‘জানুয়ারি থেকে আর অস্তিত্ব থাকছে না নাগর্নো-কারাবাখের’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আর অস্তিত্ব থাকছে না স্ব-ঘোষিত প্রজাতন্ত্র নাগর্নো-কারাবাখের। প্রজাতন্ত্রের নেতা সামভেল শাহরামানিয়ান জানিয়েছেন এ তথ্য। খবর বিবিসির।
সামভেল শাহরামানিয়ান বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জানান, ১ জানুয়ারি থেকে প্রজাতন্ত্রটির সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়ার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
যে অঞ্চলটি তিন দশক ধরে আর্মেনিয়দের নিয়ন্ত্রণে ছিল; সেটিও গত সপ্তাহে আজারবাইজান দখল করে নেয়।
নাগর্নো-কারাবাখে বসবাসরত জাতিগত আর্মেনিয়ানের অর্ধেকেরও বেশি এ অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এই অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর নিয়ন্ত্রণ নেয় আর্মেনিয়া।
শাহরামানিয়ান বলেন, প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে "জনগণের শারীরিক সুরক্ষা এবং তাদের স্বার্থ নিশ্চিতের লক্ষ্যে।"
তিনি আজারবাইজানের চুক্তির উল্লেখ করে আরও বলেন, এ অঞ্চলের "অধিবাসীরা বিনামূল্যে, নিজ ইচ্ছায় এবং বাধাহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবে।"
তিনি নাগর্নো-কারাবাখে অবস্থান করা বা এর বাইরে থাকা অধিবাসীদেরকে আজারবাইজানের সাথে 'পুনঃএকত্রিত হওয়ার শর্তগুলো' নিয়ে জানতে উৎসাহিত করেছেন। এ নিয়ে বাকু ও কারাবাখ কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, তার মতে, সামনের দিনে নাগর্নো-কারাবাখে আর কোনো আর্মেনিয় অবশিষ্ট থাকবে না।
গত বছরের ডিসেম্বরে কারাবাখ ছিটমহলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট অবরোধ করে আজারবাইজান। এরপরই নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়।
এরপর সেপ্টেম্বরে ২৪ ঘণ্টার একটি সামরিক অভিযান চালায় আজারবাইজান। একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয় সে যুদ্ধ।
কিন্তু এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়দের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা করেন, নাগর্নো-কারাবাখে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এ ঘটনার পর পাশিনিয়ান বলেন, এই অঞ্চলে 'জাতিগত নিধন' চলছে।
বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
এদিকে, কারাবাখের স্থানীয় জনগণের প্রতি আজারবাইজানের আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দিতে দেশটিকে চাপ দিচ্ছে পশ্চিমা সরকারগুলো। কিন্তু এখনও তাদেরকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এদিকে, আজারবাইজানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, ছিটমহলের একজন প্রাক্তন নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অর্থায়ন সহ বেশ কয়েকটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারের নেতৃত্ব দানকারী রুবেন ভারদানিয়ানকে বুধবার আর্মেনিয়া যাওয়ার চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এই সপ্তাহের শুরুতে আজারবাইজানের এক সরকারি সূত্র এজেন্স ফ্রান্স প্রেস নিউজ এজেন্সিকে জানায়, 'কারাবাখে অস্ত্র জমা দেওয়া আর্মেনিয়ান যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণা করতে চায় তারা। কিন্তু, কেউ 'যুদ্ধাপরাধ' করলে তাকে অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে।
ভারদানিয়ানকে প্রাক-ট্রায়ালে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী কয়েক মাস তিনি সেখানেই থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, নাগর্নো-কারাবাখ থেকে পালিয়ে আসা আর্মেনিয়ানদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আশ্রয় দিচ্ছে আর্মেনিয়ার কর্তৃপক্ষ।
বেশ কয়েকদিন ধরেই কারাবাখ থেকে আর্মেনিয়ার পথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সীমান্ত নিকটবর্তী গোরিস শহরে আর্মেনিয়দের জন্য সহায়তা আরও জোরালো করা হয়েছে।
এছাড়া, স্থানীয় হোটেলগুলোও শরণার্থীদের সহায়তায় বিনামূল্যে রুম অফার করছে। আর্মেনিয়রা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে সারাদেশে শরণার্থীদের আবাসনের প্রস্তাব দিচ্ছে।