বিশ্বকাপ-পরবর্তী কোচদের ভাগ্য: কে থাকছেন? কে বিদায় হচ্ছেন?
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ইতিমধ্যেই আট দলে নেমে এসেছে। যার মানে হচ্ছে কাতার থেকে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে বাকি ২৪ দল। এবং এই ফিরে যাওয়া দলগুলোর ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
বিশ্বকাপের সময়ে ম্যানেজার এবং কোচ পরিবর্তন হওয়া বেশ স্বাভাবিক। সাধারণত জাতীয় দলগুলো টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করেই কোচকে নিয়োগ দেয়, বিশেষ করে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে। টিকে থাকা শেষ ৮টি দলের মধ্যে ৫টি দলের কোচই (ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ক্রোয়েশিয়া) দ্বিতীয় চার-বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই চুক্তি সাধারণত টুর্নামেন্টের পরেই শেষ হয়ে যায়।
ইতিমধ্যেই বাদ পড়ে যাওয়া জাতীয় দলগুলোর অনেকগুলোই জাতীয় দল থেকে তাদের কোচকে বহিষ্কার করেছে, অনেকে রয়ে গিয়েছে এবং কারো কারো ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দেখে নেওয়া যাক, বড় দলগুলোর মধ্যে কারা কারা থাকছেন আর কারা কারা চলে গিয়েছেন।
বাদ পড়েছেন যারা
লুইস এনরিকে, স্পেন
শেষ ১৬তে হতাশাজনকভাবে পেনাল্টি শ্যুটআউটে হেরে যাওয়ার পর স্পেন কোচের পরিণতি নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে টানা ৩ বার ৩টি বড় টুর্নামেন্ট থেকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ছিটকে পড়লো লা রোজারিওরা। ২০১০ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের পর স্পেনের বিশ্বকাপ রেকর্ড ৩ জয়, ৩ ড্র, ৫ হার, যার মধ্যে জয়ের তিনটিই এসেছে অস্ট্রেলিয়া, ইরান এবং কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচেই ৭-০ গোলে কোস্টা রিকাকে বিধ্বস্ত করার পর সবাই ভেবেছিল স্পেনের আকাশের কালো মেঘ দূর হতে চলেছে। তবে পাস আর পজেশনের চাপের সাথে ফলাফল তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি।
স্পেনের বর্তমান দল তারূণ্যে ভরপুর। আর তাই স্পেনের যুব দলের কোচ লুইস দি লা ফুয়েন্তের ঘাড়ে স্পেন জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলানোর ভার পড়েছে।
টাটা মার্টিনো, মেক্সিকো
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই মার্টিনো এবং মেক্সিকোর মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ দিকে মোড় নিয়েছিল, এবং বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে মেক্সিকো বাদ পড়ার সাথেই সাথেই টাটা মার্টিনো কোনরকম দুঃখ ছাড়াই ঘোষণা দিলেন তার দায়িত্ব ছাড়ার কথা। মেক্সিকোর বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয়েছিল টানা ৭ বার রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার ব্যর্থতা ঘোচাতে, তবে সেটা একটূ ভিন্নভাবেই হলো, এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যেতে হলো 'এল ট্রাই'দের।
২০২৬ সালে সহযোগী স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে মেক্সিকো। আর সেজন্য পুরো দলকে ঢেলে সাজাতে হবে তাদেরকে। সেজন্য খুব দ্রুত নতুন কোচ নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে কনকাকাফ অঞ্চল থেকে একমাত্র ফিফাস্বীকৃত শিরোপা (কনফেডারেশন্স কাপ) জেতা দেশটিকে।
রবার্তো মার্টিনেজ, বেলজিয়াম
