মিরাজময় ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণের আনন্দ
আফগানিস্তান বনাম মেহেদী হাসান মিরাজ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটির চিত্র এমনই। আগে বল হাতে জাদু দেখানো ডানহাতি এই অলরাউন্ডার পরে ব্যাট হাতেও হয়ে উঠলেন দলের ত্রাতা, বাংলাদেশ জিতলো হেসেখেলেই। তবে ম্যাচটি মিরাজময় না হয়ে সাকিবময়ও হতে পারতো। বাংলাদেশ অধিনায়কও মিরাজের মতো ৩ উইকেট নেন। আর মিরাজ যে পজিশনে ব্যাটিং করেছেন, সেই তিন নম্বরে নেমে ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব কী কীর্তি গড়েছেন; তা সোনালী অক্ষরে লেখা।
বাংলাদেশ অধিনায়ক জায়গাটি দখলে রাখেননি, গত কয়েক ওয়ানডেতে কখনও মিরাজ কখনও নাজমুল হোসেন শান্ত এই জায়গায় ব্যাটিং করিয়েছেন। দুজনই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে তিনে নেমে দারুণ হাফ সেঞ্চুরিতে দলের জয়ে অবদান রাখলেন ম্যাচসেরা মিরাজ। অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্তও তাকে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, ব্যাটিং করতেন সাত-আট নম্বরে। জায়গা বদলে উপরে আনতেই মিরাজ হয়ে উঠেছেন ভরসার নাম। গত এশিয়া কাপে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি করে উপরের দিকে জায়গাটা একপ্রকার নিশ্চিত করে নিয়েছেন তিনি।
এবারের বিশ্বকাপে বড় স্বপ্ন বাংলাদেশের, অন্তত সেমি-ফাইনালে খেলতে চায় তারা। আর কেউ নন, এটা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান চান্দিকা হাথুরুসিংহে। যদিও লঙ্কান এই কোচই কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিশ্বকাপের জয়ের স্বপ্ন দেখে থাকলে তারা যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। কিন্তু আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন হাথুরুসিংহেই জানান, আপাতত লক্ষ্য সেমি-ফাইনাল। অর্থাৎ, স্বপ্নের সীমাটা আরও বড় তার। সেই স্বপ্ন যে শিরোপা জয়ের, তা না বলে দিলেও চলছে।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, প্রতিপক্ষ তুলনামূলক কম শক্তিশালী। দাপুটে জয়েই শুরু করার লক্ষ্য ছিল সাকিবদের। ব্যাটে-বলে শাসন করে বিশ্ব আসরে প্রত্যাশিত শুরুই করলো বাংলাদেশ। শনিবার ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে সাকিব-মিরাজদের বোলিংয়ের সামনে ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানেই অলআউট হয় আফগানরা। জবাবে মিরাজ-শান্তর ব্যাটে ৩৪.৪ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ, বাকি ছিল ৯২ বল।
বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। আগেরটি ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, ২০১১ বিশ্বকাপে ডাচদের বিপক্ষে ৫২ বল হাতে রেখে জিতেছিল তারা। বিশ্বকাপে আফগানদের বিপক্ষে তিনবারের সাক্ষাতে প্রতিবারই জায়ের হাসি হেসে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা তিন বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতলেন সাকিবরা। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে মিশন শুরু করে তারা।
টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। বোলিং নেওয়াই যে ঠিক সিদ্ধান্ত, সেটা তিনি নিজেই প্রমাণ করতে শুরু করেন। প্রতিপক্ষের প্রথম দুটি উইকেট শিকার করা বাংলাদেশ অধিনায়ক ৮ ওভারে ৩০ রানে ৩টি উইকেট নেন। বিশ্বকাপে এখন তার ৩৭ উইকেট, যা বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব আসরটিতে স্পিনারদের মধ্যে তিনি এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
সাকিবের চেয়েও কৃপণ বোলিং করেন মিরাজ। ৯ ওভারে ৩টি মেডেনসহ ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ডানহাতি এই অফ স্পিনার। বাংলাদেশের পেসাররাও দারুণ বোলিং করেন। ৬.২ ওভারে ৩৪ রানে ২ উইকেট নেন শরিফুল। তাসকিন ৬ ওভারে ৩২ রানে একটি উইকেট নেন। মুস্তাফিজ ৭ ওভারে দেন ২৮ রান, তার শিকারও এক উইকেট।
আফগানদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এ ছাড়া ইব্রাহিম জাদরান ২২, রহমত শাহ ১৮, হাশমতউল্লাহ শহিদি ১৮ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২২ রান করেন। বাকিদের কেউ-ই দুই অঙ্কের রান করতে পারনেনি। শেষের ৪ উইকেট মাত্র ৬ রানে হারায় আফগানিস্তান।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৭ রানের মধ্যে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমার দাসকে হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে ৯৭ রানের জুটি গড়ে দলকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন মিরাজ ও শান্ত। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করা মিরাজ ৭৩ বলে ৫টি চারে ৫৭ রান করে আউট হন।
এরপর সাকিব ১৪ রান করে আউট হলে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বেধে দলকে জয় এনে দেন শান্ত। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৮৩ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৯ রানে ও মুশফিক ২ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানিস্তানের ফজলহক ফারকী, নাভিন-উল-হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই একটি করে উইকেট নেন।