ছোট্ট একটি বিমানে বিশ্বজুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে কানাডার এ পরিবার
বিশ্বের চারদিকে পরিবার নিয়ে এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিমান নিয়ে ঘুরে বেড়ানো অনেকের কাছে কেবল একটি স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু কানাডার পোর্টার্স পরিবার এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছে। খবর সিএনএন-এর।
কানাডার পাঁচ সদস্যের এ পরিবারটি ইতোমধ্যে বিমানে চড়ে টানা ১৪ মাস ধরে পৃথিবী ঘুরেছেন। এ পরিবারের সদস্যরা হলেন বাবা ইয়ান পোর্টার, মা মিশেল পোর্টার, তাদের দুই মেয়ে সামান্থা (২১) ও সিডনি (১৮), এবং ১৫ বছরের ছেলে ক্রিস্টোফার।
২০২২ সালের ১৫ জুন তারা ভ্যাংকুভার থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ইয়ান পোর্টার পেশায় একজন পাইলট, তার দুই মেয়েও দক্ষ পাইলট। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২০টি দেশ ঘোরা হয়ে গেছে তাদের।
পোর্টার ফ্যামিলির বাহনটি অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি করা একটি জিপসেরো জিএ৮ এয়ারভ্যান মডেলের একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট আধুনিক বিমান। বিমানটিকে তাদের ভ্রমণের জন্য আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইয়ান।
পাঁচ লাখ ডলার দিয়ে কেনা বিমানটি আটজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারে। ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার বেগে টানা পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এটি।
ইয়ান মূল পাইলট হিসেবে বিমানটি পরিচালনা করেন, অন্যদিকে দুই মেয়ে সামান্থা ও সিডনি কো-পাইলটের দায়িত্ব পালন করেন। মিশেলে দেখাশোনা করেন হেলথ ডকুমেন্ট ও ভিসা ইত্যাদি বিষয়ের।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬০টি বিভিন্ন বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে এ পরিবার। ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের কোনো পূর্বনির্ধারিত বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই বলে জানান ইয়ান।
পোর্টার পরিবারের উদ্দেশ্য, এ ভ্রমণের মাধ্যমে এসওএস চিলড্রেন'স ভিলেজেস নামক একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার জন্য এক মিলিয়ন ডলারের তহবিল উত্তোলন করা। এ দাতব্য সংস্থাটি বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে মা-বাবার যত্ন না পাওয়া ও ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের শিশুদের সহায়তা করে।
ভ্রমণের সময় এ পরিবারটি থেকেছেন বিভিন্ন ক্যাম্প সাইট, হোস্টেল, হোটেল ইত্যাদিতে। তাদের এ ভ্রমণ অনেকেই অনুসরণ করছেন — মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গেও থেকেছেন পোর্টারেরা। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ক্রিসমাস কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের।
এ ভ্রমণে আমাজন বনের দাবানল সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন তারা পাঁচজন। ইয়ান জানান, ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে তারা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা উড়েছিলেন, দেখেছিলেন কীভাবে চারদিক আগুনে গিলে খাচ্ছে। এটিকে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
তবে তাদের এ যাত্রা সম্পূর্ণভাবে ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল না। সারাক্ষণ ভ্রমণের ওপর থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন বিমানবন্দরের লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা, শরীরস্বাস্থ্য ঠিক রাখা ইত্যাদি দিকেও মনোযোগ রাখতে হয় তাদেরকে।
বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তাদের ভ্রমণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া ছোট একটি বিমানের বিভিন্ন দেশে উড্ডয়নের অনুমতি ও ভিসা ইত্যাদিও বেশ ঝক্কির কাজ।
ইয়ান জানান, কোনো কোনো বিমানবন্দরে তাদের সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে তিন-চার ঘণ্টাও লেগে যায়। মিশেল বলেন, এভিয়েশন কম্যুনিটি তাদের এ ভ্রমণের শুরু থেকেই যথেষ্ট সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করেছেন।
বর্তমানে এ পরিবারটি বেলিজে আছেন। এরপর তাদের সম্ভাব্য গন্তব্য গুয়াতেমালা হতে পারে। তারপর তারা যেতে পারেন মেক্সিকোতে। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এ অভিযাত্রী দলটির গ্রিনল্যান্ড আউসল্যান্ড হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
ইউরোপ থেকে মিশর. মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ভারত, জাপান ইত্যাদি দেশও ভ্রমণ করবেন তারা। অবশ্য তারা জানিয়েছেন, তাদের এসব গন্তব্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হবে।