‘ত্রিশোর্ধ্ব’ নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জিমনেশিয়ামের নোটিশ, সমালোচনার ঝড়
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জিম অশোভন আচরণ করা 'আন্টি'দের প্রবেশ নিষেধ করেছে। জিমনেশিয়ামটির এ সিদ্ধান্ত দেশটিতে বয়স্ক নারীদের ওপর করা বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
রাজধানী সিউলের অনতিদূরে ইনচিয়ন শহরে অবস্থিত জিমটি বয়স্ক নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টানিয়েছে। এতে লেখা, 'আজুম্মাদের প্রবেশ নিষেধ' এবং 'শুধু সুরুচিসম্পন্ন এবং মার্জিত নারীরা প্রবেশ করতে পারবেন'।
দক্ষিণ কোরিয়ায় আজুম্মা বলতে বয়স্ক নারীদের—সাধারণত যাদের বয়স ৩০-এর কোঠার শেষ দিকে এবং তারচেয়ে বেশি—বোঝানো হয়। এছাড়া অভদ্র বা আপত্তিকর আচরণকেও আজুম্মা বলা হয় দেশটিতে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ওই জিম বা এর মালিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। জিমটির মালিক আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, তারা কোম্পানি এরকম নারী এবং তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য 'ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে'।
দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদ সংস্থা ইয়োনহ্যাপ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, '[কিছু বয়স্ক নারী গ্রাহক] চেঞ্জিং রুমে এক-দুই ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দেন, তোয়ালে, সাবান, হেয়ার ড্রায়ারসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করেন। তারা সার বেঁধে বসে গল্প করেন আর অন্যদের শরীর নিয়ে মন্তব্য করেন।'
বয়স্ক নারীদের ওরকম মন্তব্যের জন্য বিচলিত হয়ে কিছু অল্পবয়সি নারী জিম ছেড়ে দিয়েছেন বলেও দাবি করেন জিম মালিক।
মাত্র একটি জিম বয়স্ক নারীদের প্রবেশ নিষেধ করলেও এ সিদ্ধান্ত তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। কারণ গত কয়েক বছরে নির্দিষ্ট কিছু পাবলিক জায়গায় শিশু বা বয়স্কদের প্রবেশ নিষেধ করে তুমুল সমালোচনার শিকার হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা।
এসব ঘটনা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া একটি নির্দিষ্ট বয়সে নারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণকে যুক্ত করার কারণেও ওই জিম সমালোচনার শিকার হয়েছে।
স্থানীয় যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবসাইট ইনস্টিজ-এ একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, '"আজুম্মা" আর "খারাপ গ্রাহক" শব্দগুলোর অর্থ এক হয়ে গেল কীভাবে?
'সেবা খাতে কাজ করলে আপনি জানবেন শুধু বয়স্ক নারীরাই ওই ক্যাটাগরিতে [খারাপ গ্রাহক] পড়েন না।'
আরেকজন ব্যবহারকারী ওই জিমের উদ্যোগটিকে সেকেলে মানসিকতার পরিচায়ক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিন বলেছেন, এটি '২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকের মনোভাব'।
ওই জিম আরেকটি নোটিশ দিয়ে আজুম্মা ও নারীদের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছে। জিমটি বলেছে, আজুম্মারা 'যে বয়সেরই হন না কেন, তারা ফ্রি-তে জিনিস পেতে পছন্দ করেন', এবং তারা 'নিজের টাকা খরচ নিয়ে কার্পণ্য করলেও অন্যের টাকা নিয়ে তা করেন না'।
জিমের মালিক আরও বলেন, তার মতো একই মনোভাব পোষণ করা আরও ব্যবসায়ী থাকতে পারেন, কিন্তু তারা মুখ ফুটে কিছু বলেন না।
এই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য অনলাইনে কিছু মানুষের সমর্থন পেয়েছেন, যারা মনে করেন বয়স্ক বা মধ্যবয়সি নারীরা অভদ্র আচরণ করেন। তাদের কেউ কেউ এ বয়সি নারীদের 'কাণ্ডজ্ঞানহীন' বলে উল্লেখ করেছেন।
ইউটিউবের একটি কমেন্টে লেখা হয়েছে, 'এই মহিলার বিরক্তিকর…তারা তাদের বাচ্চাদের রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফেতে নিয়ে যান।'
কারও কারও দাবি, এই বয়সের নারীরা সন্তানসহ পাবলিক জায়গায় গিয়ে প্রচুর জায়গা দখল করেন অথবা অন্যদের বিরক্ত করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীদের এরকম অনেক প্রতিকূল মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। যেমন, নারীদের খাটো চুল কিংবা একাকী থাকা সেখানে ভালো চোখে দেখা হয় না।