২০১৬ সালে মার্ক উইলমটসের কাছ থেকে বেলজিয়ামের দায়িত্ব নেওয়া বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মকে হাতে পেলেও তাদেরকে নিয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারেননি মার্টিনেজ। উপরন্তু কেভিন ডি ব্রুইনা রেড ডেভিলদের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন, 'আন্তর্জাতিক মানের খেলার জন্য বেশি বুড়ো আর খাপছাড়া' হিসেবে। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে কানাডার কাছ থেকে অতিকষ্টে জয় নিয়ে ফেরা, ক্রোয়েশিয়ার সাথে কোনোমতে ড্র করা আর মরক্কোর কাছে গো হারা এই পারফরম্যান্স বেলজিয়ামের কাছ থেকে যা আশা করা হয়েছিল তার তুলনায় খুবই বাজে।
বেলজিয়ামের পারফরম্যান্স দেখিয়ে দিল বিশ্বকাপে ফিফা র্যাংকিং কোনো বিরাট কিছু নয়। বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বেলজিয়াম তিন ম্যাচে তেমন আহামরি কোনো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। মার্টিনেজের স্থলাভিষিক্ত ম্যানেজার যিনি হবেন তার সামনে দল ঢেলে সাজানোর সুযোগ থাকলেও বেলজিয়ামের গায়ে আবারো টুর্নামেন্ট ফেবারিট তকমা লাগতে বহু সময় লেগে যাবে।
অটো আডো, ঘানা
উরুগুয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিল দ্য ব্ল্যাক স্টার্সরা। নিজেরা গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়লেও লা সেলেস্তেদেরকে সাথে নিয়ে ডুবেছে তারা। আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সের পর মিলোভান রাজেভাক দায়িত্ব ছাড়লে সাময়িক বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আডো। তবে তার পুনরায় চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ট্যালেন্ট কোচ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি। দায়িত্ব ছাড়ার আগে তিনি তাই বলেই গেলেন, "যেদিন আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম, সেদিন বলেছিলাম যদি আমরা বিশ্বকাপে যেতে পারি, তবে আমি বিশ্বকাপের পরেই দায়িত্ব ছেড়ে দেব, চ্যাম্পিয়ন হই বা না হই।" চ্যাম্পিয়ন না হলেও তাই তাদেরকে নতুন নেতা খুঁজতেই হতো এবং সেটিই হচ্ছে।
থাকছেন যারা
হান্সি ফ্লিক, জার্মানি
জার্মান ফুটবল ফেডারেশনে পরিবর্তন আসলেও জাতীয় দলের মানেজার পদে পরিবর্তন আসছে না। বুধবার জার্মান ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফ্লিক ম্যানেজার পদে বহাল থাকবেন, পরপর টানা দুইবার গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানি বাদ পড়া সত্ত্বেও। রাশিয়ায় হেরে যাওয়ার পর জোয়াকিম ল্যোকে তার চাকরি হারাতে হয়নি, এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে ২০২৪ সালে ইউরো আয়োজন করতে চলেছে জার্মানি, তাই ফ্লিককে আগামী টুর্নামেন্টে ভালো করার চাপ থাকবে। তারচেয়ে কম কিছু হলেই হয়তো তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হবে।
"আমরা একটা দল হিসেবে কাতারে যা দেখিয়েছি তার চেয়েও বেশি অর্জন করতে সক্ষম। আমরা বেশ বড় একটা সুযোগ হারিয়েছি। আমরা এখান থেকে শিক্ষা নেবো। আমরা ২০২৪ ইউরোর জন্য পুরো জার্মানিকে আমাদের জাতীয় দলের পেছনে দেখতে চাই," বলে জানিয়েছেন হান্সি ফ্লিক।
রব পেজ, ওয়েলস
রায়ান গিগসের পর ওয়েলস জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন পেজ, একেবারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। তারপর ৬৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার ওয়েলসকে নিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে এসেছিলেন, তবে এটুকুই। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পর সবার শেষ হয়ে গ্রুপপর্ব শেষ করেছেন। তবে এখনো আশা করছেন ২০২৪ সালের ইউরো এবং ৪ বছর ৪৮ দলের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার।