ইফতারের আগে যানজট নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে: ডিএমপি
বেশিরভাগ অফিস একই সময়ে ছুটি হওয়ায় ইফতারের আগে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, রমজানে দুপুর সাড়ে তিনটায় অফিস ছুটির পর ইফতারের আগ পর্যন্ত ঢাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। একই সময়ে সকল যানবাহন গন্তব্যে রওনা দেওয়ায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে অযাচিত ট্রাফিক যানজট তৈরি হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, রাজধানীর বিদ্যমান বাস্তবতায় চার বা তিন রাস্তার ইন্টার সেকশনে যেকোনো এক লেনের যানবাহনের জন্য সিগনাল চালু করলে অন্য লেনগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়। আবার যেহেতু ইফতারের আগে সকলেই ফিরতে চায়, তাই লাইন ম্যানেজমেন্টের দিক বিবেচনা করলে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়।
তাই অফিস ছুটির সময় অর্থাৎ সাড়ে তিনটা থেকে বা এর কাছাকাছি সময় থেকে বাসার উদ্দেশ্যে ফেরা নগরবাসীর প্রতি বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে রমজানের প্রথম ১০ দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ শেষে বিভিন্ন করণীয় বিষয় তুলে ধরে এসব কথা জানান ডিএমপি ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করা হয়, যা সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। রমজানের শুরু থেকেই ট্রাফিক বিভাগ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সড়কের পাশে অযাচিত পার্কিং না করা থেকে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
নির্ধারিত বাস স্টপেজে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের টার্নিং পয়েন্টে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্টপেজে গিয়ে অপেক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অনেক স্টপেজে যাত্রী না থাকলেও গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান নেয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং যানজট তৈরি হয়।
তিনি বলেন, "ডিএমপির পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে যানবাহন অযাচিতভাবে ডিএমপি এলাকায় প্রবেশ করে যানজট তৈরি করে। ডিএমপির ট্রাফিক সদস্যদের এ বিষয়ে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
"ভারী যানবাহনের জন্য ডিএমপি এলাকায় প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই সময়সীমা না মেনেই তারা প্রবেশের চেষ্টা করেছে, যা যানজটের সৃষ্টি করে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ভারী যানবাহন চলাচলের বিষয়টি মেনে চলতে হবে।"
বিভিন্ন সময় ঢাকা শহরের ছোট বড় সড়কে মেরামতের কাজ চলছে। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রমজান মাসে এসব সড়ক চলাচল উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চিঠি চালাচালিও করা হয়েছে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে, যা সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু রাস্তার মাঝে আইল্যান্ড ভাঙা থাকায় অনেক ক্রেতাসাধারণ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। যানবাহনের চলাচল ও গতি এতে ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রমজান মাসকে ঘিরে কোনো ব্যবসায়ী যেন সড়কে তার ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে না পারে এজন্য রমজানের শুরু থেকেই ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়িয়ে থাকার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা বাস মালিক ও চালকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি এ বিষয়ে। রমজান মাস ছাড়াও সবসময়ই আমরা টার্মিনাল ভিত্তিক ও বিভাগভিত্তিক সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলছি। পিক আওয়ারে সিগনালে জমে থাকা গাড়িগুলো দ্রুততম সময়ে রিলিজ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সে কারণে ওই সময় ট্রাফিক সদস্যদের মুভমেন্ট বেশি থাকে। এ সুযোগে অনেকসময় গণপরিহনগুলো ডিসিপ্লিনের বাইরে চলে যায়, কিন্তু বিষয়গুলো যখনই আমাদের নজরে আসে আমরা ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করি।"
গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকা যাওয়ার সড়কে রাতভর যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "মিটফোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকাতে বড় বড় আড়ত রয়েছে। চাল, ফল, ওষুধসহ বিভিন্ন আড়ত রয়েছে, তাই এলাকাটি এমনিতেই ব্যস্ত। এই সড়কে বিভিন্ন স্পটে ফুটওভার ব্রিজ দরকার, আর যেগুলো আছে সেগুলো ঠিকঠাক ব্যবহৃত হচ্ছেনা। এখন ওই এলাকার ব্যবসায়ীদেরকেও ব্যবসা করতে দিতে হবে, কিছু করার নেই। তবে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে, আমরা সর্বোচ্চ ইউটিলিটি দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছি।"
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে, এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, "রমজানের প্রথম থেকেই প্রত্যেকটা মার্কেটগুলোতে আমরা কথা বলেছি। যখন বেশি ভিড় থাকবে, তখন কোন পয়েন্টে পার্কিং হবে, অতিরিক্ত গাড়িগুলো কোথায় নেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। ব্যস্ততম এলাকায় কমিউনিটি ট্রাফিক ডেভলপ করা হয়েছে। আশা করি, সুশৃঙ্খলভাবে নগরবাসীকে নির্বিঘ্নে যাতায়াত উপহার দিতে পারবো।"