।
কূটনৈতিক মহলে ততটা পরিচিত না হলেও ২০২১ সালে কিন গ্যাংকে রাষ্ট্রদূত করে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। সেখানে বিভিন্ন সময় জনসংযোগে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কিনকে। আমেরিকান সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বেসবল ম্যাচে দর্শক হিসেবে দেখা যায় তাকে। এমনকি ইলন মাস্কের সাথে টেসলার একটি গাড়িতে চড়তেও দেখা গেছে কিনকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাইওয়ান ইস্যুতে তিনি মধ্যপন্থী মন্তব্য করেন। রাশিয়ার পরিকল্পনা জানা থাকলে চীন ক্রেমলিনকে ইউক্রেন আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখত বলে মন্তব্য করেন কিন। এমনকি তাইওয়ানের সাথে যুদ্ধের ঝুঁকি কমিয়ে আনার কথাও বলেছিলেন তিনি।