কাশ্মীরে মজুত বাড়ানো হচ্ছে, সেনা ক্যাম্পের জন্য স্কুল-কলেজ খালির নির্দেশ
ভারত অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকায় চীনের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় সরকারের জারি করা দুটি পৃথক নির্দেশে দুই মাসের জন্য রান্নার গ্যাস বা এলপিজি সিলিন্ডার মজুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কার্গিল সীমান্তের গান্ডারবাল এলাকায় বিদ্যালয় ভবনগুলোকে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহারের জন্য খালি করার কথাও জানানো হয়েছে আরেক নির্দেশনায়।
এর ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাবাসী এবার ভারত-চীন সংঘাতের মাঝে পড়ে নতুন দুর্ভোগের আতঙ্কে ভুগছেন। সরকারের তরফে ভিন্ন কারণ জানানো হলেও, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই কাশ্মীরবাসী বড় ধরনের সংঘাতের প্রমাদ গুনছেন।
গত ২৩ জুন এসব নির্দেশ জারি করেন কাশ্মীরে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপরাজ্য প্রশাসক জি.সি. মুর্মু'র একজন উপদেষ্টা। জরুরি ভিত্তিতে এসব আদেশ পালনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভূমিধ্বসের কারণে জাতীয় মহাসড়কে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায়- কাশ্মীর উপত্যকায় যেন এলপিজি গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে তা নিশ্চিত করতেই এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে খাদ্য, বেসামরিক সরবরাহ এবং ভোক্তা অধিকার দপ্তরের পরিচালকের জারি করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে, জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোকে দুই মাসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ এলপিজি গ্যাস তাদের গুদাম এবং সিলিন্ডার ভর্তি করার কারখানায় মজুত রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রথম গ্রীষ্মের মাঝামাঝি স্থানীয় প্রশাসন এলপিজি গ্যাস মজুত বৃদ্ধির নির্দেশ দিল। সাধারণত, অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে তীব্র শীতকালে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার নজির রয়েছে। তুষারপাতের কারণে মহাসড়কে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই ওই ঋতুতে মজুতের পরিমাণ বাড়ানো হয়।
আরেকটি নির্দেশনা জারি করা হয় গান্ডারবাল পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে। এর আওতায় ওই জেলার ১৬টি স্কুল-কলেজ খালি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
'২০২০ সালের অমরনাথ তীর্থযাত্রাকে সামনে রেখে এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আধা-সামরিক বাহিনীর কোম্পানিগুলোর জন্য এসব স্থাপনা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে' জানায় আদেশনামাটি।
তবে ভারতে চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মাঝে এবার অমরনাথ তীর্থযাত্রা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তীর্থে আসা মানুষের সংখ্যাও হতে পারে অনেক কম। নিশ্চিতভাবেই অন্য কোনো ঘটনার প্রস্তুতি হিসেবে এভাবে কার্গিল সীমান্ত সংলগ্ন ওই জেলায় সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ভারত।
কার্গিল কেন্দ্রশাসিত লাদাখের অংশ। আর সেখানেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সম্প্রতি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী।
তাই কাশ্মীরিদের ভীতি একেবারেরই অমূলক নয়।
হাওয়াল জেলার বাসিন্দা নাজির আহমেদ বলেন, 'সবার মাঝেই স্পষ্ট উদ্বেগ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আমাদের মাথার উপর দিয়ে দৈনিক যুদ্ধবিমান উড়ছে। গত বছরের ফেব্রুরারি এবং আগস্ট মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় এমন বেশ কিছু নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, উপত্যকায় আবারও খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।'
পাকিস্তানের বালাকোটে গত বছর ভারতের বিমান হামলা, এরপর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরও- এধরনের জরুরি নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।