আকাশ-ইশা-অনন্ত: ব্যবসার ব্যস্ততায়ও ৩ সন্তানের ওপর থেকে কখনো মনোযোগ সরাননি আম্বানি
বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানি বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর একটি পরিচালনা করেন। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও তিন সন্তান আকাশ, ইশা এবং অনন্তের ওপর থেকে একটুও মনোযোগ সরাননি তিনি।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় স্নাতকোত্তর পড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার ইচ্ছায় পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী, আম্বানি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির খেতাব ধরে রেখেছেন।
১৯৮৫ সালে বিয়ের পর মুকেশ ও নীতা আম্বানির ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে যমজ সন্তান আকাশ ও ইশা জন্মগ্রহণ করেন। চার বছর পর ১৯৯৫ সালে জন্ম হয় ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির।
২০২৪ সালের মার্চে অনন্তের প্রাক-বিবাহ উদযাপনে মার্ক জাকারবার্গ এবং বিল গেটসসহ অসংখ্য ব্যক্তিত্ব সস্ত্রীক অতিথি হয়েছেন। এর আগে মেয়ে ইশা ও ছেলে আকাশের বিয়েও ধুমধাম করে দিয়েছিলেন বাবা মুকেশ। এ তিন সন্তানই বর্তমান পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাদের নিয়ে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আকাশ আম্বানি, ৩২
মুকেশ এবং নীতার প্রথম ছেলে আকাশ ১৯৯১ সালের ২৩শে অক্টোবর মুম্বাইয়ে তার যমজ বোন ইশার সঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। মুম্বাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার পর আকাশ ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে তিনি ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি পারিবারিক কোম্পানি রিলায়েন্সে যোগ দেন।
আকাশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আইআইটি মুম্বাই টেকফেস্ট-এ ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার সময় কীভাবে তার বাবা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, 'আমার বাবা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, তিনি আমার হিরোদের একজন। তিনি সবসময় চেয়েছিলেন আমি একজন প্রকৌশলী হই। কিন্তু আমি সেটা হইনি, যদিও ২০০৩ সালের শেষের দিকে বাবা তার প্রথম মোবাইল ফোন নেওয়ার পর থেকে আমি প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি সবসময় মনে করি মানুষ অনুপ্রেরণা থেকেই নিজের জীবন তৈরি করে এবং আমি ভাগ্যবান যে, আমি বাড়িতেই আমার দাদা, মা এবং বাবার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি।'
আকাশ রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ পদে থেকে তিনি 'ভারতজুড়ে বাণিজ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় প্রজন্মগত পরিবর্তন আনতে ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন এবং ইন্টারনেট অব থিংসের মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন পণ্য এবং পরিসেবা তৈরির নেতৃত্ব দিচ্ছেন'।
টেক কনফারেন্সে বক্তৃতার দেওয়ার সময় আকাশ বলেছিলেন, ব্যবসা পরিচালনার সময় কোনো কিছু দ্বারাই নিজেকে বিভ্রান্ত হতে দেননা তিনি। চাপ থাকা সত্ত্বেও নিজের কাজকে উপভোগ করেন তিনি।
কাজকে উপভোগ না করলে কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় না বলে মনে করেন আকাশ। 'ব্যর্থতাকে ভয় পাবেন না। আমি মনে করি আমি ভাগ্যবান, কারণ আমার বাবা-মা আমাদের গাইড করতে পেরেছেন। আমরা কোনো কাজে ব্যর্থ হলেও তারা আমাদের বলেন, ঠিক আছে, ভুলকে শনাক্ত করো এবং সেটিকে পরিবর্তন করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করো।'
ইশা আম্বানি, ৩২
আকাশের যমজ বোন এবং মুকেশ-নীতা দম্পতির একমাত্র কন্যা ইশাও আকাশের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন। ২০১৩ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান এবং দক্ষিণ এশীয় গবেষণায় স্নাতক পাশ করেন তিনি। তারপরে ২০১৮ সালে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে যান।
পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়ে ইশা বর্তমানে রিলায়েন্সের বিভিন্ন শাখার বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তিনি ভোগ অস্ট্রেলিয়াকে বলেছিলেন, তার একসময় ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার। যদিও তিনি সবসময়ই জানতেন, কোনো না কোনোভাবে তিনি রিলায়েন্সে অবদান রাখবেন।
'আমার বাবা-মা আমাকে খুব ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের সঙ্গে বড় করেছেন। ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল যে, সবসময় পরিবারকে সবার আগে রাখা উচিত। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আমার প্রতি আমার ব্যক্তিগত দায়িত্ব পরিবার এবং পেশাগতভাবেও প্রসারিত হয়,' বলেন ইশা।
পরিবারের একমাত্র নারী হিসেবে কোম্পানিতে যুক্ত হবার পর অনুভূতি প্রকাশ করে ইশা আরও বলেন, কর্মশক্তিতে নারীরা যে প্রভাব ফেলতে পারে তা অন্য নারীদের দেখানো গুরুত্বপূর্ণ এবং এ আস্থা অর্জনে তিনি তার বাবার কাছে ঋণী।
তিনি বলেন, 'আমার সেরা রোল মডেল আমার বাবা। বাবার কারণে আমি বিশ্বাস করি নির্ভীকতা একটি গুণ। তিনি আমাকে এ বিশ্বাসে বড় করেছেন যে, আমি যদি সাহসী, পরিশ্রমী এবং আত্মবিশ্বাসী হই তবে আমি সবকিছু অর্জন করতে পারব।'
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, ইশা ও বিলিয়নিয়ার অজয় পিরামলের ছেলে আনন্দ পিরামলের বিয়ে হয়। তাদের প্রাক-বিবাহ উদযাপনে নিক-প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস, হিলারি ক্লিনটনসহ অসংখ্য তারকা অতিথি উপস্থিত ছিলেন, পারফর্ম করেছিলেন বিয়ন্সে। ব্লুমবার্গ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইশার বিয়েতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছিলেন মুকেশ আম্বানি।
চার বছর পর ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর ইশার যমজ সন্তান কৃষ্ণা এবং আদিয়ার জন্ম হয়।
অনন্ত আম্বানি, ২৮
মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠতম সন্তান অনন্ত আম্বানির জন্ম হয় ১৯৯৫ সালে। বড় ভাইয়ের মতো অনন্তও যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। তিনি এখন রিলায়েন্সের বিভিন্ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ২০০৪ সালের মার্চে ইন্ডিয়া টুডেকে অনন্ত বলেছিলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং জনসাধারণের উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করার বিষয়ে বেশি উৎসাহী তিনি।
মা নীতা আম্বানি ২০০৭ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, ছোটবেলা থেকেই অনন্তর হাঁপানির সমস্যা ছিল, তাই তাকে স্টেরয়েড নিতে হয়। এ কারণে অনন্তের ওজন বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের মার্চে তার প্রাক-বিবাহের উদযাপনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় অনন্ত বলেন, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তার জীবন কখনও আরামের ছিল না।
'আমি শৈশব থেকেই অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে এটি অনুভব করতে দেননি। তারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তারা আমাকে অনুভব করিয়েছেন যে, আমি যদি মনে করি আমি কোনো কিছু করতে পারব, তাহলে আমি তা অবশ্যই করব,' বলেন এ তরুণ।
অনন্ত এবং তার বাগদত্তা রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে হতে যাচ্ছে। কিন্তু তার আগে একটি বিশাল পার্টির মাধ্যমে তারা তাদের প্রাক-বিবাহ উদযাপন শুরু করেছেন।
এ উদযাপনে রিহানার সংগীত, বিল গেটস এবং জাকারবার্গসহ বিশ্বের কিছু ধনী ব্যবসায়ীর উপস্থিতি, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, হিলারি ক্লিনটনের আতিথ্য গ্রহণ; সব দেখা গেছে।