দ্রুতগতির ট্রেন চালু করছে দক্ষিণ কোরিয়া, জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ার আশা
মধ্য-সিউল ও এর বাইরের এলাকাগুলোর মধ্যে যাতায়াতের সময় কমাতে উচ্চগতির ট্রেন পরিষেবা চালু করছে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা আশা করছেন, দ্রুতগতির এ ট্রেন পরিষেবার সুবাদে তরুণরা শহরের বাইরে বসবাসের জন্য স্থায়ী হতে এবং সন্তান নিতে উৎসাহী হবেন।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির তরুণরা প্রায়ই বলেছেন, মূলত যাতায়াতে অনেক বেশি সময় লাগা এবং বৃহত্তর সিউলে চড়া আবাসন ব্যয়ের কারণে তারা বিয়ে করে সন্তান নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। উল্লেখ্য, বৃহত্তর সিউলেই প্রায় অর্ধেক মানুষের বসবাস।
সিউলের জন্মহার জাতীয় গড়ের চেয়েও কম। কোরিয়া সরকার জন্মহার বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়ারও চেষ্টা করেছে। যদিও এতে তেমন একটা সাফল্য মিলেনি।
কর্মকর্তারা এখন আশা করছেন, গ্রেট ট্রেন এক্সপ্রেস (জিটিএক্স) ছয়টি লাইনের মাধ্যমে সিউলের সঙ্গে বাইরের কয়েকটি এলাকাকে যুক্ত করবে। ৯৯.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এই ভূগর্ভস্থ রেললাইন প্রকল্প ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়েওল প্রথম লাইনের একাংশ উদ্বোধন করেন। এ লাইনটি রাজধানীর সুসেও থেকে স্যাটেলাইট শহর ডংটনে ভ্রমণের দূরত্ব মাত্র ১৯ মিনিটে নামিয়ে আনবে। এখন বাসে করে এ শহরে যেতে সময় লাগে ৮০ মিনিট।
প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন, যাতায়াতে সময় কমে আসায় 'মানুষ সকালে ও সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারবে'।
পুরোদমে চালু হওয়ার পর জিটিএক্স হবে বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির ভূগর্ভস্থ ট্রেন পরিষেবা। এ পরিষেবার ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার গতিতে চলবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাড়ির দাম অত্যন্ত চড়া। বিশেষ করে সিউলে আবাসন আরও বেশি ব্যয়বহুল।
ভূমিমন্ত্রী পার্ক সাং-উ রয়টার্সকে বলেছেন, জিটিএক্সের সুবাদে যাতায়াতের সময় অনেক কমে আসায় তরুণরা রাজধানী থেকে দূরের এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসন নিতে উৎসাহী হবেন। এছাড়া যাতায়াতে যে সময় বাঁচবে, সেই সময়টুকু তারা পরিবারকেও দিতে পারবেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, 'যেমন ধরুন, দুই ঘণ্টা ভ্রমণ করে বাড়ি যাওয়ার পর মানুষ বাচ্চাকে দেওয়ার মতো সময় পাবে কীভাবে? আমাদের লক্ষ্য কাজের পর মানুষকে বাড়তি অবসর সময় দেওয়া।'
কিছু বিশ্লেষক অবশ্য বলছেন, জিটিএক্স উল্টো দক্ষিণ কোরিয়ার পল্লি এলাকার ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা আরও কমিয়ে দেবে। কারণ যাতায়াতের সুব্যবস্থা পেয়ে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ পাড়ি জমাবে জনবহুল রাজধানীতে।
কিয়ংগি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কিম জিন-ইয়ু বলেন, আঞ্চলিক শহরগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ওই সব এলাকাতেও রাজধানীর মতোই সরকারি অবকাঠামো গড়ে তোলা।