ঢাকার প্রথম স্পোর্টিং ক্লাব: 'ওয়ারী'র বাঁচা মরার গল্প!
ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ক্লাব কোনটি? প্রশ্নটি শুনলেই আমাদের মনে প্রথমেই আসে আবাহনী, মোহামেডান কিংবা ভিক্টোরিয়ার নাম। আর আসবেই না কেন? গত শতাব্দীর শেষার্ধে ঢাকার ক্লাব ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ যে পৌঁছেছিল চরমে! কিন্তু এ ক্লাব দুটি প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই ওয়ারী এলাকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকার প্রথম স্পোর্টিং ক্লাব। মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় কান পাতলে আজও শোনা যায় সেই ক্লাবের নাম। তা এখন কী অবস্থায় রয়েছে ক্লাবটি?
মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর থেকে ক্লাব পাড়ার গলি ধরে এগুলে প্রথমেই দেখা পাওয়া যায় মোহামেডান ক্লাবের। এরপরেই ভিক্টোরিয়া। আরেকটু সামনে হাঁটলে চোখে পড়ে 'ওয়ারী স্পোর্টিং ক্লাবের' মূল ফটক। তাতে প্রতিষ্ঠার সময়কাল লেখা ১৮৯৮। ক্লাবটির বয়স এখন ১২৪ বছর! সে হিসেবে ঢাকা শহর তো বটেই, এটি উপমহাদেশের প্রথম দিককার ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি।
বৃটিশ আমলে ফুটবল খেলায় ফরিদপুরের ভাদুড়ি পরিবারের খ্যাতি ছিলো দেশজোড়া। এই পরিবারেরই এক কৃতি সন্তান রামদাস ভাদুড়ি ঢাকার ওয়ারী এলাকায় ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি ক্রীড়া সংগঠন, যার নাম ছিলো 'ওয়েলিংটন ক্লাব'। দীর্ঘদিন চলার পর একসময় সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওয়ারীর কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক এই ওয়েলিংটনকেই 'ওয়ারী স্পোর্টিং ক্লাব' নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার প্রথম ফুটবল ক্লাব। ১৮৯৮ সালে। স্থানীয় জমিদার সুরেন্দ্র নাথ রায় ক্লাবটির গোড়াপত্তনে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন বলে মনে করা হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রীড়া জগতে ওয়ারী ক্লাবের ছিল সাবলীল বিচরণ। খেলার মাঠে নানা চড়াই-উতরাই দেখেছে ক্লাবটি। কখনো জিতেছে, হেরেছে কখনো; কিন্তু বিশ্বাস হারায়নি। একসময় তো বড় বড় দলকে হারিয়ে জন্ম দিয়েছিলো 'ওয়ারী আইলো'র মত স্লোগান। তবে সেসব এখন সোনালী অতীত। একসময়ের দাপুটে ক্লাবটি আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ, সময়ের পরিক্রমায় অনেকটাই টালমাটাল অবস্থা। এখন যখন নতুন করে সুবাতাস বইছে দেশের ক্রীড়া জগতে, দেশের ফুটবল ফিরে পেতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা, তখন জানতে ইচ্ছে করে, ঢাকার প্রথম স্পোর্টিং ক্লাবটি কি ফিরে পাবে আগের সেই জৌলুশ? নাকি চিরতরে হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে?
