কিরগিজস্তানে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: সাহায্য চাইলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা স্থানীয় উত্তেজিত জনতার হামলার শিকারের খবর পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৮ মে) এ হামলার শিকার হন দেশটিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
কিরগিজস্তানের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব মেডিসিনের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সামিয়া কবির শনিবার সন্ধ্যায় ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা এখানে পাঁচজন বাংলাদেশি মেয়ে আছি। আমরা এখন আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে আছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কিছু লোক জড়ো হচ্ছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।'
সামিয়া আরও বলেন, 'কর্তৃপক্ষ আমাদের ভেতরে থাকতে বলেছে। আমরা কাছাকাছি অন্যান্য অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ... সেখানে কিছু পাকিস্তানি থাকতে পারে।'
কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজিত জনতা পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের সাহায্য করার আবেদনটি প্রচার করতে ইউএনবির কাছে অনুরোধ করেছেন।
এদিকে কিরগিজস্তানের প্রতিবেশি দেশ উজবেকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস বিশকেকের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের দূতাবাসের নম্বরে (+৯৯৮৯৩৯৯৯৯৭৮০) যেকোনো সময়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এনডিটিভি'র খবরে বলা হয়েছে, গত ১৩ মে বিশকেকে কিরগিজ ও মিশরীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। সেই ঘটনার ভিডিও গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি আতিথেয়তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার (১৭ মে) রাতে বেশ কয়েকজন কিরগিজ সেনা রাস্তায় নেমে আসে। স্থানীয়রা এই বিবাদে জড়িত বিদেশিদের সঙ্গে 'নমনীয় আচরণ' করার জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, গত ১৩ মে মারামারির অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তিন কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য এ মুহূর্তে তাদের ঘর থেকে বের না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় ইন্ডিয়ান কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের এই মুহূর্তে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।'
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও শিক্ষার্থীদের দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে হামলায় তিন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে সরকারের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানানো হয়েছে।
বিশকেকে অবস্থিত পাকিস্তানের দূতাবাস জানিয়েছে, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি ছাত্রাবাস ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
হামলায় পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্টে পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিহত ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।'
এ ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ উদ্বেগ জানিয়েছেন।