এলপিজির অযৌক্তিক দাম মেনে নেব না: ভোক্তার মহাপরিচালক
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে ২০০-২৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। অযৌক্তিক দামে গ্যাস বিক্রি করে ভোক্তা ঠকানোর অপরাধ কোনভাবে মেনে নেওয়া হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
মঙ্গলবার ভোক্তা অধিদপ্তর আয়োজিত এলপিজি গ্যাসের দামের বিষয়ে এর উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আগস্টে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১,২১৯ টাকা ছিল, যা চলতি মাসে বাড়িয়ে ১,২৩৫ টাকা করা হয়েছে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'আগে এ সেক্টরে খুব একটা সমস্যা হয়নি। এখন যত প্রয়োজন বাড়ছে ততো সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিইআরসি'র (বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন) একটি ভূমিকা রয়েছে।'
'বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং দেশে জ্বালানী তেলের কারণে অভ্যন্তরীণ পরিবহন খরচ বাড়ার পরেও সেসব বিষয় আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেনা। যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'
এ সময় সফিকুজ্জামান বলেন, 'তারপরেও যখন সরকার দাম নির্ধারণ করে, সেটা মানতে হবে। ভোক্তারা নির্ধারিত দামে না পেলে সেটা প্রতারণা হবে। আপনাদের সমস্যাগুলো দাম নির্ধারণের পূর্বে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে। সেটা আপনারা করতে পারছেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
তিনি বলেন, 'আমি বিইআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসবো। তিনিই আমাকে এর আগে দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযানের কথা বলেছিলেন। এখন সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে ডেভলপ করতে পারবো।'
এ সময় ব্যবসায়ীরা দাম বেশি নেওয়ার পরেও লোকসান হচ্ছে এমন তথ্য দেন। এরপর তাদের লোকসানের প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, 'আমি কখনো কোন ব্যবসায়ী লাভ করছে এমন শুনিনি। আপনাদের জেনারেল কথা, আপনারা শুধু লোকসান-ই করেন। তারপরেও আমরা দেখি আপনাদের ব্যবসা বড় হয়।'
এ সময় বেক্সিমকো গ্যাসের চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার মুনতাসির আলম বলেন, 'বারবার অনুরোধ করে বিইআরসি'র দাম নির্ধারণের সভায় জায়গা নিতে হয়েছে আমাদের। গত মাসে দাম নির্ধারণে আমরা আগ্রহী ছিলাম না। কারণ মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে এলসি নিষ্পত্তির রেট ১০২ টাকা ধরা হয়েছিল। যেখানে সে সময় ডলার রেট আরও অনেক বেশি ছিল।'
তিনি বলেন, 'এছাড়া আমাদের গ্যাস সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের জন্য রেট ধরা হয় ১৮৬ টাকা। কিন্তু আমরা হিসেব দিয়েছি এ খরচ ২৪৫ টাকা। তারপরও মানা হয়না। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরও সেই পুরনো ৬৫ টাকা প্রতি লিটারের দাম ধরে অভ্যন্তরীণ পরিবহন খরচ হিসেব করা হচ্ছে। অপারেটরের কোন মার্জিনও রাখা হয়নি দাম নির্ধারণের হিসেবে। ফলে যে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'
জিএমআই কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'এ এলপিজি খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। আমিও জীবনের শেষ সময়ে বড় বিনিয়োগ করে বসেছি এ খাতে। সেটা বড় ভুল। সরকার যেমন প্রয়োজনে রাতারাতি একদিনে ৪৮ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, আমরা সেটা করতে পারিনা। শুধু লোকসান করি।'
অন্যদিকে ডিলার ও বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে কয়েকজন বৈঠকে বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি একমাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছেনা।
অন্যদিকে তারা বারবার সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে জরিমানার স্বীকার হচ্ছেন। যদিও দাম বৃদ্ধির পেছনে অপারেটররা দায়ী।
এ সময় মহাপরিচালক বলেন, 'মূল্যবৃদ্ধি হলে অভিযান চলবেই। যদি আমরা ক্রেতাদের কাছে অভিযোগ পাই, গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য দেয় তবে অভিযান হবেই। কিন্তু সেটা সবসময় যৌক্তিকভাবে হবে। কখনো এ খাতকে অরক্ষিত করা হবে না।'
এদিকে বৈঠকে বিইআরসি'র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত উপপরিচালক ফিরোজ উজ জামান বলেন, 'দাম নির্ধারণে কিছু দুর্বলতার কথা এসেছে। সেগুলো আমি বিইআরসি চেয়ারম্যানকে জানাবো।'