অধিকাংশ বাসেই কার্যকর হয়নি ই-টিকেটিং
রাজধানীর মিরপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৩০টি কোম্পানির বাসে রোববার থেকে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। প্রথম দিনে অধিকাংশ বাসই পজ মেশিনের মাধ্যমে ই-টিকেটিংয়ের সুবিধা দিতে পারেনি যাত্রীদের।
অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিকদের ই-টিকেটিং সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। তবে যেসব পরিবহন ই-টিকেটিং চালু করেছে, তার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক উভয়েই প্রকাশ করেছেন সন্তুষ্টি। বেশ কিছু পরিবহন কোম্পানির বাসে পজ মেশিন থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করেনি তারা। এছাড়া বাসগুলোর ওয়েবিল পদ্ধতিও ছিল আগের মতো।
রোববার রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলোর ব্যবস্থাপনা সরেজমিন ঘুরে এবং যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই দেখা যায়।
যাত্রীরা বলছেন, ঘোষণা দিয়েও মিরপুরের অধিকাংশ বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় আগের নিয়মেই অধিকাংশ বাস তাদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে। তবে ই-টিকেটিং এর ব্যবস্থা থাকা বাসগুলোতে তারা যে পর্যন্ত ভ্রমণ করছেন ঠিক সে পর্যন্তই ভাড়া রাখা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা সকল পরিবহনে চালু হলে কমবে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, এমনটা প্রত্যাশা তাদের।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যেসব কোম্পানির মালিকরা পজ মেশিন সরবরাহ করেছে সেগুলোতে ই-টিকেটিং হচ্ছে। বাকি বাসগুলোতে মেশিন আসতে আরও ২ থেকে ৩ দিন লাগতে পারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর থেকে চলাচলকারী শিকড়, আলিফ, বিহঙ্গ, ফার্স্ট টেন, স্বাধীন এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা ছিল না।
শিকড় পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার ইমন হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের কিছু বাসে পজ মেশিন দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমরা পাইনি। ১৫ তারিখ থেকে আমরা ই-টিকেটিং শুরু করবো।'
স্বাধীন এক্সপ্রেসের সুপারভাইজার মো. মোবারক বলেন, 'শুনেছি মেশিন দিবে বাসে কিন্তু এখনও দেয়নি। আমরা তো অশিক্ষিত, আমরা কিভাবে মেশিনে ভাড়া কাটবো।'
তবে মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা পরিস্থান, প্রজাপতি, সেফটি, মিরপুর লিংক, রাজধানী সুপার সার্ভিস লিমিটেড, আয়াতসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসের ভিতরেই হেলপারদের পজ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। তারা কোনো স্টপেজে না দাঁড়িয়ে বাসের ভিতরেই ই-টিকেট কেটে দেয়।
রাজধানী সুপার সার্ভিস লিমিটেডের একটি বাসের হেলপার হৃদয় টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের প্রতিটি বাসেই পজ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। গাড়ির মধ্যেই টিকিট কাটি।'
আয়াত পরিবহনের সুপারভাইজার মো. শরিফ খান টিবিএসকে বলেন, 'টিকিট সিস্টেম হওয়ায় ভালো হয়েছে। সবাই মানলে সুবিধা। কিন্তু কেউ মানলো আবার কেউ মানলো না এতে আমাদের (পরিবহন শ্রমিকদের) ক্ষতি হবে।'
বিহঙ্গ পরিবহনের সুপারভাইজার ইয়াসিন হোসেন কাছে পজ মেশিন থাকলেও তিনি আগের নিয়মে ভাড়া কাটছিলেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমি কিছুক্ষণ আগে মেশিন পেলাম। কিভাবে ভাড়া কাটবো সেটা তো জানা নেই। কালকে থেকে মেশিনে কাটবো।'
যাত্রী নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পজ মেশিন থেকে যাত্রীদের টিকিট প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে বাসের ভেতরেই।
মালিক সমিতি জানিয়েছিল প্রিন্ট করা এই টিকিটে কোন স্টপেজ থেকে কোথায় যাবেন সেই গন্তব্য, দূরত্ব ও ভাড়ার পরিমাণ লেখা থাকবে। সেরকম না থাকায় হতাশ যাত্রীরা।
ই-টিকেট সেবা দিতে প্রত্যেক বাসে অতিরিক্ত একজন স্টাফ নিয়োগ দেয়ার কথা কিন্তু তা দেখা যায়নি অধিকাংশ বাসেই।
মিরপুর ১০ থেকে নিয়মিত যাতায়াতকারী শর্মিলা দাস টিবিএসকে বলেন, 'শিকড় পরিবহনে উঠে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে কিন্তু কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া ১০ থেকে ১২ টাকা আসার কথা। তাদের কাছে ই-টিকেটিং এর মেশিন থাকলেও এনালগ সিস্টেমে ভাড়া নিয়েছিল।'
শ্যাওড়াপাড়া থেকে নিউ মার্কেটে যাতায়াতকারী সেফটি বাসের বাসিন্দা আবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ই-টিকেটিং এর মাধ্যমে ২৭ টাকা ভাড়া রাখা হয়েছে। আগে ৩৫ টাকা ভাড়া রাখতো। এমন সিস্টেমে আগের থেকে ভোগান্তি কম।'
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'ই-টিকেটিং সব ক্ষেত্রে চালু হলে যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া প্রদান করা থেকে মুক্তি পাবে। আমরা চাইবো এটি একটি দায়সারা কিংবা লোক দেখানো প্রকল্প না হয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে। আমরা ই-টিকেটে চারটি তথ্য চাই- বাসের নাম, কোথা থেকে উঠলাম আর কোথায় নামলাম, দূরত্ব কতো এবং ভাড়া কতো।'
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, 'আমাদের প্রস্তুতির সময় সব কোম্পানিই বলেছিল তাদের মেশিনসহ সব রেডি কিন্তু শনিবার রাতে কিছু কোম্পানি জানায় তারা এখনও মেশিনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। বিষয়গুলো আমরা সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছি। যারা নির্দেশনা মানছে না তাদের বিষয়গুলোও আমরা নোট করছি। আস্তে আস্তে সব ডেভেলপ হবে।'
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর, পরিবহন মালিকরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহযোগিতায় ঢাকার আটটি বাসে ই-টিকেটিং চালু করে।
সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মতে, ডিজিটাল ব্যবস্থা গণপরিবহন খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। ই-টিকেটিংয়ের কারণে যাত্রীদের কাছে ভাড়ার প্রমাণ থাকবে আর মালিকরাও জানতে পারবে কতজন যাত্রী গাড়িতে উঠেছে।