মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও রাশিয়ার নতুন সফটওয়্যারের কাছে ক্ষমতা হারাবে মার্কিন হিমার্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হালকা রকেট লঞ্চার সিস্টেম হিমার্স শীতকালের মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও রাশিয়ার আপডেট করা সফটওয়্যারের কারণে খুব সহজেই কাবু হয়ে পড়বে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্র এম১৪২ হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমার্স) তৈরির জন্য লকহিড মার্টিনের সঙ্গে ৪৩১ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের চুক্তি করেছে। এদিকে রাশিয়া দাবি করেছে, 'খেলা বদলে দেওয়া' এ হিমার্স রকেট লঞ্চার ব্যবস্থা শীঘ্রই এর প্রভাব আর জৌলুশ হারাতে পারে।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে হিমার্স সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত গ্রীষ্মে মার্কিন হিমার্স পায় ইউক্রেন। এরপর থেকে কিয়েভকে কখনো হতাশ করেনি এ রকেট লঞ্চার ব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ২০ ইউনিট হিমার্স সরবরাহ করেছে বলে শোনা গেছে। ভবিষ্যতে আরও হিমার্স ইউক্রেনে পাঠাবে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি এ দেশটি।
তবে এখন বোধহয় পাশার দান ওল্টানোর কোনো উপায় পেয়ে গেছে রাশিয়া। জাপোরিঝিয়া এলাকার রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের এক কমান্ডার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী নতুন একটি সফটওয়্যার পেয়েছে যেটির মাধ্যমে হিমার্স মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের মিসাইলকে 'অনায়াসে' ভূপাতিত করা যাবে।
রাশিয়ান থিংক ট্যাংক এমজিআইএমও সেন্টার ফর মিলিটারি-পলিটিক্যাল স্টাডিজ-এর পরিচালক অ্যালেক্সি পডবেরেজকিন বলেন, "হিমার্স রকেটগুলো আকারে বেশ লম্বা। এগুলোকে ধ্বংস করার জন্য যেকোনো আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলকে এর ওয়্যারহেডে নিখুঁতভাবে আঘাত করতে হবে। হিমার্স যেহেতু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে নিক্ষেপ করা হয়, তাই এর যাত্রাপথ সঠিকভাবে হিসেব করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।"
হিমার্সের যাত্রাপথ ঠিকভাবে হিসেব করা না গেলে আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল এটির ওয়্যারহেডে আঘাত করতে ব্যর্থ হবে। রাশিয়া যে নতুন সফটওয়্যার আপডেটের কথা জানিয়েছে, তার মাধ্যমে হিমার্সের যাত্রাপথ নিখুঁতভাবে গণনা করা সম্ভব। এর ফলে এটি ধ্বংস করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সফল হবে রাশিয়া।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছিল, হিমার্স থেকে নিক্ষিপ্ত একটি অবিস্ফোরিত মিসাইল হাতে পেয়ে সেটির ওপর পরীক্ষানীরিক্ষা করেছে রাশিয়া।
হিমার্সের ধ্বংসযজ্ঞের সমাপ্তি?
ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভেটেরান ও সামরিক বিশ্লেষক বীজেন্দর কে. ঠাকুর বলেন, শরৎ ও শীতকালে পূর্ব ইউরোপের কোনো যুদ্ধে হিমার্স ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত নয়।
রাশিয়া বিশেষজ্ঞ এ বিশ্লেষক বলেন, ইউক্রেন বাহিনী শীতের শুরুতে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় নানা সমস্যায় পর্যুদস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন বাহিনী বর্তমানে পত্রহীন বৃক্ষের কারণে শত্রুর চোখের আড়ালে অবস্থান করতে না পারা, বরফ ও কাদার মধ্যে চলতে সমস্যা, বিশেষ জ্বালানি ও লুব্রিকেন্টের অভাব ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
অতি কার্যকরীভাবে রকেট নিক্ষেপ করে দ্রুত গাছপালা বা বন-জঙ্গলের আড়ালে আশ্রয় নিতে পারে হিমার্স। কিন্তু শীতকাল শুরু হওয়ায় এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনে পর্যাপ্ত সবুজ নেই। ফলে হিমার্সের এখন আড়ালের বদলে উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান নিতে হবে।
আর এ কারণে এখন আগের চেয়ে দ্রুততর সময়ে হিমার্সকে আকাশ থেকে শনাক্ত করতে পারবে রাশিয়ার ড্রোন, স্যাটেলাইট, বা বোমারু বিমান।
রাশিয়া বর্তমান যুদ্ধে টুপোলেভ টু-২১৪আর নজরদারি বিমান ব্যবহার করছে বলে কিছু প্রতিবেদনে জানানো হয়েছ। এটিতে কাটিং-এজ প্রযুক্তির অপটিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং রাডার ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া নজরদারির জন্য দেশটি স্যাটেলাইটের ব্যবহারও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর দেশটি এর নিজস্ব গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম গ্লোনাস-এ নতুন আরেকটি যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করেছে।
এর আগে গত মাসে রাশিয়া হিমার্সের বিরুদ্ধে এর নিজস্ব মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) টর্নেডো-এস রণক্ষেত্রে নামিয়েছে বলে জানিয়েছিল দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস।
রাশিয়ার নজরাদারি ও মিসাইলের জালে বারবার আটকা পড়ায় হিমার্স এখন কম ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। রাশিয়া এমন ড্রোন ব্যবহার করছে যা আকাশ থেকে ভূমিতে বরফ ও কাদার মধ্যে হিমার্স-এর রেখে যাওয়া চাকার দাগ শনাক্ত করতে সক্ষম।
বীজেন্দর কে. ঠাকুর বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান, ইরাক, ও সিরিয়ায় হিমার্স ব্যবহার করেছে। এটির বালু ও উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর আগে এটি কখনো মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ব্যবহার করা হয়নি। আর রাশিয়ায় শীতের সময় সাধারণত এ ধরনের তাপমাত্রাই বিরাজ করে। অনেক সময় ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হলে এ শীত আরও তীব্রভাবে জেঁকে বসে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চেষ্টা করছে হিমার্সকে আরও মারাত্মক অস্ত্রে পরিণত করতে। পেন্টাগন ইউক্রেনকে সস্তা, ছোট, ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম এমন গ্রাউন্ড-লঞ্চড স্মল ডায়ামিটার বম (জিএলএসডিবি) সরবরাহ করার একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে। এ বোমাগুলো পেলে ইউক্রেন বাহিনী তাদের হিমার্স লঞ্চ সিস্টেমের মাধ্যমেই এগুলো ব্যবহার করতে পারে।