ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের বিক্ষোভে বন্ধ হয়ে যায় নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ব্যস্ততম গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালে জড়ো হয়েছিল শত শত মানুষ। শহরের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে পরিচিত স্থানটিতে গতকাল (শুক্রবার) কালো টি-শার্ট পরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছে তারা।
চলমান র্যালির কারণে ম্যানহাটনে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন টার্মিনালটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছিল নিউ ইয়র্ক পুলিশ। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০০ বিক্ষোভকারীকে আটকের তথ্য পাওয়া গেছে।
ইহুদি নাগরিকসহ বিক্ষোভকারীদের টি-শার্টে 'এখনই যুদ্ধবিরতি চাই', 'আমাদের নামে (যুদ্ধ) নয়' ইত্যাদি লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পক্ষে ও গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে করা ব্যানারও দেখা যায়।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে যে, "আর অস্ত্র নয়। আর যুদ্ধ নয়। আমরা লড়াই করছি যুদ্ধবিরতির জন্য।"
ফিলিস্তিনের পক্ষে ও যুদ্ধ বন্ধের ব্যানারগুলো টার্মিনালের সিঁড়ি থেকে শুরু করে প্রস্থান বোর্ডজুড়ে টানানো হয়েছে। তারমধ্যে একটি ব্যানারে লেখা, "মৃতদের জন্য শোক এবং জীবিতদের জন্য নরকের মত যুদ্ধ।"
মূলত যুদ্ধবিরোধী সংগঠন জিউস ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) বিক্ষোভটির আয়োজন করেছে। তাদের হিসেব মতে প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে আসা ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যায়, স্টেশনে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে হাত পিঠের পিছনে বেঁধে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
জেভিপির পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে বলা হয়, "শত শত ইহুদি এবং তাদের মিত্রদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সম্ভবত এটি নিউ ইয়র্কে গত দুই দশকের মধ্যে জনগণের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ।"
জেভিপির বিবৃতিতে রাব্বি মে ইয়ে নামের একজন সংগঠক বলেন, "ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নাগরিকদের জীবন একে অপরের সাথে জড়িত। তাই ন্যায়বিচার, সমতা এবং সবার জন্য স্বাধীনতা নিশ্চিতের মাধ্যমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব।"
মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির পক্ষ থেকে জানা যায়, টার্মিনালটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এক্ষেত্রে কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এটি বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হওয়ায় তৈরি হয়েছে দুর্ভোগ।
এদিকে ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে গাজায় অভিযান বাড়াচ্ছে। বোমার আঘাতে জ্বলতে থাকা অঞ্চলটিতে সাধারণ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ রয়েছে। ঠিক এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই র্যালিটি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে গাজার অবস্থা এমনিতেই শোচনীয় ছিল। এখন স্থল আক্রমণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি যেন আরও অবনতির দিকে পৌঁছেছে।
প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা আত্মীয়দের সাথে কিংবা একে অপরের সাথে যোগাযোগও করতে পারছে না।
আইডিএফ মুখপাত্র হ্যাগারি বলেন, "ইসরায়েলি বাহিনী এখনো জিম্মি হওয়া সকলকে উদ্ধারে জাতীয় মিশনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সামরিক বাহিনী সবদিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।"
এছাড়াও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার বাসিন্দাদের ফের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সেখানেও নির্বিচারে বোমা ফেলছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
এদিকে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট এক টুইটে জানিয়েছে, তারা গাজায় তাদের দলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছে না। আল জাজিরার সংবাদদাতা জেমস বেস জানান, ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি এ ঘটনাকে যুদ্ধের সম্ভাব্য নতুন পর্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রেড ক্রিসেন্টের টুইটে বলা হয়: "ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ল্যান্ডলাইন, সেলুলার ও ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কারণে গাজা উপত্যকায় আমরা অপারেশন রুম ও সেখানে কর্মরত সকল দলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি।"
আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহতের যে সংখ্যা ফিলিস্তিনিরা প্রকাশ করছে, সেটির ওপর 'আস্থা নেই' বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৭ অক্টোবর থেকে নিহত হওয়া ৭,০২৮ জনের নামসহ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে।
ডকুমেন্টে থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি হামলায় রিপোর্টটি প্রকাশ পর্যন্ত ২,৬৬৫ জন শিশু নিহত হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচয় সনাক্ত করতে না পারা ২৮১ টি মরদেহের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।