হাইপারসনিক ও সুপারসনিক উভয় ধরনের মিসাইল উৎক্ষেপণে সক্ষম এমন লঞ্চ ব্যবস্থা তৈরি করছে রাশিয়া
নতুন একটি সমুদ্র-ভিত্তিক মিসাইল উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে রাশিয়া। হাইপারসনিক জিরকন মিসাইলের পাশাপাশি পি-৮০০ অনিক্স সুপারসনিক মিসাইলও উৎক্ষেপণ করতে পারবে এটি। রাশিয়ান সংবাদসংস্থা তাস-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত এক তথ্যসূত্রের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে তাস। মূলত এ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থাটি জিরকন হাইপারসনিকের জন্য তৈরি করা হলেও নতুন আপগ্রেডেশনের কারণে এখন থেকে এটি অনিক্স মিসাইলও উৎক্ষেপণ করতে পারবে।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনা নিয়ে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি তাস।
ব্যাশ্চন কোস্টাল মিসাইল লঞ্চ সিস্টেম ও পানির নিচের ক্যারিয়ারের মাধ্যমে অনিক্স মিসাইলগুলো সাধারণত উৎক্ষেপণ করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে কিঞ্জাল হাইপারসনিক মিসাইলের পাশাপাশি রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনে অনেকগুলো ব্যাশ্চন-পি মিসাইলও নিক্ষেপ করেছিল।
এর আগে গত মাসে ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছিল, জিরকন মিসাইলের উপকূলীয় সংস্করণের জন্য রাশিয়া একটি ভ্রাম্যমাণ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। নতুন এ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ব্যাশ্চন-পি সিস্টেম থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য পি-৮০০ অনিক্স মিসাইলও নিক্ষেপ করতে পারবে।
পি-৮০০ অনিক্স একটি উচ্চ-সুপারসনিক জাহাজ-বিধ্বংসী মিসাইল। নতুন এ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় হাইপারসনিকের পাশাপাশি অনিক্সের মতো অন্যান্য সুপারসনিক মিসাইলও উৎক্ষেপণ করা যাবে।
জিরকন মিসাইলের গতি মাক ৮, অন্যদিকে অনিক্স মিসাইলের গতি মাক ২.৫।
ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্রাহ্মোস মিসাইল পি-৮০০ অনিক্সের ওপর ভিত্তি করে বানানো। ভবিষ্যতে ব্রাহ্মোস হাইপারসনিক মিসাইলও তৈরি করা হতে পারে। রাশিয়ার এ নতুন উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতও ভবিষ্যতে ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ও হাইপারসনিক মিসাইলের জন্য একক উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
অনিক্স মিসাইলগুলো আগে থেকে ঠিক করে রাখা ফ্লাইটপাথ ধরে চলার জন্য কুখ্যাত। এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও এড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। এছাড়া এটির 'ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট' গাইডেন্স ব্যবস্থার মতো কাটিং-এজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ফরেইন মিলিটারি স্টাডিজ অফিসের তথ্যমতে, অনিক্স মিসাইলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হচ্ছে এর গাইডেন্স ব্যবস্থা। এটি অন্য মিসাইলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায় এবং এটি টার্গেটর গুরুত্ব অনুযায়ী আক্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর অবশিষ্ট অনিক্স মিসাইলগুলো অন্যান্য জাহাজেও আক্রমণ চালাতে পারে। এজন্য কোনো লক্ষ্যবস্তুতেই একের বেশি মিসাইল ব্যবহার করা হয়না।
যদিও এক লঞ্চার থেকে সুপারসনিক ও হাইপারসনিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কি উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে এ প্রযুক্তি নির্মাণের মাধ্যমে দেশটি নিজেদের ফায়ারপাওয়ারকে আরও বহুমুখী করে তুলবে।
রাশিয়ার হাইপারসনিক মিসাইলে অগ্রগতি
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবারের মতো রাশিয়া এর জিরকন হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষা করে। দেশটির নর্দার্ন ফ্লিটের পারমাণবিক শক্তিচালিত সেভেরোদভিন্সক সাবমেরিন থেকে এ মিসাইলের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়।
রাশিয়ার ছয়টি কৌশলগত অস্ত্রের একটি জিরকন। এটিকে 'মহাস্ত্র' হিসেবেও ডাকা হয়। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রথম এ মিসাইল প্রকাশ্যে আনেন।
এ মিসাইলটি মার্কিনীদের সবচেয়ে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। এটির সামনের দিকের বায়ুচাপ একটি প্লাজমা ক্লাউড তৈরি করে যেটি বেতার তরঙ্গকে আটকে দেয়। এর ফলে উচ্চগতির কারণে এ মিসাইল রাডারের চোখে প্রায় অদৃশ্য থাকে।
হাইপারসনিক মিসাইলগুলো শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দ্রুতিতে ছুটতে সক্ষম। আর এগুলো কোন পথে উড়ে যাবে তাও অনিশ্চিত থাকে। ফলে এগুলোকে ইন্টারসেপ্ট করাটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
রাশিয়া প্রথম কোনো দেশ হিসেবে বর্তমান যুদ্ধে ইউক্রেনে কিঞ্জাল হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করেছে। এছাড়া এটির মিগ-৩১ যুদ্ধবিমানগুলোকে কিঞ্জাল পেটে নিয়ে ইউক্রেনের আশেপাশে ঘুরতে অনেকবারই দেখা গেছে।