ভারত-কানাডা দ্বৈরথের পর আবারও খবরে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটে বোমা হামলা, কী হয়েছিল সেদিন
ভারত ও কানাডার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে বোমা হামলা আবারও বৈশ্বিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছে।
গত সপ্তাহে কানডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছেন, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকার জড়িত থাকার 'বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ' খতিয়ে দেখছে কানাডা।
ভারত কানাডার এ অভিযোগকে 'আজগুবি' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরপর থেকে ভারতে অনেকেই ১৯৮৫ সালের ভারতীয় যাত্রীবাহী বিমানটিতে বোমা হামলার বিষয়টি সামনে এনেছেন। ওই হামলাটি 'কনিষ্ক বম্বিং' নামেও পরিচিত, কারণ হামলার শিকার বোয়িং ৭৪৭ বিমানটির নাম ছিল শক সম্রাট কনিষ্কের নামে।
যা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি কানাডা থেকে লন্ডন হয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। পথে আইরিশ উপকূলে এটি আকাশে বিস্ফোরিত হয়।
ওই ঘটনায় বিমানে থাকা ৩২৯ জনের সবাই নিহত হন। স্যুটকেসে করে বিমানটিতে একটি বোমা ওঠানো হয়েছিল, যদিও ওই স্যুটকেসের ব্যক্তিটির টিকিট থাকলেও তিনি বিমানটিতে চড়েননি।
নিহতদের মধ্যে ২৬৮ জন ছিলেন কানাডার নাগরিক, বেশিরভাগ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। অন্যদিকে ভারতীয় নাগিরক ছিলেন ২৪ জন। সমুদ্র থেকে কেবল ১৩১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
বিমানটি যখন আকাশে ছিল, ওই সময় জাপানের টোকিওর নারিতা বিমানবন্দরে আরেকটি বিস্ফোরণে দুজন জাপানি ব্যাগেজ-কর্মী নিহত হন। পরে তদন্তে জানা যায়, এ বোমাটির সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২'র সংযোগ ছিল। এটি ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার আরেকটি ফ্লাইটে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল। কিন্তু বোমাটি আগেভাগে ফেটে যায়।
হামলার পেছনে যারা
কানাডিয়ান তদন্তকারীরা অভিযোগ করেন, ১৯৮৪ সালে পাঞ্জাবের স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
হামলার কয়েক মাস পরে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) বাব্বার খালসা নামক একটি উগ্রপন্থী দলের নেতা তলবিন্দর সিং পর্মর এবং ইন্দরজিৎ সিং রেয়াতকে একাধিক অস্ত্র, বিস্ফোরণ ও ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু মামলা শক্ত না হওয়ায় তলবিন্দরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা এখন মনে করেন, তলবিন্দরই ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। ১৯৯২ সালে ভারতীয় পুলিশ তাকে হত্যা করে।
২০০০ সালে ভ্যাংকুভারের ধনী ব্যবসায়ী রিপুদমন সিং মালিক এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কারখানা শ্রমিক আজাইব সিং বাগরিকে একাধিক অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে প্রায় দুই বছরের ব্যয়বহুল বিচারের পর ২০০৫ সালে উভয়কে সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন কানাডার আদালত। এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনেরা।
বিচারক জানিয়েছিলেন, এ দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্যে তথ্যগত ভুল ও বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব ছিল।
কেবল রেয়াত নৃশংস এ হামলার জন্য শাস্তি পান। জাপানের বিমানবন্দরে বোমা হামলার জন্য তাকে ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যে ১০ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তার শাস্তি আরও বাড়ে।
এ হামলার তদন্ত নিয়ে সমালোচনার শিকার হয় কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া হামলা প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সালে একটি পাবলিক তদন্তের রায়ে বিচারক বলেন, 'ধারাবাহিক কিছু ভুলই' পরিস্থিতিকে 'কানাডার ইতিহাসে অন্যতম বড় এ গণহত্যার' দিকে ঠেলে দিয়েছে।