চোখের ছানি অস্ত্রোপচারে অর্থায়নের মাধ্যমে ১০০০ মানুষের অন্ধত্ব দূর করেছেন এই ইউটিউবার
ইউটিউবে সবাই তাকে মি. বিস্ট নামে চেনে। জনপ্রিয় এই ইউটিউবারের চ্যানেলে ঢুকলেই দেখা যায় নানা রকম মজার ভিডিও কন্টেন্ট সেখানে রয়েছে। ভিডিওগুলোর শিরোনাম যে বেশ চটকদার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই… 'বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার করা', 'প্রথমবার ব্যাংক ডাকাতি করা' কিংবা 'ত্রিশ দিন না খেয়ে থাকা'র মতো শিরোনাম দিয়ে ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি। কিন্তু এই মজার মানুষটিই যে প্রায় এক হাজার মানুষকে পৃথিবীটাকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করছেন- সে খবর অনেকেরই অজানা!
ইউটিউব সুপারস্টার মি. বিস্টের আসল নাম জিমি ডোনাল্ডসন। অন্ধ কিংবা চোখে খুব কম দেখতে পান- এমন অন্তত এক হাজার মানুষের চোখের ছানি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করার খরচ দিচ্ছেন জিমি। বলে রাখা ভালো, তিনি শুধু তাদেরই খরচ দিচ্ছেন যাদের অস্ত্রোপচার করানোর সামর্থ্য নেই।
শনিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে জিমি ওরফে মি.বিস্ট বলেন, "আমরা এক হাজার মানুষের অন্ধত্ব দূর করতে কাজ করছি।" তার এই ভিডিওটি রোববার বিকেল পর্যন্ত ৩২ মিলিয়নের বেশি ভিউ পেয়েছে।
ভিডিওটিতে ওইসব রোগীদের আগের অবস্থা এবং স্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি লাভের পর তাদের প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, রোগীদের মধ্যে অনেককেই তিনি নগদ টাকা এবং অন্যান্য উপহারও দিয়েছেন।
জেফ লেভেনসন নামের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন জিমির সঙ্গে এ প্রজেক্টে কাজ করেছেন। ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলেতে প্রথম দফার অস্ত্রোপচারগুলো লেভেনসনই করেছেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে 'গিফট অব সাইট' প্রোগ্রামটি সমন্বয় করছেন জেফ লেভেনসন। চোখে ছানির কারণে আইনত অন্ধ হিসেবে বিবেচিত, এমন রোগীদের বিনামূল্যে ছানির অস্ত্রোপচার করা হয় এই প্রোগ্রামের আওতায়।
পোস্ট করা ভিডিওতে জেফ লেভেনসন এই অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "বিশ্বে যত অন্ধ মানুষ আছে, তাদের অর্ধেকেরই অন্ধত্ব দূর করার জন্য প্রয়োজন মাত্র ১০ মিনিটের একটা অস্ত্রোপচার।"
সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে লেভেনসন জানান, তার নিজের চোখের ছানি দূর করার অস্ত্রোপচারের পর তিনি এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, "আমার নিজের চোখের ছানি অস্ত্রোপচারের কয়েক সপ্তাহ পর চোখে স্পষ্ট দেখতে পেয়ে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, এই পৃথিবী এত সুন্দর ও রঙিন! কিন্তু এরপর আমি জানতে পারলাম যে বিশ্বে খুব সম্ভবত ২০০ মিলিয়ন মানুষ আছে যারা সম্পূর্ণ অন্ধ কিংবা প্রায় অন্ধ এবং তাদের কাছে অস্ত্রোপচার করানোর টাকাও নেই। বিষয়টা জেনে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম।"
এরপর একদিন ইউটিউবার জিমি ডোনাল্ডসনের দলের কাছ থেকে ফোন কল পান জেফ। এই চক্ষু বিশেষজ্ঞের ভাষ্যে- "আমি কখনো মি.বিস্টের নামই শুনিনি। তাই আমি সাথেসাথেই ফোন রেখে দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে আমি ফোনটা রেখে দেইনি!"
প্রজেক্টের শুরুতে তারা আশ্রয়কেন্দ্র ও বিনামূল্যের ক্লিনিকগুলোতে কল দিতে শুরু করেন এবং জ্যাকসনভিলে এলাকার আশেপাশের রোগীদের তালিকা তৈরি করেন- যাদের ছানি অপসারণ করা দরকার কিন্তু অর্থাভাবে পারছেন না। আস্তে আস্তে ৪০ জন রোগীর একটি দল তৈরি হয়ে যায় এবং জেফ লেভেনসন মাত্র একদিনে তাদের সবার অস্ত্রোপচার করেন। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেদিন অস্ত্রোপচার করিয়েছেন তিনি।
লেভেনসন জানান, রোগীরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে কেউ নিজে থেকে এগিয়ে এসে তাদের চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করিয়ে দেবে।
এছাড়াও, লেভেনসন এই ইউটিউবারের দলকে সি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি অলাভজনক সংস্থা্র সাথে যুক্ত করে দেন। লেভেনসন নিজেই এখানে চীফ মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। এই অলাভজনক সংস্থাটি বিশ্বের নানা প্রান্তের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। এই সংস্থার মাধ্যমেই জিমি ডোনাল্ডসন আরও অনেক রোগীদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, রোগীরা জ্যামাইকা, হন্ডুরাস, নামিবিয়া, মেক্সিকোসহ আরও কিছু দেশে এই অস্ত্রোপচারের সেবাটি নিচ্ছেন।
লেভেনসন জানান, তার প্রত্যাশা যে এই ভিডিও এবং ডোনাল্ডসনের উদারতার গল্প আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে এবং মানুষ বুঝবে যে সম্মিলিত উদ্যোগে মানুষের অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব।
তিনি বলেন, "মি. বিস্ট যদি এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাড়া ফেলতে পারেন, আর আমরা যদি সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পাই, তাহলে আমরা বিশ্বের অর্ধেক মানুষের অন্ধত্ব দূর করতে পারব। আর এতে খুব বেশি খরচও লাগে না, কিন্তু এ উদ্যোগের ফলে মানুষ একটা বাধা কাটিয়ে আরও সম্ভাবনাময় জীবনযাপন করতে পারে।"
সূত্র: সিএনএন