বিপুল ছাড়ে স্টোর খালি করছে রিটেইল ব্র্যান্ডগুলো
দেশের অন্যতম ফ্যাশন রিটেইল ব্র্যান্ড ইনফিনিটির যেকোনো আউটলেটে গেলেই দেখা মিলছে বিশাল মূল্যছাড়ের অফার। পুরানো পোশাকে ৫০ ও নতুন পোশাকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে ব্র্যান্ডটি।
জুতা, জুয়েলারি, কসমেটিকস ও অন্যান্য ফ্যাশন পণ্যেও বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে ওই প্রতিষ্ঠান। নতুনসহ সব ধরনের পণ্যে এমন ছাড় অতীতে কখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন ইনফিনিটির কর্মকর্তারা।
বসুন্ধরা শপিং মলের ইনফিনিটি মেগামলের ব্যবস্থাপক আফসার উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পুরনো পণ্যের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক নতুন পণ্যের স্টক জমেছে। মুনাফার চেয়ে এসব পণ্য বিক্রি করে স্টোর ফাঁকা করাই এখন মূল লক্ষ্য।'
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর রিটেইল বিজনেস চালু হলে ক্রেতা টানতে নানা নামে এ অফার দিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক সময়ে ঈদকে ব্যবসার মুখ্য সময় হিসাবে নিলেও এবার তা পরিণত হয়েছে স্টোর খালি করা ও পরিচালন ব্যয় মেটানোর নীতিতে।
পণ্য ও ডিজাইন ভেদে ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে বাট, এপেক্স, লোট্টো, জেন্টলমেন, ইয়োলো, ক্যাটস আই, মেনস ক্লাব, সনি র্যাংঙ্কস, ভিশন, অটবি, বেস্ট বাই, যমুনাসহ প্রায় সব ব্র্যান্ড। বিশেষ ছাড়ে ইএমআই ও অনলাইন মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করছে ব্র্যান্ডগুলো।
গত ১০ মে থেকে সরকার দোকানপাট, মার্কেট, শপিং মল ও বিপণিবিতানগুলো খোলার অনুমতি দিলেও তাতে ভোক্তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি মার্কেট চালু করার সুযোগ পেয়েও করোনা সংক্রমণ রোধ করতে বড় বড় শপিং মল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বিপুল স্টক জমে যাওয়া এবং দোকান ও কর্মচারীদের খরচ যোগাতে ব্র্যান্ডগুলো লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'এই মূহুর্তে বেঁচে থাকাকে বড় করে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসা বাদ দিয়ে শুধু মূলধন তুলে আনতে পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ খরচ যোগাতে লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন।'
সবচেয়ে বেশি ছাড় পোশাকে
ঢাকার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছাড় দিয়ে পোশাক বিক্রি করছে পোশাক ব্র্যান্ডগুলো। ইনফিনিটির চেয়েও বড় ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে দেশের অধিকাংশ রিটেইল ব্র্যান্ড। ছেলেদের পাঞ্জাবি, পোলো টি-শার্ট, গ্রাফিক্স টিশার্ট, বিজনেস ফরমাল এবং ক্যাজুয়াল শার্ট এবং মেয়েদের বিভিন্ন ট্রেন্ডি কুর্তি, এথনিক থ্রি-পিস, ফিউশন টপসসহ শিশুদের টি-শার্ট, পোলো টি-শার্ট, ফ্রক ও টপসে এ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।
শো-রুম ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধের অর্থ যোগাতে ৭০ শতাংশ হারে ফ্লাট ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে দেশের অন্যতম পোশাক ব্র্যান্ড জেন্টেল পার্ক। একই হারে ছাড় মিলছে বেক্সিমকোর পোশাক ব্র্যান্ড ইয়োলোতে। পণ্যভেদে ