চিকিৎসকের পরামর্শ: রোজায় সহজলভ্য খাবার দিয়েও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়ছে পুষ্টিতে। রমজানে মাসে পুষ্টি নিয়ে উদ্বেগটা আরো বেশি। তবে শুধু দামি খাবারে যে পুষ্টি থাকে তা নয়, সহজলভ্য খাবার দিয়েও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়। রমজানে সঠিক পুষ্টির জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভাস। রমজানে যা খাবেন আর যা খাবেন না-
১. রমজানে ইফতার হলো সারাদিন না খেয়ে থাকার পর একটি খাবার যা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে। সে কারণে ইফতারে খেজুরটা রাখতে হয়। খেজুরের মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকে। আমরা যখন সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখি তখন খেজুর আমাদের বডিতে খুব দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ করে।
এ বছর রোজাটা গরমে পড়েছে তাই পানি খেতে হবে। পানিশূন্যতা দূর করতে তরমুজ কার্যকর। তরমুজ এমনিতে বা জুস করে খাওয়া যেতে পারে, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। ইফতারে ফ্রুটস থেকে এনার্জি ও লিকুইডটা পাওয়া যাবে। এছাড়া ইফতারে প্রোটিন হিসেবে ডিম, মাছ বা চিকেনের আইটেম রাখা যেতে পারে। সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে ছোলা দারুণ খাবার। ছোলার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে পুষ্টিটা ভালোভাবে দেহে গৃহীত হয়।
২. কেউ যদি ছোলা, খেজুর, ডিম এ ধরণের খাবার না খান, তিনি চাইলে ইফতারে চিড়া রাখতে পারেন। যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আছে তারা মিষ্টি দই ও যাদের ওজন বেশি তারা টক দই খাবেন। দই-চিড়ার সাথে আপেল বা বাদাম কুচি করে খেতে পারে। খাবারটা যেন ব্যালান্সড হয়।
৩. আমাদের আরো কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার ইফতারে পাওয়া যায়, যেমন হালিম। হালিমে চাল, ডাল, মাংস থাকে যা একটি ব্যালেন্সড খাবার হয়। তবে যাদের ইউরিক এসিড বেশি বা যারা কিডনির রোগী, তাদের ডাল বা হালিম বর্জন করা ভালো।
৪. ইফতারে ভাজাপোড়া বর্জন করতে হবে। এটি ক্ষতিকারক কারণ সারাদিন রোজা রেখে তেলযুক্ত খাবার খেলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়, ক্যালোরি বেড়ে যাওয়ায় ওজন বেড়ে যায়। অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। ভাজা খাবার বর্জন করে যতটা কুকড, গ্রিল খাবার খাওয়া যায় সেটি ভালো।
৫. ডায়বেটিস রোগীরা ফাইবারযুক্ত কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট যেমন মুড়ি, চিড়া, রুটি, চিকেন, ফিশ বা ডিম রাখতে পারে। ফল খাবে। একসাথে একই টাইপের খাবার বর্জন করতে হবে।
৬. ইফতারের পর গুরুত্বপূর্ণ খাবার সেময় হলো সেহেরি। সেহেরিতে সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। সারাদিনের শক্তি সঞ্চয় করার জন্য সেহেরিতে ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। সেহেরিতে ভাত, রুটি বা চিড়া খাওয়া যেতে পারে, এর সাথে মাছ, মাংস বা দুধ রাখতে হবে। সালাদ বা শাকসবজি, ভর্তা খেতে পারে।
৭. আযানের অন্তত ৩০ মিনিট আগে সেহেরি শেষ করতে হবে। কারণ খাবার শেষ করার ২০ মিনিটর পর পানি খেতে হবে। এতে হজম ভালো হয়।
৮. পুষ্টি পাওয়ার জন্য দামি খাবারের প্রয়োজন হয় না। শুধু গরুর মাংস কিনতে হবে বা দাম দিয়ে বিদেশি ফল কিনতে হবে তা নয়, কলা, পেয়ারা, বরই যে ফলগুলো আছে তা খেলেই ফলের পুষ্টি পাবে। শাক, মিষ্টি কুমড়া, মৌসুমের ফল-সবজি খেলেই পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। মাছ খুব ভালো প্রোটিনের উৎস। কেউ গরুর মাংস বা মুরগির মাংস কিনতে না পারলে মাছ খাবে। মাছ না পারলে ডাল দিয়েও চাহিদা পূরণ করা যাবে।
- সামিয়া তাসনিম, পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড