নগদ লেনদেনের সীমা বেঁধে দেওয়ায় ‘ট্যাক্স কাট’ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ব্যবসায়ীরা
নগদ অর্থে লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা চলতি অর্থবছরের বাজেটে বর্ণিত কর্পোরেট কর হ্রাসের (ট্যাক্স কাট) সুবিধা নিতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলো।
বুধবার (১ মার্চ) এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকের সময় সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তাদের যুক্তি, নগদ লেনদেনের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা বড় ব্যবসার প্রয়োজনের তুলনায় কম। এসব ব্যবসায়ের ব্যয় আরোপিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন তারা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, "সরকার গত বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২.৫ শতাংশ কমিয়ে দিলেও কোম্পানিগুলো এর সুফল নিতে পারছে না।"
তিনি সরকারকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনের শর্ত বাতিল করার এবং নগদ অর্থের ব্যবহার কমানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতির ৮০ ভাগ এখনও অনানুষ্ঠানিক; এরজন্য নগদ অর্থে লেনদেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রায়শই ব্যয় মেটাতে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ৩৬ লাখ টাকার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
পৃথক একটি বৈঠকে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এফআইসিসিআই।
সংস্থাটির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, একটি বড় কোম্পানির জন্য ৩৬ লাখ টাকা বড় কোনো অঙ্ক নয়।
"এই সীমা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভারের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা উচিত," যোগ করেন তিনি।
গত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ২.৫ শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ২০ এবং ২৭.৫ শতাংশ করা হয়।
তবে, এই সুবিধা পেতে হলে কোম্পানিগুলোকে তাদের বার্ষিক লেনদেন নগদে ৩৬ লাখ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং এর বাইরে যেকোনো পরিমাণ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতে হবে ব্যাংকিং চ্যানেল। এছাড়া, এ সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রতিটি একক লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ টাকা।
এফআইসিসিআই-এর প্রতিনিধি স্নেহাশিষ বড়ুয়ার মতে, নগদ অর্থ প্রদানের জন্য অনুমোদিত সীমা চার বছর পর ধীরে ধীরে শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে এবং প্রথম বছরে অনুমোদিত নগদ অর্থে লেনদেনের সীমা ২০ শতাংশে রাখা যেতে পারে।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, "পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর কর হার ২০ শতাংশ হলেও আমাদের দেশের বাস্তবতায় কার্যকর কর হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়ে যায়।"
সভায় এমসিসিআই মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর এবং শুল্ক সংক্রান্ত ১১৮টি প্রস্তাবসহ ব্যবসাবান্ধব বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করে।
ব্যক্তি করদাতাদের কর হার কমানো, ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণের শর্ত বাতিল, অনলাইন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং স্থানীয় শিল্প সম্প্রসারণের জন্য এনবিআরের পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন এমসিসিআই সভাপতি।
এছাড়া, জমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিবন্ধন মূল্য এবং বাজার মূল্যের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে বলেও সভায় উল্লেখ করে এফআইসিসিআই। সংস্থাটির মতে, এ কারণে অনেক অপ্রকাশিত অর্থ তৈরি হচ্ছে।