পুরনো সেই দিনের কথা
ওয়ারী স্পোর্টিং ক্লাব। রঙ তার লাল সাদা, স্লোগানে অভিনবত্ব- 'এক হৃদয় এক মন'। বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ক্রীড়া শুধুই বিনোদন ছিল না, ছিল আত্মমর্যাদা ও লড়াইয়ের প্রতীক। ওয়ারী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও এসবের বাইরে ছিলো না। এলাকার অভিজাতদের আড্ডার মূল জায়গা ছিল ক্লাব চত্বর, ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মান-মর্যাদাও। তাই যে কোন খেলায় সেরা দল গড়তে দু'হাতে পয়সা খরচ করতেন তারা। তবে অন্যসব খেলার চেয়ে ফুটবলই ছিলো সবচেয়ে জনপ্রিয়।
ওয়ারী ক্লাবের প্রথম সাফল্য আসে ফুটবলে, ১৯১০ সালে। সে বছর ওয়ারী ক্লাব পরাজিত করে বৃটিশ রাজকীয় 'প্রাসাদ' দলকে। এ জয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশের ফুটবল রসিকদের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় 'ওয়ারী ক্লাব'৷ এরপর ১৯১৭ সালে তৎকালীন লীগ চ্যাম্পিয়ন লিংকলিন ক্লাবকে হারিয়ে রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম দেয় ক্লাবটি, হয়ে ওঠে নিয়মিত চর্চার বিষয়। এর বছর দুয়েক পরেই আরেকটি বড় সাফল্য পায় ওয়ারী ক্লাব। ১৯১৯ সালে তারা হারিয়ে দেয় মোহনবাগান ক্লাবকে! যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন মোহনবাগান শুধু বাংলা নয়, ভারত উপমহাদেশেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্লাব। ২-১ গোলে জেতা সে ম্যাচটি তাই ওয়ারী ক্লাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে মনে করেন অনেকেই। ১৯২৫ সালে ভারত সফরে এসেছিলো ইংল্যান্ডের ক্লাব 'শেরউড ফরেস্ট'। অনেক ভালো ফুটবল খেলেও ওয়ারী সেবার ২-১ গোলে হেরে যায়। তবে ওয়ারী ক্লাব শেরউডের জালে একবার হলেও বল ঢোকাতে সক্ষম হয়, যা পারেনি উপমহাদেশের অন্য কোন দল।
বিশ্বখ্যাত কোরিনথিয়ান ফুটবল দল উপমহাদেশে সবসময় অপরাজিত থাকতো। ১৯৩৭ সালে তাদের হারিয়ে দেয় যে ঢাকা একাদশ দল, সেই একাদশের ১০ জন খেলোয়াড়ই ছিলো ওয়ারী ক্লাবের। প্রতিষ্ঠার পর ফুটবল দিয়ে শুরু করলেও এক সময় পাঁচটি আলাদা খেলায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করে ওয়ারী। ফুটবল, হকি, ভলিবল, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস। একে একে সাফল্য এসেছে প্রায় প্রতিটি খেলায়।
১৯৫৩ সালে ওয়ারী হকি দল লীগ শিরোপা জয়লাভ করে। সে বছর কলকাতায় খেলতে গিয়ে সেখানকার লীগজয়ী মোহনবাগান হকি দলকে পরাজিত করে ১-৩ গোলে। এরপর হকিতে নানা সময়ে লীগ জিতেছে ওয়ারী। হকির মতই টেবিল টেনিসেও এসেছে নিয়মিত শিরোপা। ১৯৫৩ সালে পূর্ব-পাকিস্তান লীগে ক্লাবের খুরশিদ আনোয়ার ও আনোয়ার সামাদ হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। টেবিল টেনিসের মতই ওয়ারী ভলিবল দল সবসময় শক্তিশালী ছিলো। তাই তাদের সাফল্যেও এসেছে অনেক। ওয়ারীকে বলা হতো ভলিবল প্লেয়ার তৈরির কারখানা। ৬০ ও ৭০ এর দশকে নিয়মিত লীগ বিজয়ী হতো ভলিবল দল। ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে তারা। ক্রিকেটেও ক্লাবটির সাফল্য কম নয়। জাতীয় লীগে হ্যাট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে তাদের। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা অনেক প্লেয়ার উঠে এসেছে এই ক্লাব থেকে।
ওয়ারী আইলো!
দেশীয় ফুটবল নিয়ে এখন তেমন উন্মাদনা না থাকলেও একটি সময় ছিলো, যখন ফুটবলই ছিলো কিশোর-তরুণদের ধ্যানজ্ঞান। সেসময়ে ঢাকার ক্রীড়া জগতে আবাহনী-মোহামেডান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর নাম। শুধু মাঠের খেলাতেই নয়, মাঠের বাইরে সমর্থকদের মধ্যেও হরহামেশাই লেগে যেত কথার লড়াই। হাতাহাতি যে হতো না, তাও কিন্তু নয়। দুই দলের এসব লড়াইয়ে জড়িয়ে থাকতো তৃতীয় একটি দলের নাম- ওয়ারী ক্লাব।
স্বাধীনতার পর ভালো দল গড়তে না পারায় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ওয়ারী। কিন্তু এই ক্লাবটিকে বলা হতো জায়ান্ট কিলার। কারণ মাঝেমধ্যেই অনেক বড় বড় ক্লাব, যাদের থাকতো শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা, তাদেরই হারিয়ে দিতো ক্লাবটি।
১৯৭৮ সালে ওয়ারী ক্লাবের কাছে পরপর দুই লেগেই হেরে যায় 'আবাহনী ক্রীড়া চক্র'। আর তাতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের সমর্থকেরা শুরু করে 'ওয়ারী আইলো' স্লোগান! এ স্লোগানটি শুনলেই ক্ষেপে যেতো আবাহনী সমর্থকেরা। ওয়ারীর বিরুদ্ধে খেলা থাকলে তখন বড় দলগুলোও থাকতো ভয়ে।
হারিয়ে গেছে সে গৌরবময় দিন
ঐতিহ্যগতভাবে ওয়ারী ক্লাবের সভাপতি হন ঢাকার ডিসি, অন্য সকল পদে নির্বাচন হয়। ওয়ারী ক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান মিরাজ ছিলেন ক্লাবটির সোনালী দিনের খেলোয়াড়। ক্লাবের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে এখন তিনি সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন খেলায় ক্লাবের অবস্থান জানতে চাইলে তার কণ্ঠে ঝরলো হতাশা।
ওয়ারী ক্লাবের ক্রিকেট টিম বিলুপ্ত হয়েছে ২০১৫ সালে। এরপর আর ফিরিয়ে আনা যায়নি ক্রিকেট দল। এখন মাত্র চারটি খেলায় অংশগ্রহণ করে ক্লাবটি। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে তারা খেলে পেশাদার লীগের দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে (বিসিএল)। একসময়ের দাপুটে দলটির মধ্যে অবনমনের শঙ্কাও কাজ করে অনেকসময়। অবনমন যে একেবারে হয়নি তা নয়। ওয়ারী ক্লাব হকি দল নেমে গেছে প্রথম বিভাগে। যে হকি ছিলো তাদের গর্বের বিষয়, সেটি জায়গা হারিয়েছে প্রিমিয়ার লীগে।
ভলিবলে অসংখ্য আন্তর্জাতিক অর্জন ছিলো ওয়ারী ক্লাবের। একসময় থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মত জায়গায় গিয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে ক্লাবটি, এখন নিয়মিত ৫-৬ নম্বরে থেকেই লীগ শেষ করতে হয়। যদিও টেবিল টেনিসের দৌলতে মাঝেমধ্যে শিরোপার মুখ দেখে ক্লাবটি, সেটিও নিয়মিত নয়।
ক্লাবের অবকাঠামোও অনুন্নত। উত্তরবঙ্গ স্পোর্টিং ক্লাবের তরুণ ফুটবলারা, যারা ওয়ারীর হয়ে অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল খেলে, তাদের থাকার ঘরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী। ঘিঞ্জি পরিবেশেই তাদের থাকতে হয় মাসের পর মাস।
যে কারণে এই বেহাল দশা
জাহাঙ্গীর আলম ছোটবেলা থেকেই জড়িত ছিলেন খেলাধুলার সাথে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হন, ততদিনে তিনি ওয়ারী ক্লাবে ভলিবল দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। ভলিবলের পাশাপাশি পেশাদার ফুটবলও খেলেছে এদিক ওদিক। তবে শুরু থেকে শেষ, ভলিবলে তার একমাত্র ক্লাব ছিলো ওয়ারী। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩, ভলিবলে টানা তিনবার প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তার ক্লাব।
১৯৯০ সালে দশবছরের পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবন ছেড়ে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। চাকরি থেকে অবসরের পর আবারও ফিরে আসেন মাঠে। প্রথম দুই বছর খেলোয়াড় কাম কোচ, এরপর কোচিংটাকেই বেছে নেন অবসর সময়ের কাজ হিসেবে। বর্তমানে তিনি ওয়ারী ক্লাবে ভলিবল দলের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রশিক্ষক। বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ক্লাবের সোনালী দিনের এই তারকা যেমন জানালেন তাদের গৌরবময় দিনের ইতিহাস, একইসাথে জানালেন বর্তমান সময়ের দৈন্যদশার কথা।
তার মতে, ওয়ারী ক্লাবের এই বেহাল দশার পেছনে প্রধানতম কারণ 'অর্থের অভাব'। একসময় ঢাকার ক্লাব ফুটবল ছিলো অসম্ভব রকমের জনপ্রিয়, শোনা যেত অর্থের ঝনঝনানি। এখন আর সে দিন নেই। তবে কিছু বছর আগেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান, ক্লাব সদস্যদের নানা ধরনের সহায়তা থেকে ভালোই চলছিল সব। ওয়ারী ক্লাবের মূল আয় ছিল অবশ্য হাউজি খেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থ। কিন্তু কয়েক বছর আগে মোহামেডান ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও ভিক্টোরিয়ার মত ক্লাবে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে ক্লাব পাড়ার যাবতীয় জুয়া কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাসিনোতে জড়িত না থাকলেও ওয়ারী ক্লাবে হাউজি খেলাও বন্ধ করতে হয়। জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, সেই থেকে ক্লাবের কোন আয় নেই। "ক্লাবের মূল ইনকাম সোর্স ছিলো হাউজি, বিভিন্ন ধরনের চাঁদা পাওয়াও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের কোন ইনকাম সোর্স নেই। নাথিং। ক্লাবের শুভাকাঙ্খীদের সামান্য অনুদানেই এখন চলতে হচ্ছে।"
ক্রিকেট বন্ধ হওয়া, বিভিন্ন খেলায় অবনতি হওয়ার পেছনে অর্থ ছাড়াও ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে অনেকাংশে দায়ী মনে করেন ক্লাব সংশ্লিষ্ট অনেকে। ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মোমিন এবং সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু ছিলেন ওয়ারী ক্লাবের দুজন দক্ষ সংগঠক। বর্তমানে দুজনই প্রয়াত হলেও, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তাদের দ্বন্দ্বের ফলে যে দুটি দলের সৃষ্টি হয়েছিলো, তা আজও টিকে রয়েছে। ক্লাব পর্যায়ে বাফুফে ১৯৯৮ সালে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করার আগে থেকেই ওয়ারী ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হতো নির্বাচনের মাধ্যমে। সে ধারা এখনও চলমান। নেতা নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছু স্বাভাবিক চললেও, দলাদলি-অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রভাব ফেলছে মাঠের খেলায়। কিন্তু ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান মিরাজ তা মানতে নারাজ।
তার মতে, গ্রুপিংয়ের চেয়েও বড় সমস্যা অর্থের অভাব। "আমাদের আয়ের উৎস ছিলো হাউজি, অভ্যন্তরীণ মেম্বাররা সন্ধ্যার পরে ইনডোর গেমস খেলতেন, তাদের অনুদান, এখন তো এসব বন্ধ। আগে কয়েক লাখ টাকা হলে টিম হয়ে যেত, এখন মানসম্মত একটা ফুটবল দল গড়তে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লাগে। বড় স্পন্সর না পেলে ভালো দল গড়া যায় না। এটাই এখন প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে," বলেন তিনি।
ক্লাবের সুদিন ফেরানোই এখন লক্ষ্য
"আমরা চাই ক্রিকেট দল ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু এখন তো খেললে কোয়ালিফাই অর্থাৎ থার্ড ডিভিশন থেকে শুরু করতে হবে। তা আমরা ক্রিকেট বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছি, আমাদের একটা টিম যাতে নেওয়া হয়," বলছিলেন সাধারণ সম্পাদক মিরাজ। জানালেন, শুধু ক্রিকেট নয়, সব ধরনের বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ক্লাবটিকে ঠেলে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।
সরকারি কোন সাহায্য ক্লাবটি কখনো পায় নি। তবে ভলিবল দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম আর্থিক অনটন কাটিয়ে ওঠার নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন। "আরামবাগে ক্লাব সংলগ্ন কিছু দোকান আমরা তুলবো। ১০ টার মতো দোকান। হাউজিটা হয়তো চালু হবে।" তার মতে, ওয়ারী ক্লাব সবসময় টিকে থাকবে, কারণ এটি 'জেন্টলম্যান' ক্লাব।
"চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ হওয়া লক্ষ্য না। আমাদের লক্ষ্য হলো তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তুলে এনে জাতীয় দল ও লীগে তাদের খেলার ব্যবস্থা করা। স্বাধীনতার পর থেকে করে আরছি, ভবিষ্যতেও আমরা করবো। আশাকরি আমরা সফল হবো। আমাদের দল হারানো গৌরব ফিরে যাবে," যোগ করেন মহিদুর রহমান মিরাজ।