ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কিছু বিয়ের আয়োজন
বিয়ে মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। যদিও বিভিন্ন সংস্কৃতি ভেদে বিয়ের রীতি ও আচার ভিন্ন। তবে সবক্ষেত্রেই বিয়ের অন্তর্নিহিত থিম একটাই, তা হলো দম্পতি হিসেবে দুজন সারাজীবন একসঙ্গে থাকার ঘোষণা দেওয়া।
কেউ কেউ নিজেদের বিয়ের আয়োজনকে সহজ রাখতে পছন্দ করেন, কেউবা আবার দেদারসে খরচ করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান।
এখানে আমরা ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়েকটি বিয়ের তালিকা তুলে ধরছি:
ইশা আম্বানি ও আনন্দ পিরামল
ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মেয়ের বিয়েতে যে সেরার থেকেও সেরা জাঁকজমক হবে সে কথা সকলেই জানে। রাজকীয় এই বিয়ে উদ্যাপনের জন্য মুকেশ আম্বানি ও তার পরিবার কোনো আড়ম্বরই বাদ রাখেননি। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে ব্যবসায়ী আনন্দ পিরামলকে বিয়ে করেন ইশা আম্বানি।
রিপোর্ট অনুসারে, ইশা তার বিয়েতে যে সুন্দর লেহেঙ্গাটি পরেছিলেন, তার দাম ৯০ কোটি রুপি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি লেহেঙ্গা!
নীতা মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টারে (এনএমএসিসি) তার বিয়ের পোশাক প্রদর্শন করা হয়।
তার বিয়ের প্রতিটি নিমন্ত্রণপত্রের মূল্য ছিল ৩ লাখ রুপি। প্রতিটি কার্ড ডোলস অ্যান্ড গাবানা'র বাক্সে দেওয়া হয়েছিল, সঙ্গে ছিল আরেকটি বাক্স। এর মধ্যে আবার চারটি ছোট বাক্স ছিল। এগুলোর ভেতর চারটি চেইন উপহার দেওয়া ছিল, অতিথিরা যাতে সেগুলো অলংকার হিসেবে পড়তে পারেন।
জানা যায়, সব মিলিয়ে ইশা-আনন্দের বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৭০০ কোটি রুপি!
সুশান্ত রায়-রিচা আহুজা ও সীমান্ত রায়-শান্তিনী তুর
সাহারা গ্রুপের প্রধান প্রয়াত সুব্রত রায়ের দুই ছেলে সুশান্ত রায় ও সীমান্ত রায়ের যৌথ বিয়ে ছিল ভারতের অন্যতম ব্যয়বহুল বিয়ে। তাদের বিয়েতে ৫৫০ কোটি রুপির বেশি খরচ হয়েছিল। লখনউতে অনুষ্ঠিত এই গ্র্যান্ড ওয়েডিংয়ে ১১ হাজারেরও বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
চার দিনব্যাপী চলা এই উৎসবে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথিদের ব্যক্তিগত জেটে লখনউতে আনা হয়েছিল।
সুশান্ত রিচা আহুজাকে বিয়ে করেন এবং সীমান্ত বিয়ে করেন চান্তি তুরকে।
এক সূত্রের খবরে জানা যায়, উৎসব চলাকালীন সুব্রত রায় ১০১ জন দুঃস্থ মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন এবং তিনি ১৫ হাজারেরও বেশি গরিব মানুষকে খাইয়েছেন।
ব্রাহ্মণী রেড্ডি ও রাজীব রেড্ডি
সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভারতীয় বিয়েগুলির মধ্যে এটি একটি। ২০১৬ সালে রাজীব রেড্ডির সঙ্গে প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ও খনি সম্রাট গালি জনার্দন রেড্ডির একমাত্র মেয়ে ব্রাহ্মণী রেড্ডির বিয়ে হয়। কনের বিয়ের শাড়ির দাম ছিল ১৭ কোটি রুপি। সব মিলিয়ে বিয়েতে মোট ৫০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছিল।
রাজীব রেড্ডি হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী বিক্রম দেব রেড্ডির ছেলে।
ব্যাঙ্গালোর প্যালেসে পাঁচ দিন ধরে গ্র্যান্ড ওয়েডিং সেলিব্রেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এতে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন!
সৃষ্টি মিত্তল ও গুলরাজ বেহল
২০১৩ সালে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার গুলরাজ বেহলের সঙ্গে প্রমোদ মিত্তলের মেয়ে সৃষ্টি মিত্তলের বিয়েতে ৫০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছিল!
বার্সেলোনায় তিন দিনব্যাপী জমকালো এই ভারতীয় বিয়ের আসর বসেছিল। বিয়ের জন্য ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে ২০০ জনেরও বেশি খানসামা ও রাঁধুনিকে স্পেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রমোদ মিত্তল স্টিল টাইকুন লক্ষ্মী মিত্তলের ছোট ভাই।
সঞ্জয় হিন্দুজা ও অনু মাহতানি
ব্যবসায়ী সঞ্জয় হিন্দুজা ও অনু মাহতানির সাত দিনের বিয়ের আয়োজনে খরচ হয়েছিল ১৪০ কোটি রুপি। এতে দেশের বিনোদন, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মহলের ব্যক্তিত্বেরা উপস্থিত ছিলেন।
উদয়পুরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য ২০০টিরও বেশি চার্টার্ড বিমান ভাড়া করা হয়েছিল এবং অতিথিদের জন্য ব্যক্তিগত চালকসহ একটি বিএমডাব্লু গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, জমকালো এই বিয়েতে জেনিফার লোপেজ এবং গায়িকা নিকোল শেরজিঙ্গারের পারফর্ম করেছিল। অনু মাহতানি তার বিয়েতে একটি চোখ ধাঁধানো তরুণ তাহিলিয়ানি লেহেঙ্গা পরেছিলেন।
বানিশা মিত্তল ও অমিত ভাটিয়া
ভারতের স্টিল টাইকুন লক্ষ্মী মিত্তালের মেয়ে বানিশা মিত্তাল ২০০৪ সালে অমিত ভাটিয়াকে বিয়ে করেন।
প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে তাদের বাগদান হয় এবং প্যারিসের পার্শ্ববর্তী শ্যাতো ভিউ ভিওক্স লে ভিকোমেতে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
অভিনেত্রী কাইলি মিনোগ বিয়েতে পারফর্ম করেন এবং আইফল টাওয়ারেও একটি আতশবাজির প্রদর্শনী করা হয়েছিল।
ঝাঁকজমকপূর্ণ এই বিয়েতে প্রায় ৫৫০ কোটি রুপি ব্যয় হয়েছিল। তবে এ বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ২০১৩ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি