হাসপাতালের অবহেলায় নবজাতকের পর মা আঁখিও মারা গেলেন
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় গুরুতর অসুস্থ মাহবুবা রহমান আঁখি আজ ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
রোববার (১৮ জুন) দুপুরে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন বলেন, চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তোলেন সিজারিয়ান রোগী আঁখি। সন্তানের মৃত্যুর জন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন। ঘটনার পর থেকে আঁখি নিজেও লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
ঘটনার জেরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি। শুক্রবার (১৬ তারিখ) জারি করা আদেশে বলা হয়, তদন্তে হাসপাতালের আইসিইউ এবং জরুরি পরিষেবাগুলোর মান অসন্তোষজনক মনে হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (১৪ জুন) সিজারিয়ান রোগী মাহবুবা আঁখির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সন্তান প্রসবের সময় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত থাকার কথা বলে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতাল তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যার ফলে নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং মা গুরুতর আহত হয়েছেন।
রোগী আঁখির চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন শামীম টিবিএসকে বলেন, 'ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে আমার বোন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার তত্ত্বাবধানে নরমাল ডেলিভারি করতে চেয়েছিলেন। শুক্রবার মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
'ভর্তি হওয়ার পরপরই নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রেসক্রাইব করা ৪০ মিনিটের ব্যায়াম করানো শেষে আঁখিকে হঠাৎ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে সংযুক্তা সাহার সহকারী ডা. শাহজাদী ডা. মিলি নামে আরেকজন চিকিৎসককে ডাকতে বেরিয়ে আসেন। তিনি আমাদের জানান যে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে নেই, দেখি আমি কী করতে পারি।'
শামীম বলেন, 'তখন আমরা জানতে চাইলাম আমাদের ডাক্তার নেই, তাহলে অপারেশন করল কে? অপারেশন করেছেন তার সহকারী ডা. শাহজাদী। তখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমার বোন ও বাচ্চা সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল—দুজনেই আহত হয়েছে।' শামীম জানান, তখন তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু হাসপাতালের পক্ষ থেকে সস্তোষজনক জবাব পাননি।
চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ১৪ জুন আঁখির পরিবার ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করে। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লিখিত অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার ওপর সেন্ট্রাল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেয়।