স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাজধানীমুখী লঞ্চে উপচে পরা ভিড়
টানা দুইমাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলের কথা বলা হলেও লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনেই তা না মানার প্রবণতা দেখা গেছে।
বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী কোনো লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। প্রতিটি লঞ্চে ঈদের সময়ের মত ভিড় দেখা গেছে।
রোববার দুপুর থেকে বরিশাল নদী বন্দরে থাকা তিনটি লঞ্চে একটু একটু করে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেল গড়াতেই লঞ্চগুলোতে দেখা যায় উপচে পরা ভিড়। প্রতিটি লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার দেড় থেকে দ্বিগুন যাত্রী ওঠানো হয়।
বিআইডব্লিউটিএ'র বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার নিজে মাইকিং করলেও তাতে যাত্রীদের কোনো কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি।
র্যাব সদস্যদের নিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান নদী বন্দরে পৌঁছে অবস্থা দেখে লঞ্চের ডেকের প্রধান ফটক বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরে তিনটি লঞ্চেরই প্রধান ফটক বন্ধ করা হয়।
যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধির কথা জানলেও কেউ মানছে না। এ অবস্থায় করোনা মহামারি আরও ছড়িয়ে পরার আশংকাও দেখা দিয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, সাবধানতার চেষ্টা করলেও কেউ কথা শুনছে না। নদী বন্দরে নোঙর করা তিনটি লঞ্চের ডেক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত ২৪ মার্চের পর বরিশাল নদী বন্দর থেকে রবিবার সুন্দরবন-১১, সুরভী-৯ ও অ্যাডভেঞ্জার-৯ রাজধানীর উদ্দেশ্য রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে যাত্রা করার কথা। লঞ্চগুলোর মধ্যে শুধু সন্দরবন-১১ লঞ্চের সামনে জীবানুনাশক টানেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, টানা দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রোববার সকাল থেকে চাঁদপুরের সাথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় এমভি সোনার তরী ও পরে আরও কয়েকটি লঞ্চ চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
তবে শুরুর দিনেই সরকারি নিয়ম-নীতি ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না চাঁদপুরের লঞ্চগুলো।
দুপুরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রীদের লঞ্চে উঠানো এবং বাড়তি টিকেট বিক্রি করায় এমভি রবরব লঞ্চের ৩ জন স্টাফকে আটক করে পুলিশ।
সরেজমিন লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায়ে রাখার কথা বললেও এখানো তা মানা হয়নি। যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। তাছাড়াও লঞ্চ কর্তৃপক্ষও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লঞ্চগুলোতে হ্যান্ড স্যানেটাইজারের ব্যবস্থা বা জীবানুনাশক স্প্রে করতেও দেখা যায়নি।
করোনার আতঙ্ক তোয়াক্কা না করে আগের মতই যাত্রী পরিবহন করছে। যাত্রীরাও কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই লঞ্চে যাত্রা করছেন।
যাত্রীদের নিজেদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাতায়াত করার অনুরোধ জানিয়ে চাঁদপুর জেলা বন্দর কর্মকর্তা আ. রাজ্জাক বলেন, দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় পর আজ থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চগুলো যেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি।
কোনো লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন নৌরুটে প্রায় ৪০/৪৫টি লঞ্চ চলাচল করে থাকে। নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় রামগঞ্জ, রায়পুরসহ অনেক উপজেলার মানুষ অটোরিক্সায় চাঁদপুরে এসে লঞ্চে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন।
রোববার সদরঘাট পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা সদরঘাটে ছয়টি 'জীবানুনাশক টানেল' বসানো হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ১৪টি জীবনুনাশক টানেল বসানো হবে।