হাতে ফোসকা ফেলে বাড়ি ফিরলেন ইমরুল
দীর্ঘ চার মাস পর রোববার মাঠের অনুশীলনে ফিরেছেন বাংলাদেশের ৮ ক্রিকেটার। মিরপুরে প্রথমদিন ব্যক্তিগত অনুশীলন সেরেছেন মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন ও শফিউল ইসলাম। ব্যক্তিগত অনুশীলনে আগ্রহী ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন ইমরুল কায়েসও। মুশফিক, মিঠুনদের দেখে মাঠে ফিরতে তর সইছিল না তারও।
সোমবার আগেভাবেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন ইমরুল। কিন্তু উঠেই মন খারাপ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। বাইরে চোখ পড়তেই দেখলেন বৃষ্টি ঝরছে। যদিও মিরপুরে আসার পথে বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি। ঠিকই মিরপুরে হাজির হয়ে যান তিনি। তবে রানিং করা হয়নি ইমরুলের। ব্যাটিং আর জিম করেই প্রথমদিন পার করেছেন।
১০টা থেকে অনুশীলন ছিল ইমরুলের। যথা সময়েই মাঠে হাজির হন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। শুরুতে আধা ঘণ্টার মতো জিম করে ইনডোরে যান ইমরুল। ইনডোরের নেটে ৪৫ মিনিট ব্যাটিং করেন তিনি। এরপর আবারও জিমে ঘাম ঝরান ইমরুল।
করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় মাঠে আসা হয়নি। বাকি ক্রিকেটারদের মতো ইমরুলও বাসায় নিয়মিত ফিটনেসের কাজ করে গেছেন। যে কারণে জিমে কাটানো সময়টা নতুন মনে হয়নি তার কাছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যাটিং করা হয়নি, তাই সোমবার ব্যাট ধরে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে ইমরুলের মাঝে।
কেবল অন্যরকম অনুভূতিই নয়, পুরনো এক অভিজ্ঞতা নতুন করে হলো ইমরুলের। ৪৫ মিনিট ব্যাটিং করে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে তার। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ক্রিকেট বলে ব্যাটিং করতে গিয়ে হাতে ফোসকা পড়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বছর পার করা ক্রিকেটারদের সচরাচর এমন হয় না। কিন্তু ইমরুলের বেলায় এমনই হলো।
ফোসকা পড়ে যাওয়ায় মন মতো ব্যাটিং করা হয়নি ইমরুলের। আরও কিছুক্ষণ ব্যাটিং করার ইচ্ছা থাকলেও ৪৫ মিনিটের বেশি পারেননি। বাধ্য হয়েই গ্লাভস, প্যাড খুলে রাখতে হয় তাকে। মঙ্গলবার কীভাবে ব্যাটিং করবেন, সেটা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে তাকে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপচারিতায় ইমরুল বলেন, 'প্রথম দিনটা ভালোই গেছে। কিন্তু হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। তিন-চার মাস পর ব্যাটিং করলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ করতে পারলাম না। হাতে ফোসকা পড়ে যাওয়াও দুই-একদিন পর হয়তো ব্যাটিং করতে হবে। তবে অবস্থা ভালো হলে কালও করব ব্যাটিং, দেখা যাক। খুব বেশি ফোসকা না পড়লেও হাতে ব্যথা লাগছিল। এ কারণে আর করিনি।'
এতদিন পর ব্যাট ধরে ইমরুলের মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ে ছন্দ পেতে সময় লাগবে, মানিয়ে নিতে একটু সমস্যাও হবে। ইমরুল বলেন, 'মানিতে নিতে অবশ্যই সময় লাগবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বডি মুভমেন্ট, ফুটওয়ার্ক; এসব ঠিক হতে সময় লাগে। এক সপ্তাহ অনুশীলন না করলেই বল দেখতে সমস্যা হয়। সেখানে চার মাস কিছু করিনি। এটা তো অবশ্যই সমস্যা।'
হাতে ফোসকা পড়া, ব্যাটিংয়ের ছন্দে সমস্যা; তবুও প্রথম দিনটি ভালো মনে হচ্ছে ইমরুলের। মাঠে ফেরা, ব্যাটিং করতে পারায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তিনি, 'প্রায় ৪ মাস পর ব্যাট ধরলাম, ব্যাটিং করলাম। একটু অন্যরকম অনুভূতি। খুব ভালো লাগছে। কারণ ঘরে বসে আমরা ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু ব্যাটিং করার অভ্যাসটা গড়ে উঠেনি। ৪ মাস পর ব্যাটিং করলাম খুব ভালো লাগছে।'
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে খেলা না থাকায় সময়টা কাজে লাগাতে চান ইমরুল। স্কিল ও ফিটনেসে নিজেকে নতুন ধাপে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'আশা করি এই সুযোগটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারব। কারণ আমাদের একটা গ্যাপ আছে। আমরা আমাদের স্কিল বা ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে পারব।'
'আমার মনে হয় এটা খুব ভালো একটা সময় ক্রিকেটারদের জন্য। যদি এই সময়টুকু সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি, স্কিল এবং ফিটনেসের দিক থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে পারব।' যোগ করেন ইমরুল।
সোমবার মুশফিক ও শফিউলের অনুশীলন ছিল না। তবে দ্বিতীয় দিনের অনুশীলন সেরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। বৃষ্টির কারণে তিনিও রানিং করতে পারেননি। মাঠে পৌঁছে শুরুতে আধা ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। এরপর প্রায় ৪০ মিনিটের মতো জিম করে অনুশীলন শেষ করেন মিঠুন।
ক্রিকেটারদের ফিটনেসের অবস্থা যে ভালো নয়, প্রথম দিনের অনুশীলনেই তা বোঝা গেছে। ৩০ মিনিট রানিং করে একাডেমি মাঠের এক কোণে গিয়ে বসে পড়েন শফিউল। যে মুশফিক সবার আগে অনুশীলনে গিয়ে সবার পরে মাঠ ছাড়েন, সেও দৌড়ে এতটাই হাঁপিয়ে ওঠেন যে, হাঁটুতে দুই হাতে ভর দিয়ে উপুর হয়ে থেকেছেন অনেকক্ষণ। এরপর হাত পা ছড়িয়ে মাঠে শুয়ে থাকেন ১৫ মিনিটের মতো।
দ্বিতীয় দিন ইমরুল জানালেন হাতে ফোসকা পড়ার কথা। দীর্ঘ বিরতির কারণে ধাক্কাটা যে জোরেশারেই লেগেছে, সেটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। খেলা শুরুর আগেই যে ক্রিকেটারদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, সেটাও বুঝতে বাকি থাকছে না।