ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর: সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/denmark_file_photo_-_reuters.jpg)
দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) দুই ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫১তম। কঙ্গো ও ইরানও বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে।
এই সূচকে বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দুর্নীতি নানাভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, সম্পদের অসম বণ্টন বেড়ে যায়, ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যায়, সরকারি রাজস্ব কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, আয় বৈষম্য আরও বাড়ে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪-এর শীর্ষে থাকা দেশগুলোর দিকে নজর দিলে এই প্রভাবগুলো আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
ডেনমার্ক
তালিকার শীর্ষে থাকা ডেনমার্ক শাসন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ মান এবং সরকারি খাতে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার প্রতিনিধিত্ব করে।
লেগাটাম প্রসপারিটি ইনডেক্স (এলপিআই)-এর দিকে তাকালেও এর প্রমাণ মেলে।
এলপিআই হলো একটি বিস্তৃত সূচক, যা শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ (যেমন- জিডিপি) ছাড়াও সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত দিক প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে দেশের সমৃদ্ধি নির্ধারণ করে।
এটি একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান নির্ধারণকারী নানা ফ্যাক্টরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সাফল্য এবং সামাজিক কল্যাণের সমন্বয়ে সমৃদ্ধি মূল্যায়ন করে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ সূচকে ডেনমার্ক তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। এর মানে হলো দেশটিতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মান অনেক উন্নত।
এই দেশগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাস্থ্যকর। সেখানে বিনিয়োগের সুরক্ষা, অনুকূল ব্যবসায়িক নীতিমালা এবং শক্তিশালী বাজার কাঠামোর মতো এমন কিছু বিষয় রয়েছে; যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ডেনমার্কের অর্থনৈতিক সূচকগুলো দেশটির স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি।
খাদ্য ও অ্যালকোহলবিহীন পানীয়ের দাম বাড়ার কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দেশটির বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ১.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। আগের দুই মাসে এই হার ছিল ১.৬ শতাংশ।
২০২৩ সালে ডেনমার্কের প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের জাতীয় আয় ছিল ৫৭ হাজার ৪৭৮ ইউরো। এছাড়া, ডেনমার্ক বিশ্বের সর্বনিম্ন আয় বৈষম্যের দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত।
২০২১ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেনমার্কের গিনি সূচক ছিল ২৮.৩।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, ডেনমার্কের জনসংখ্যা ৫.৯ মিলিয়ন।
ফিনল্যান্ড
দুর্নীতির ধারণা সূচকের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরেক নর্ডিক দেশ ফিনল্যান্ড।
লেগাটাম প্রসপারিটি ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ০.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। নভেম্বর মাসে এ হার ছিল পুরোপুরি ১ শতাংশ।
ঐতিহাসিকভাবে দেশটিতে মাঝারি মুদ্রাস্ফীতির হার বজায় থাকে। ২০২২ সালের নভেম্বরে এ হার সর্বোচ্চ ৯.১ শতাংশে পৌঁছেছিল।
ফিনল্যান্ডও তুলনামূলকভাবে কম আয় বৈষম্যের দেশ হিসেবে পরিচিত।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডের গিনি সূচক ছিল প্রায় ২৬.৬।
২০২৩ সালে ফিনল্যান্ডের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৪৪ হাজার ৫৭৪.৭৭ ইউরো। ২০২৩ সালের হিসাবে ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন।
সিঙ্গাপুর
নর্ডিক দেশগুলো থেকে বহু দূরের দেশ সিঙ্গাপুর এশিয়ার আলোকবর্তিকা হিসেবে বিরাজ করছে।
লেগাটাম প্রসপারিটি ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর ১৭তম স্থানে রয়েছে। যদিও এই সূচকে দেশটি এশিয়ার আরেক দেশ জাপানের ঠিক নিচে রয়েছে।
তবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের গল্প এখানেই থেমে নেই।
এই দ্বীপদেশের মুদ্রাস্ফীতি হার ১.৬%, যা দেশটির কার্যকর আর্থিক নীতিমালা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
এছাড়াও, সিঙ্গাপুরের গিনি সূচক বর্তমানে প্রায় ০.৩৭।
২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৮২ হাজার ২৫৬.৮৮ ইউরো। সেসময় দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৫.৯ মিলিয়ন।
সিপিআইয়ের তালিকার শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকি দুটি দেশ হলো- নিউজিল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ। এই দুটি দেশও বিভিন্ন সূচকে প্রশংসনীয় ফলাফল দেখিয়েছে।
তালিকার সবচেয়ে নিচের পাঁচটি দেশ হলো- ইয়েমেন, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদান। এই দেশগুলোর সূচকের চিত্র একেবারে বিপরীত।
তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এই দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে সংঘাতের শিকার।