রিসাইক্লিং জলবায়ুসহ অন্য আরো অনেক বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে
প্রতিবছর পৃথিবীব্যাপী গড়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এর থেকেও বেশি পরিমাণ বর্জ্য মুক্ত পরিবেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাই প্লাস্টিক, গ্লাস, কাগজ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রিসাইকেলের জন্য বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এর আগে জানতে হবে ঠিক কোন জিনিসগুলো রিসাইকেল করা সহজতর ও অধিক কার্যকরী। খবর বিবিসির।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বিপুল পরিমাণে ইলেকট্রনিক বর্জ্য মুক্ত পরিবেশে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৫৬.৬ মিলিয়ন টন ব্যবহৃত স্মার্টফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি মুক্ত পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
শুধু ঐ এক বছরের ইলেকট্রনিক বর্জ্যগুলোর পরিমাণ এতই বেশি যে, যা পুরো ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ওজনের সমান। প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে এ ইলেকট্রনিক বর্জ্যর পরিমাণ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই বর্জ্যর পরিমাণ ৭৪ মিলিয়ন টনে পৌঁছে যাবে।
তবে পরিবেশে বর্জ্য আকারে ফেলে দেওয়া ইলেকট্রনিক এ দ্রব্যগুলো মোটেই ফেলনা নয়। বরং এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, সিলভার ও প্লাটিনিয়ামের মতো মূল্যবান সব ধাতু। জাতিসংঘের গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৭.৪ ভাগ ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেল করা হয়।
যদি এক টন ব্যবহৃত স্মার্টফোনকে রিসাইকেল করা হয়, তবে প্রায় ৭০ কেজি কপার, ১৫ কেজি লিথিয়াম, ১ কেজি সিলভার ও ২৩৫ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যেতে পারে। যা দিয়ে প্রায় ২৬ থেকে ৭৮ টি বিয়ের আংটি বানানো যাবে।
বেশিরভাগ রিসাইকেলিং প্রক্রিয়ায় বর্জ্যগুলোকে পরিশোধন করে প্লাস্টিকের মতো অযাচিত দ্রব্যগুলোকে আলাদা করে নেওয়া হয়। তাই বর্জ্যগুলো সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিককে আলাদা করার ঝামেলা নেই। কিন্তু যদি কোন বোতলে ধাতুর ক্যাপ থাকে, তবে সেটিকে আলাদা করে রিসাইকেল বিনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
রিসাইকেলিং পরিবেশের জন্য যে ইতিবাচক, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই রিসাইকেলিং প্রক্রিয়াটি অতটা সহজ নয়। কিছু রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া আবার গ্রিন হাউজ গ্যাস তৈরির জন্য দায়ী।
তবুও রিসাইকেলিং জরুরী। নতুবা প্লাস্টিকের মতো পদার্থ নতুন করে তৈরি করতে উল্টো জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়াতে হবে। যেমন এক টন কাগজ রিসাইকেল করলে প্রায় ১৭ টি গাছ থেকে তৈরিকৃত কাগজের সমপরিমাণ সাশ্রয় হবে এবং কাগজ তৈরিতে পানির ব্যবহার ৫০ ভাগ কমে যায়।
ধারনা করা হচ্ছে যে, প্রতিনিয়ত রিসাইকেল করা হলে ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ প্রায় ১১.২ গিগাটন পর্যন্ত কমে আসতে পারে। যা শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাপানের এক বছরের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের সমান।
এমনকি খাবারের বর্জ্যগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। ঘর ও রেস্টুরেন্টের প্রায় ১৭ ভাগ খাবার প্রতিবছর পচে যায় এবং তা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের এনভাইরনমেন্ট প্রোগ্রাম তথ্য মতে, নষ্ট হয়ে যাওয়া অতিরিক্ত এ খাবারগুলো বৈশ্বিক ৮ থেকে ১০ শতাংশের গ্রিন হাউজ গ্যাসের জন্য দায়ী।
নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারগুলোকে ফেলে না দিয়ে যদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খাদ্য তৈরি সংক্রান্ত কার্বন নিঃসরণ ১৩ ভাগ কমে আসতে পারে। আর অতিরিক্ত খাদ্যগুলোকে ফেলে না দিয়ে বরং অন্যকে বিতরণ করে দিলে তা আরও কার্যকরী হবে।
সূত্র: বিবিসি ফিউচার