বড় এক গ্রহকে গিলে ফেলল নক্ষত্র! এই প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এমন ঘটনা পর্যবেক্ষণ
২০২০ সালের মে মাসে একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাকাশে এক ভয়ংকর সুন্দর জিনিস প্রত্যক্ষ করেন। প্রথমবারের মতো তারা কোনো নক্ষত্রের একটি গ্রহকে গিলে ফেলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। আর ওই গবেষকদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একজন বাঙালি। খবর দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর।
কিশলয় দে নামক ওই বাঙালি তরুণের গবেষণাদলটিতে আরও আছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিসহ (ক্যালটেক) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। গত বুধবার ন্যাচার-এ তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রে জানানো হয়, বিজ্ঞানীরা জুপিটারের মতো আকৃতির একটি গ্রহকে তার চেয়ে হাজারগুণ বড় একটি নক্ষত্রের পেটে চালান হয়ে যাওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওই নক্ষত্রটি স্রেফ ১০ দিনের মাথায় ১০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এরপর দ্রুতই সে উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং অবশেষে আবার স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরে আসে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, নক্ষত্রটি ওই গ্রহটিকে হজম করেছে।
নতুন এ পর্যবেক্ষণ আমাদের এ পৃথিবীর নিয়তি বোঝার জন্যও সহায়ক। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করেন, এখন থেকে কয়েকশ কোটি বছর পর পৃথিবীর অবস্থাও একইরকম হবে।
আমাদের সূর্যের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে, এরপর এটি কক্ষচ্যুত হয়ে পড়বে এবং কাছাকাছি থাকা গ্রহগুলোকে নিজের ভেতরে টেনে নেবে।
তবে ওই সময় খুব সম্ভবত পৃথিবীতে আর মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না, কারণ তার আগেই সূর্যের বৃদ্ধি পাওয়া প্রচণ্ড উত্তাপে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
কিশলয় দে এমআইটি'র পোস্টডক্টরাল শিক্ষার্থী। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'ব্যাপারটা কিছুটা কাব্যিক — আজ থেকে পাঁচ বিলিয়ন বছর পর আমরা যা কিছু তৈরি করেছি, আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সবই সূর্যের উত্তাপে ছাই হয়ে যাবে।'
নতুন এ পর্যবেক্ষণের ফলাফল দেখে অভিভূত হয়ে গেছে বিজ্ঞানীমহল। তবে এ আবিষ্কার গবেষকদলটি অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই করেছেন।
মূলত কিশলয় প্রথমে বাইনারি নক্ষত্রব্যবস্থার উদ্গিরণ খোঁজার জন্য গবেষণা করছিলেন। এ প্রক্রিয়ায় দুটো তারা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে এবং একটি অন্যটি থেকে ভর আকর্ষণের কারণে মাঝেমধ্যে বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এরপর ক্যালটেক-এর জুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফ্যাসিলিটির ডেটা পর্যবেক্ষণ শুরু করেন কিশলয়। এ ফ্যাসিলিটিতে প্রতিদিন রাতের আকাশের ছবি তোলা হয়। সেগুলো ঘেঁটে তিনি দেখতে পান, একটি তারা কেবল এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ১০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
তারাটির অবস্থান পৃথিবী থেকে ১২,০০০ আলোকবর্ষ দূরে — আমাদের গ্যালাক্সির আকিলা নামক ঈগল আকৃতির একটি নক্ষত্রপুঞ্জে।
এরপর হাওয়াইতে অবস্থিত কেক অবজার্ভেটরির সাহায্যে কিশলয় ওই তারার রাসায়নিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে যে বাইনারি নক্ষত্রব্যবস্থার অনুসন্ধান করছিলেন, সেগুলো সাধারণত প্রচুর উষ্ণ গ্যাস দিয়ে ঘেরা থাকে।
কিন্তু উজ্জ্বল তারাটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখা গেল সেগুলোতে এমন অনেক মৌল আছে যা কেবল ঠান্ডা তাপমাত্রায় থাকতে পারে।
এরপর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের প্রায় এক বছর পর নক্ষত্রের অবলাল ডেটা ও পর্যবেক্ষণের মডেল বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান, ওই নক্ষত্রটি একটি গ্রহকে গিলে ফেলেছে।
তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর আকৃতি তুলনামূলক ছোট বলে সুদূর ভবিষ্যতে সূর্য পৃথিবীকে গিলে ফেললেও তা বর্তমান পর্যবেক্ষণের মতো নাটকীয় হবে না।
গবেষণাটির একজন সহলেখক ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল শিক্ষার্থী মর্গ্যান ম্যাকলিওড বলেন, 'বড় গ্যাসীয় গ্রহ হলে তা নক্ষত্রের পরিবেশকে উত্তাল করে ফেলবে। কিন্তু গ্রহ যদি শক্ত হয়, তাহলে নক্ষত্রের ভেতরে প্রবেশ করার সময় এত বেশি উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটবে না।'
এ গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কহীন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী কিশলয়দের পর্যবেক্ষণকে 'গ্রাউন্ডব্রেকিং ফলাফল' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কিশলয় দের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। সেন্ট জেমস স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট অভ সায়েন্স থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বর্তমানে এমআইটিতে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করছেন এ তরুণ বিজ্ঞানী।