২০২০ সালের নির্বাচনে ফল পাল্টানোর চেষ্টা, চার দফায় অভিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে ফল পাল্টানোর চেষ্টায় অভিযুক্ত হলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চার দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। ৪৫ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণার ষড়যন্ত্রে ফেলা, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র, কংগ্রেসের কার্যক্রমে বাধা দেওয়া এবং নাগরিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ নিয়ে গত চার মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো। তবে এসবের মধ্যেও তিনি পরবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ট্রাম্পকে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালতে প্রাথমিকভাবে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে
অভিযোগপত্রে ষড়যন্ত্র বলতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করা বা মার্কিন সরকারকে প্রতারণা করার জন্য দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে সংঘটিত কোনো পরিকল্পনা বুঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হলেও একজন ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি পরিকল্পনার যেকোনো পর্যায়ে কেউ যুক্ত থাকলে সেও এতে দায়ী থাকবে।
প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, ট্রাম্প '২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈধ ফলাফল পাল্টাতে' অজ্ঞাতনামা আরো ছয়জনের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ছয়জনের নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। তাদেরকে অভিযুক্তও করা হয়নি। তবে উল্লিখিত বর্ণনা অ্যাটর্নি রুডলফ গিউলিয়ানি, জন ইস্টম্যান, সিডনি পাওয়েল, কেনেথ চেসেবোরো এবং জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা জেফরি ক্লার্কের সাথে মিলেছে। ষষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারীকে একজন রাজনৈতিক পরামর্শক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর কোনোরকম প্রমাণ ছাড়া ট্রাম্প দাবি করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে।
নির্বাচনের দুই মাসের মধ্যে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে যখন জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল, তখন ওয়াশিংটন ডিসিতে সমর্থকদের উস্কে দেন ট্রাম্প।
তারা ঝড়ো গতিতে ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। সেদিন কমপক্ষে ৫ জন নিহত হন। এ ঘটনার জন্য 'কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া'র অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
এমনকি সেদিন জো বাইডেনকে যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অস্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেজন্যে ট্রাম্পের সময়কার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু পেন্স তাতে রাজি হননি। এ কাজের জন্য 'আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে'র অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
এছাড়া, মার্কিন নাগরিকদেরকে তাদের সাংবিধানিক বা ফেডারেল অধিকারের সুবিধা ভোগ করা থেকে বঞ্চিত করতে 'আক্রমণ, নিপীড়ন, হুমকি বা ভয়ভীতি দেখানো'র মতো যেকোনো প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটিতে গৃহযুদ্ধের পর এ আইন পাস করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ আইনটির ব্যবহার বহু দশক ধরে সীমিত ছিল। এর আগে নিক্সনের একজন সহযোগীর বিরুদ্ধেও এ আইনে মামলা করা হয়। পেন্টাগন পেপারস ফাঁসের পর একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অফিসে চুরি করার অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি।
ট্রাম্পের বেলায় প্রসিকিউটরদের যুক্তি হলো, সাবেক এ প্রেসিডেন্ট মার্কিন নাগরিকদের 'ভোট দেওয়ার অধিকার এবং তাদের ভোটের যথাযথ মূল্য নিশ্চিতকরণের' বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। তবে, প্রসিকিউটরদেরকে এটি অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে এগুলো ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল।