বাংলাদেশে কি আসল জাফরান মেলে? দাম কেন আকাশছোঁয়া?
চড়া দাম আর দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় বিশ্বজুড়ে মসলাটিকে আখ্যায়িত করা হয় 'লাল স্বর্ণ' নামে। তীব্র শীতের দেশে উৎপাদিত বেগুনি রঙের এক ফুলের লাল গর্ভমুণ্ড শুকিয়ে সংগৃহীত হয় সেই স্বর্ণ। ১৫০টি ফুলের গর্ভমুণ্ড শুকিয়ে পাওয়া যায় মাত্র এক গ্রাম। বছরে একবার ফলন দেওয়া গাছটি থেকে মসলা সংগ্রহ করার পুরো কাজ করতে হয় হাতে। তাই দামের পারদ সবর্দাই থাকে আকাশ ছোঁয়া। খাবারে সুগন্ধ আর আকর্ষণীয় রঙের যোগানদাতা মসলাটি আমাদের দেশে পরিচিত জাফরান নামে।
'লাল স্বর্ণ' খ্যাত জাফরান মূলত ক্রোকাস স্যাটিভাস পরিবারের একটি লিলি জাতীয় উদ্ভিদ। অঞ্চলভেদে নানান রকমের গালভরা নাম আছে এই মসলাটির। কেশর, কুমকুম, সাফরান কিংবা ইসপাগনল- বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত দামী মসলা জাফরান।
জাফরানের আদি উৎপত্তিস্থল মূলত গ্রিস। তবে শীতপ্রধান অঞ্চল যেমন: ইরান, স্পেন, কাশ্মীরে জাফরানের উৎপাদন অনেক বেশি হয়। সাধারণত একটি জাফরান ফুল থেকে ৩০ মিলিগ্রাম ওজনের জাফরান পাওয়া যায়। যা শুকনো অবস্থায় নেমে আসে ৭ মিলিগ্রামে। ১ গ্রাম জাফরান পেতে প্রয়োজন হয় ১৫০টি ফুলের। অর্থাৎ, ১ কেজি শুকনো জাফরান পেতে দেড় লক্ষ জাফরান ফুলের প্রয়োজন পড়ে।
প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে বর্তমান ইরাকের একটি গুহায় আঁকা ছবিতে রঙ হিসেবে মানুষ প্রথমবার বন্য জাফরান ব্যবহার করেছিল। প্রাচীন সুমেরীয়, অ্যাসিরিয়া ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতার গ্রন্থগুলোতে ঔষধ ও রঙ হিসেবে জাফরান ফুল ক্রোকাস ব্যবহারের বর্ণনা পাওয়া গেছে।
তবে বিশ্লেষকরা ইতিহাস থেকে যুক্তি দেন যে, প্রাচীন গ্রিসের মিনোয়ান সভ্যতার শিল্পকর্মগুলো সম্ভবত জাফরান ব্যবহারের সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ। যেমন- প্রায় ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বে সান্তোরিনি দ্বীপের ফ্রেস্কো "দ্য স্যাফ্রন গাদারার্স"- চিত্রটিতে ক্রোকাস ফুলের ঘন পাপড়িগুলো জাফরান চাষের ধারণা দেয়।
বিরিয়ানি, শরবত, মিষ্টিসহ বাহারি সব রান্নায় বিশ্বের অন্যতম দামী মসলা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে জাফরান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তো বটেই, বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এই মসলার জনপ্রিয়তা। দেশের বাজারে জাফরানের চাহিদা বাড়ার কারণ, এর উৎস আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধান করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
নেই সরাসরি আমদানি, সময়ের সঙ্গে বাড়ছে চাহিদা
দেশের বাজারে জাফরানের হাল-হকিকত জানতে খোঁজ নিয়েছিলাম রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার আর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের মসলার দোকানগুলোতে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, জায়গাভেদে বাজারগুলোতে এক গ্রাম জাফরানের দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। উন্নতমানের জাফরানের জন্য ইরান, স্পেন আর ভারতের কাশ্মীর সর্বাধিক পরিচিত। তবে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই জানালেন তারা 'আসল' ইরানি জাফরান বিক্রি করেন। দুবাই থেকে আমদানি করা হয় এসব জাফরান। তবে আমদানিকারক সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ-ই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকানগুলোতে প্রতি গ্রাম জাফরান বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা করে। কারওয়ান বাজার আর মৌলভীবাজার থেকে জাফরান সংগ্রহ করেন বলে জানান স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে অনেক অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও বিক্রি করছে জাফরান। যেখানে প্রতি গ্রাম জাফরানের দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার ভেতরে। অনলাইন ব্যবসায়ীরাও জাফরানের আমদানিকারক সম্পর্কে জানাতে পারেননি কোনো বিস্তারিত তথ্য।
মৌলভীবাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের কর্ণধার শামসউদ্দিন মসলার ব্যবসা করছেন ৩৫ বছর যাবত। তার ভাষ্যে, "বৈধভাবে কেউ দেশে জাফরান আমদানি করে না। চোরাই পথে লাগেজে করে মাল আসে। এই কারণে তাও দাম কিছুটা কম পড়ে, নাহলে প্রতি কেজি জাফরানের পাইকারি দরই তিন-সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপরে হয়ে যেত। তাছাড়া বৈধ আমদানি করলে কয়েক টন করে মাল আনতে হবে। এত জাফরান কেনার মতো ভোক্তা তো নাই দেশে।"
জাফরানের আমদানি বিষয়ে প্রশ্ন করায় বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহও জানালেন একই তথ্য। তার মতে, দাম বেশি হওয়ায় দেশে আগে জাফরানের চাহিদা খুব বেশি ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়ায় চাহিদা বাড়ছে মসলাটির। মান অনুযায়ী, প্রতি কেজি এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে কখনো কখনো দুই-আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দর হয় জাফরানের।
বাজারে বেশিরভাগ জাফরান নিম্নমানের
জাফরানের মান অনুযায়ী একে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়। ইরানি জাফরানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত গ্রেড হলো 'অল রেড সুপার নেগিন'। এরপর যথাক্রমে আসে 'অল রেড নেগিন', 'অল রেড সারগল', 'ফিলামেন্টস গ্রেড-১', 'ফিলামেন্টস গ্রেড-২', 'ফিলামেন্টস গ্রেড-৩', ও 'ফিলামেন্টস গ্রেড-৪'। ফুলের গর্ভমুণ্ডের কেবল ওপরের অংশ থাকে সবচেয়ে উন্নত গ্রেডে। রঙ হয় পুরোপুরি লাল। গ্রেড যত নিচে নামে জাফরানে যোগ হয় গর্ভমুণ্ডের নিচের দিকের হলুদ অংশ। নিচের গ্রেডগুলোতে হলুদ অংশের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গ্রেড অনুযায়ী রঙ আর ঘ্রাণের পাশাপাশি কমতে থাকে জাফরানের দামও।
কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজারের ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ দোকানেই বিক্রি হচ্ছে লালের সঙ্গে হলুদ মেশানো রঙের ফিলামেন্টস গ্রেড-২ মানের জাফরান। সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান দেখানোর কথা বললে প্রায় সকল ব্যবসায়ীই বের করে দেখান এই একই গ্রেডের জাফরান। কোথাও এই জাফরানের দাম ১৫০, কোথাও ২২০ আবার কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। বিসমিল্লাহ স্টোরের শামসউদ্দিনের মতে, দেশে এর চেয়ে ভালো মানের জাফরান সাধারণত আসেই না। একই গ্রেডের জাফরান ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে বিক্রি করে থাকেন।
গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের দোকানগুলোতে পুরোপুরি লাল রঙের জাফরান বিক্রি হতে দেখা যায় ২৬০ টাকা গ্রাম দরে। বিক্রেতারা এগুলোকে সুপার নেগিন জাফরান হিসেবে দাবি করলেও দেখাতে পারেননি গুণগত মানের কোনো প্রমাণপত্র।
অনলাইনে জাফরান বিক্রি করে এমন এক ফেসবুক পেজের নাম 'রাহমা'। যেখানে এক গ্রাম জাফরানের দাম রাখা হয় ৪৫০ টাকা। রঙ লাল-হলুদ মেশানো। পেজের স্বত্বাধিকারী ফওজিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাদের বিক্রি করা জাফরানের গ্রেড সম্পর্কে। বললেন, "আমরা যশোরের এক সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে নিয়ে আসি। তারাই ভালো বলতে পারবেন গ্রেড সম্পর্কে। তবে সবচেয়ে ভালো গ্রেডের জাফরানই দেন তারা।"
বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু হেনা ফয়সাল ফাহিম বলেন, "উন্নত মানের জাফরানের দাম তো অনেক বেশি। ভালো গ্রেডের এক কেজি ইন্ডিয়ান জাফরানের বাংলাদেশি দাম হবে প্রায় ৫ লাখ টাকা। দাম কমাতে অনেক সময়ই ব্যবসায়ীরা ভেজাল মেশান জাফরানে। কুসুম ফুল নামে এক ধরনের ফুল আছে। যার পাপড়ি দেখতে অনেকটাই জাফরানের মতো। হলুদ রঙের সেই পাপড়িগুলো আসল জাফরানের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় অনেক সময়।"
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
কিছুদিন আগে চোখ আটকে গিয়েছিল ফেসবুক নিউজফিডের এক পোস্ট সাজেশনে। পোস্টের বিষয়বস্তু অনেকটা এমন- সন্তান গর্ভে থাকালীন অনলাইন পেজ থেকে জাফরান কিনে খেয়েছিলেন একজন নারী। পাঁচ মাস আগে জমজ দুই ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। সেই নারীর মা-বাবা আর তার বড় ছেলে সবার গায়ের রঙ শ্যামলা। কিন্তু গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার কারণে ছোট দুই জমজ সন্তান ফর্সা হয়েছে! সেই পেজজুড়ে দেখা পেলাম এমন অসংখ্য কৃতজ্ঞতা সূচক পোস্টের।
অনলাইনে জাফরান বিক্রয়কারী আরো কিছু পেজে ঘুরে দেখা যায় এই ধরনের প্রচারণা। দিন দিন গর্ভবতী মায়েদের কাছে জনপ্রিয়তা বাড়ছে জাফরানের। অনাগত বাচ্চার রঙ ফর্সা করা ছাড়াও বাচ্চার মস্তিষ্কের সুস্থতা, ওজন ঠিক রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে গর্ভকালে জাফরান খাওয়ার।
এ ধারণার আসলেই কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি না জানতে চেয়েছিলাম শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কর্মরত গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. ছাবিকুন নাহারের কাছে। তার ভাষ্যমতে, "জাফরান শুধু খাবারে রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত একটি মশলা। এরসঙ্গে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। মেডিকেল সাইন্সের গাইনী বিষয়ক কোনো বইয়ে গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায় জাফরানের কথা উল্লেখ করা নেই। যেহেতু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নেই তাই একজন পেশাদার ডাক্তার হিসেবে আমি কখনো সাজেস্ট করব না এগুলো খেতে।"
কিছু কিছু ব্যবসায়ী কেবল তাদের ব্যবসার স্বার্থে এধরনের তথ্য প্রচার করছে বলে মনে করেন এই ডাক্তার।
জাফরানের নানান গুণ
জাফরানের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে প্রচলিত আছে অসংখ্য তথ্য। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত না হলেও যুগ-যুগ ধরে প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মসলাটি। জাফরানের প্রচলিত গুণাগুণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–
- ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে মসলাটি। জাফরানে যে ক্রোসিন এবং প্রোক্রোসিন নামক ক্যারোটিনয়েডস আছে, তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং কেমোপ্রিভেন্টিভ এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রিক, আলসার জনিত সমস্যা দূর করে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- পেশি শক্তি বৃদ্ধি, শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও জাফরান সহায়তা করে।
- আর্থ্রাইটিস এবং ইনফ্লামেশন জনিত সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে।
- দৃষ্টিশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে স্যাফ্রানাল উপাদান বয়স্ককালীন দৃষ্টিশক্তি জনিত জটিলতা নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
- ঘুমের সমস্যা তথা ইনসমনিয়া জনিত সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে জাফরান।
- স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধদের আলজেইমার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- জাফরানের ক্যারোটিনয়েডস উপাদান হতাশা ও অবসাদ দূরীকরণে সাহায্য করে।
- ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিরাময়েও জাফরানের কার্যকরীতা প্রচলিত।
এছাড়াও, আদিকাল থেকে ত্বকের যত্নে সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে জাফরান। তবে মাত্রাতিরিক্ত জাফরান কখনোই গ্রহণ করা উচিত নয়। উপকারিতা থাকলেও অধিক গ্রহণে হীতে বিপরীত হতে পারে বলে সাবধান করেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্যক্তিগত ব্যবহার ছাড়া সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্নায় জাফরানের ব্যবহার দেখা যায় বেশি। মৌলভীবাজার এবং কারওয়ানবাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের শেষে বা শীতকালে বিয়ের মৌসুমে জাফরানের চাহিদা বাড়ে।
আসল জাফরান চেনার উপায়
জাফরানের আসল-নকল বোঝার উপায় হলো এর স্বাদ ও গন্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আসল ইরানি জাফরানের গন্ধ অনেক মিষ্টি এবং তীব্র থাকে। স্বাদও কিঞ্চিৎ তিতকুটে হয়।
আসল জাফরান চিহ্নিত করার জন্য ছোট একটি পরীক্ষা করা যেতে পারে। কয়েকটি জাফরান পানিতে ভিজিয়ে খেয়াল করতে হবে জাফরান রঙ ছাড়ছে কি না। আসল জাফরান পানির সাথে মিশতে কিছুটা সময় নেয় এবং ধীরে ধীরে রঙ ছাড়ে। পানিতে রঙ ছাড়লেও দণ্ড লাল রঙেরই থাকে। অপরদিকে নকল জাফরান পানিতে ভেজালে দ্রুত রঙ ছাড়ে এবং দণ্ড হলুদ বা সাদা রঙের হয়ে যায়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেন, "জাফরানের নামে অনেকসময় কুসুম ফুলের শুকনো পাপড়িও বাজারে পাওয়া যায়। আসল নকলের ফারাক বুঝতে পারায় অনেকেই জাফরান নামধারী কুসুম ফুল কিনে ঠকে যান। এই দলে দইগোটা নামে আরেকটি ফলও ঠাঁই পেয়েছে। চিরুনির ফলার মতো খোলসওয়ালা এই ফলটি দেখতে টকটকে লাল হওয়ায় অনেক বিক্রেতা একে জাফরান নামে চালিয়ে দেন।"
দেশে জাফরান চাষের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে জাফরান চাষের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চেয়েছিলাম মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জুলফিকার হায়দার প্রধানের কাছে। তিনি বললেন, "এ বছরই আমরা চেষ্টা করেছিলাম দেশের পরিবেশে জাফরান চাষের। কিন্তু আমাদের আবহাওয়ায় এটা সম্ভব নয়। জাফরান চাষের জন্য পাহাড়ি এলাকা, যেখানে বরফপাত হয়, বৃষ্টি হয় না- এমন পরিবেশ প্রয়োজন। অনেকে বদ্ধ জায়গায় গ্রিন হাউজ পদ্ধতিতে চেষ্টা করছে জাফরান চাষের। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফলতা পাওয়া যায় নি।"
তবে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে জাফরান চাষের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে তাপমাত্রা, আদ্রতা আর আলো নিয়ন্ত্রণ করে জাফরান চাষ শুরু করেছিলেন তিনি।
এই পদ্ধতিতে তিন মাসেই জাফরানের দেখা পান এই অধ্যাপক। করোনার আগ পর্যন্ত কয়েক দফায় ল্যাবের ভেতর স্বল্প পরিসরে জাফরান চাষ করেছেন তিনি। তার মতে, "গ্রিন হাউজ পদ্ধতিতে উলম্বভাবে ট্রে-তে খুব কম জায়গার মধ্যেই অনেক পরিমাণে জাফরান চাষ করা সম্ভব। খোলা পরিবেশে এক হেক্টর জায়গায় যে ফসল হয়, এই পদ্ধতিতে মাত্র ১০০ বর্গফুটেই সে ফসল ফলানো সম্ভব। তাছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে বছরে মাত্র এক বার ফলন হলেও, নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বছরে তিন বার জাফরান চাষ করা সম্ভব হবে।"
করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জামাল উদ্দিনের জাফরান চাষেও পড়েছে বিরতি। তিনি জানান, দেশের অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে জাফরান চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তার কাছে। কিন্তু বড় পরিসরে জাফরান চাষের খরচটাও অনেক বেশি। তাই এখনো পর্যন্ত সে উদ্যোগ নেয়নি কেউ।