ঈদে মুখর চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্র, তিন দিনে লাখো দর্শনার্থীর সমাগম
ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো। গত তিনদিনে প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে জানান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তারা। চলমান তাপদাহেও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, চিড়িয়াখানা, কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক, ফয়'স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের মত উন্মুক্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করে সব বয়সী মানুষ।
শনিবার ঈদের দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। তবে রোববার সকাল থেকে নগরীর নানা প্রান্তের সব বিনোদন কেন্দ্রে কানায় কানায় ভরে ওঠে। সোমবারও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সোমবার দুপুরে পতেঙ্গা সৈকতে হাজারো মানুষের মিলনমেলা ঘটে। দর্শনার্থীরা মাতেন সমুদ্রস্নানে। অনেকে স্পিডবোটে চড়েন; কেউ ঘোড়ার পিঠে। পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে সৈকতে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখো গেছে হাজারো মানুষকে।
সীতাকুণ্ড থেকে বেড়াতে আসা কলেজছাত্র জাহিদ হাসান বললেন, 'ঈদের দিন বাড়িতে ছিলাম। দ্বিতীয় দিন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গেছি। এখন বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এলাম। এখানে হাজার হাজার মানুষ। রীতিমত মেলা বসে গেছে।'
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক ইসরাফিল মজুমদার বলেন, 'ঈদে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে গত তিন দিনে প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। বিশেষ করে এবার দর্শনার্থীরা এবার ভিড় করেছেন দূর থেকে একনজর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দেখতে।'
ফয়'স লেক এমিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে শনিবার ঈদের দিন ফয়'স লেকে দুই হাজারের কাছাকাছি লোকজন হয়েছিল। রোববার তা চার হাজার ছাড়িয়ে যায়। তৃতীয় দিন শেষে সে সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
ফয়'স লেক এমিউজমেন্ট পার্কের উপমহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, 'গত তিনদিনে প্রায় ২০ হাজার দর্শনার্থী আমাদের পার্ক ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ভ্রমণ করেছেন। আসা করছি পুরো সপ্তাহে ৪০ হাজার দর্শনার্থী পাবো।'
ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে আসা স্কুলশিক্ষিকা মেহের আফরোজ বলেন, 'ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে প্রথমবারের মত ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে এলাম। ছেলেমেয়েরা অনেক মজা করেছে পানিতে। এছাড়া ফয়'স লেক এমিউজমেন্ট পার্কের রাইডগুলো ভালো লেগেছে।'
ফয়'স লেকের পাশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এখানে বিশ্বের বিরল প্রজাতির সাদা বাঘসহ সাড়ে পাঁচশ পশুপাখি রয়েছে। গত তিন দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখানকার সাদা বাঘের খাঁচায় ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। শিশু–কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ ভিড় করেন চিড়িয়াখানায়।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শাহদাত হোসেন বলেন, 'ঈদের দিন দর্শনার্থী ছিল ১৩ হাজারের মতো। দ্বিতীয় দিন সে সংখ্যা ছিলো ১৭ হাজার। আজ (সোমবার) এখনো হিসেব করিনি তবে ১০ হাজারের কম হবে না।'
'এবার নতুন আনা ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙ্গারু, লামা, ম্যাকাও, এক জোড়া সিংহ দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে। এসব প্রাণী আনার পর এটাই প্রথম ঈদ। এছাড়া বাঘের নতুন খাঁচা করা হয়েছে। আমাদের পাঁচটা সাদা বাঘ আছে। যা শিশুদের প্রধান আকর্ষণ', বলেন শাহদাত হোসেন।
তবে কাজীর দেউড়ি শিশুপার্কের ম্যানেজার নাছির উদ্দিন জানান, গতবারের তুলনায় এবার শিশুপার্কে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম। মূলত উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্থিক দুর্দশার কারণে মানুষ পার্কমুখী হচ্ছে না।
এছাড়া নগরীর আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, প্রজাপতি পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, জেলা প্রশাসনের করা ফ্লাওয়ার গার্ডেন, আগ্রাবাদ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর, জাম্বুরি মাঠ, বায়েজিদ লিংক রোড, সিআরবি, সদরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, পারকি সমুদ্রসৈকত, রানি রাশমণি ঘাটসংলগ্ন সমুদ্রসৈকত, শাহ আমানত সেতু ও কর্ণফুলী নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
নগরীর বাইরে জেলার ১৫টি উপজেলায় গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলোও ছিলো দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানে মহামুনি মন্দির, অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অনি শিশু পার্ক, বেতাগী কর্ণফুলী নদীর পাড়, রাউজান রাবার বাগান ও ফটিকছড়ি চা বাগান।