১৫-২০ বছরের মধ্যে আফ্রিকান দল বিশ্বকাপ জিতবে বলে নিশ্চিত মরক্কো কোচ
মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই বলেছেন তার খেলোয়াড়রা গর্ব নিয়ে কাতার ছাড়বে, বিশ্বকাপের প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনাল খেলার পর। তিনি বিশ্বাস করেন আগামী দুই দশকের মধ্যেই আফ্রিকার কোনো দেশ বিশ্বকাপ জয় করবে।
শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হারে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। তবে রেগরাগুই তারপরেও নিজের তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশংসা করেছেন, জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে যা আশা করেছিলে ঠিক তা-ই পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, স্পেন এবং পর্তুগালের মতো বড় বড় দলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠা।
"আমরা চেয়েছিলাম আমাদের সমর্থকদের জন্য আমরা খুশির কারণ হবো, এবং আমরা সেটি করতে পেরে খুশি। আমরা বিশ্বের সেরা চারটি দলের একটি। আমরা সবাইকে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিয়েছি, আমরা কখনোই হাল ছাড়িনি। ক্রোয়েশিয়াকে অভিনন্দন, তারা তৃতীয় স্থানের যোগ্য। আমরা এখনো একটু তরুণ দল যাদের অনেক কিছু শেখা বাকি।"
রেগরাগুই জানান, ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হারার আগে কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভালো রক্ষণভাগ ধরে রাখা দল মরক্কোর খেলোয়াড়রা টানা ৭ ম্যাচ খেলার পর শারীরিকভাবে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন: "অবশ্যই, পরপর দুই ম্যাচের এই হারে আমি কিছুটা হতাশ, তবে আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব। শারীরিকভাবে এটা বেশ কঠিন ছিল, আমাদের খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, এটা বেশ টানটান ছিল। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সমর্থকদের গর্ব আরেকটু বাড়াতে, এটুকুই।"
ক্রোয়েশিয়া এবং বেলজিয়ামের মতো দল থাকা সত্ত্বেও গ্রুপপর্বে সবার ওপরে থেকেই শেষ করে তারা। তারপর শেষ ষোল এবং আটে একেএকে হারায় স্পেন এবং পর্তুগালকে। তাদের এই ঐতিহাসিক জয়রথ থামে সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে। তবে রেগরাগুই আশা করছেন তার দলের খেলোয়াড়েরা তাদের এই ফর্ম ধরে রাখবে আগামী বছরের আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্সেও: "আমি খেলোয়াড়দেরকে বলেছি, তোমরা যদি ইতিহাসের অংশ হতে চাও তবে তোমাদেরকে আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স জিতে দেখাতে হবে। আমাদেরকে অন্তত আমাদের মহাদেশে আধিপত্য বজায় রাখতে হবে।"
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি আফ্রিকার ৫টি দেশের একটিও। তাই মরক্কোর এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আফ্রিকার বাকি দেশগুলোর জন্যও বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে: "আমার মনে হয় আমরা আমাদের শক্তিমত্তা দেখাতে পেরেছি। দেখাতে পেরেছি আফ্রিকান দলগুলো বিশ্বের সেরা দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে প্রস্তুত। আমরা চার বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার পর বুঝতে পারবো আমরা এই বিশ্বকাপে কত বড় অর্জন করেছি। তবে সেবার আমাদের ওপর সবার আশা আরও বেশি থাকবে, আমাদেরকে ঘিরে সবার প্রত্যাশা থাকবে। এটা স্বাভাবিক। আমরা একটা বেশ বড় অর্জন করেছি এবং আমরা আবার এটা করতে চাই। এটা মোটেই সহজ হবে না, তবে ওটাই লক্ষ্য থাকবে।"
"অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে থাকবেন এবং আশা করা যায় যে আমরা আরও শিখবো এবং আরও বড় হবো। আমরা আফ্রিকায় একটি ফুটবল সংস্কৃতি গড়ে তুলবো, যেটি টিকে থাকবে। আমরা আফ্রিকার বাচ্চাদেরকে স্বপ্ন দেখাতে শিয়েছি, যে তারা ফুটবলার হতে পারে, এবং বিশ্বকাপ পর্যন্ত যেতে পারে। এটা অমূল্য।"
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে ৪৮টি দল। আফ্রিকার দেশগুলোর জন্যও স্লট বেড়ে দাঁড়াবে ৫টি থেকে ৯টিতে: "নয়টি দল নিয়ে, আমরা আরও দ্রুত শিখতে পারবো। আমি বিশ্বাস করি আর ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে আফ্রিকার একটি দেশ বিশ্বকাপ জিতবে। আমাদের একটি ধাপই যাওয়া বাকি ছিল। আমাদের ওটার ওপরেই নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে, আকাঙ্ক্ষা আর পরিশ্রম দিয়ে। এই ডিএনএ কেবল মরক্কোর জন্য নয়, পুরো মহাদেশের জন্য।"
সূত্র: আল জাজিরা