অবরোধের ঝুঁকি এড়াতে নারায়ণগঞ্জে পণ্যবাহী যান চলেছে দিনের বেলা
বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে দিনের বেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ও কড়াকড়ি অবস্থানের কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেকটাই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু সূর্য ডোবার সাথে সাথেই চালক-যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বাড়ে। এ অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নারায়ণগঞ্জে রাতের বদলে দিনেই চলেছে পণ্যবাহী যানবাহন।
নারায়ণগঞ্জ শহরে স্বাভাবিক সময়ে রাত ৮টার পর থেকে সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল শুরু হতো। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম দফার অবরোধে পালটেছে সময়সূচি। রাতের বদলে দিনের বেলা গন্তব্যস্থলে রওনা হয়েছে পণ্যবাহী যানবাহন।
সোমবার ও বুধবার (১৫ নভেম্বর) দিন-রাত উভয় সময়ে সরেজমিনে সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অবরোধের রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেশ কম। যদিও ঘরমুখো মানুষ গণপরিবহনে চেপেই বাড়ি ফেরেন, তবে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরির সংখ্যা ছিল অল্পই।
অন্যদিকে বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের সড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ লাইনও দেখা যায়।
চট্টগ্রামগামী কাভার্ড ভ্যানচালক সোহেল রানা বলেন, 'দিনের বেলা রাস্তায় পুলিশ থাকে। খুব একটা সমস্যা হয় না। সামনে পড়লে সর্বোচ্চ দুই–তিনটা ইট মারবে। কিন্তু রাতে পুলিশ থাকে না রাস্তায়, ওই সময় গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় থাকে।'
এ চালক জানান, দিনে গাড়ি চালানোর পর পেট্রোল পাম্পে গাড়ি নিয়ে রাত কাটান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, 'অবরোধে মালিকেরা গাড়ি নিরাপদ রাখার জন্য দিনের বেলা পাঠান। কোনো কোনো মালিক অবশ্য রাতেও [গাড়ি] ছাড়েন — এটা মালিকদের ইচ্ছের ওপর। কিন্তু দিনের বেলা ট্রাক বেশি চলছে এখন।'
'আমরা কোনো নিয়ম তৈরি করিনি, কিন্তু পরিস্থিতির জন্য এমন হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।
অবরোধের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে দাবি করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'অবরোধে নারায়ণগঞ্জ–সাভার–গাজীপুরে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে খরচ অনেক বেড়েছে। নিটিং থেকে ডাইং, ফ্যাব্রিক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে।'
এতে উৎপাদন ব্যাহত ও রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'রপ্তানির পণ্য সকাল ১০টায় পুলিশ কর্ডনে পাঠাচ্ছি। ঝুঁকি এড়াতে সময়ের কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে সত্য।'
ঝুঁকির কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, 'ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চালকদের। পাশাপাশি কোনো ক্ষতির মুখে পড়লে সরকারের তরফ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অতীতেও '১৩–'১৪ সালে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সরকার।'