‘গাজা যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে কলম্বিয়া’: গুস্তাভো পেত্রো
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গাজায় আগ্রাসন চালানোর জন্য ইসরায়েলের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (১ মে) রাজধানী বোগোতায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বলেছেন, গাজায় চলমান সংকটের মধ্যে দেশগুলো নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
পেত্রো তার বক্তব্যে বলেন, "আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিচ্ছে, গণহত্যা চালাচ্ছে এমন সরকার থাকার জন্য আগামীকাল (২ মে) আমরা ইসরায়েলের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করব।"
বামপন্থী নেতা গুস্তাভ পেত্রো ২০২২ সালে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। তিনি লাতিন আমেরিকায় 'পিংক ওয়েভ' নামে পরিচিত একটি প্রগতিশীল জোয়ারের অংশ হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি ইসরায়েলের কঠিন সমালোচকদের একজন।
অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিন পর পেত্রো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে 'ইহুদিদের সম্পর্কে নাজিরা যা বলেছিল' সেরকম ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগ আনলে ইসরায়েল কলম্বিয়াতে 'নিরাপত্তা সরঞ্জাম রপ্তানি' বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল।
এক মাস পরে পেত্রো ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন ছিটমহলে 'গণহত্যা' চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এবং ইসরায়েলপন্থি বিভিন্ন গোষ্ঠী ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল।
ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর পরে ইসরায়েলি অস্ত্র কেনা স্থগিত করেছিল কলম্বিয়া।
গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহতে ইসরায়েলি স্থল অভিযানে চালানোর সম্ভাবনার মধ্যেই বুধবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এ বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার রাফাহতে ইসরায়েল হামলা চালালে সেটি হবে 'অবর্ণনীয় ট্র্যাজেডি'।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ অঞ্চলে মানবিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়ার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে কলম্বিয়ার ঘোষণার এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ইসরায়েলি সরকার। কলম্বিয়া সম্প্রতি ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) একটি মামলায় অংশ নিতে চেয়েছিল।
গাজার দুর্বল ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা, বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্কদের জন্য জরুরি এবং ব্যাপক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই দেশটির লক্ষ্য বলে জানিয়েছিল কলম্বিয়া।
আন্তর্জাতিক আদালত জানুয়ারিতে এক রায়ে জানিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনের গাজা গণহত্যার একটি সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছিল আইসিজে।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবেনিজ মার্চের শেষের দিকে বলেছিলেন, "গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।"
ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আলবেনিজের বক্তব্যকে 'বাস্তবতাকে বিকৃত করা হচ্ছে' বলে অভিহিত করেছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়