সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ এবং আহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা প্রদানের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে 'সড়ক আইন ও বিধি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত সকল নাগরিককে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি'– শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে প্রকাশ করা এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, "সেই হিসাবে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিবছর ১,৯৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে শুধুমাত্র সড়কে মৃত্যুর কারণে। তবে এর সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্যদের অর্থনৈতিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের ক্ষতিসহ অন্যান্য বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি। সেই হিসেবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবার এই পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখে।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এআরআই-এর এক সমীক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের হিসাব বলছে গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা যদি নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেটিকে জনসংখ্যা বোনাস বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। বাংলাদেশ এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের জন্য গর্ব করে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা এ গর্বের জায়গাতেই আঘাত হানছে বেশি।
পুলিশের তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, নিহতদের ৫১ শতাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি।
মোজাম্মেল চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা বিশেষ গুরুত্বের সাথে নথিভুক্তি করা, বিশেষ নজরদারিতে তদন্ত করা, দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করা, দ্রুত বিচার নিষ্পতি করা গেলে এই সেক্টরে আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা সক্ষম হবে।
"অনেক ক্ষেত্রে দূর দূরান্তের যাত্রীরা রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেলে বা গুরুত্বর আহত হলে যানবাহন শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই সারাদেশে সিসি ক্যামেরা পদ্ধতিতে ট্রাফিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা গেলে প্রতিটি মামলায় আসামি শনাক্ত করা সহজতর হবে," বলেন তিনি।
এর মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা আমলে নেওয়া হলে তখন মানুষের মধ্যে আইন ভাঙ্গার প্রবণতাও কমে আসবে বলে উল্লেখ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।