বৃষ্টি নেই, জোয়ারের পানিতে ডুবছে চট্টগ্রাম নগর
বৃষ্টির দেখা সেভাবে না মিললেও বৃহস্পতিবার হঠাৎ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান বাজার খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলো। অনেকের বাসাবাড়িতেও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে নিত্যদিনের চলাফেরায় গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ পর্যন্ত ভাড়া।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ টিবিএসকে বলেন, দুপুরের পর হঠাৎ করেই খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে থাকে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় পানি ছিল। এতে অনেক দোকানেই পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়েছে। স্লুইসগেটগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা গেলে ব্যবসায়ীরা এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতো।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ বলেন, সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৪১ মিটার। এতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। শুক্রবার জোয়ারের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা হাতে পারে ৫ দশমিক ৪৩ মিটার।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েকদিনে জোয়ারের উচ্চতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের এ কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে কিছু কিছু জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাসের কথাও জানিয়েছেন।
কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য জোয়ারের সময় জানাটা একেবারেই জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগ্রাবাদের বাসিন্দাদের জানতেই হয় কখন জোয়ার আসবে। আর সেই পানিতে ডুবে যাবে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়ির নিচতলা।
জোয়ারের স্রোতে যখন মহল্লা ডুবে যায়, তখন নিজ বাড়িতেই গাদাগাদি অবস্থান করতে বাধ্য হন এলাকাবাসী। জোয়ার সরে না যাওয়া পর্যন্ত চলাচল করেন না। এছাড়া, একটু বেশি নিচু জায়গাগুলো দিনে কমপক্ষে ছয়ঘণ্টা জোয়ারের পানিবন্দী থাকে।
''জোয়ারের পানি কমপক্ষে তিন ঘণ্টা থাকে। এজন্য আমরা জোয়ারের পূর্বাভাস-সহ ক্যালেন্ডার ঘরে রাখি। আমাদের প্রতিটি দিনের শুরু সেই মাফিকই হয়,'' বলছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অভিজাত এলাকাটির এক বাসিন্দা জসীম উদ্দিন।
তবে শুধু আগ্রাবাদ নয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী জোয়ারের কারণে মহানগরীর প্রায় ৬৯ শতাংশ মহল্লা নানা সময়ে কম-বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের ঠিকানা চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজি হাসান বিন শামস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত বছরই আমরা আগ্রাবাদ এলাকার সড়ক তিন ফুট উঁচু করেছি। তারপরও এবছর তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই আবাসিক এলাকায় জোয়ারের পানিই বড় সমস্যা।"
এভাবেই সমুদ্রের পানির উচ্চতা চট্টগ্রাম নগরীর ১৮ শতাংশ এলাকায় ০.৫-২.৫ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আগ্রাবাদে সিডিএর তৈরি আবাসিক এলাকা, পূর্ব বাকালিয়া, দক্ষিণ বাকালিয়া, হালিশহর, শোলকবাহার, মুরাদপুর এবং বাহাদুরাঘাট অঞ্চল।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী জানান, চান্দাগাঁও, মোহরা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চকবাজার, পতেঙ্গা অঞ্চল জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায়; সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণেই এমনটা ঘটছে।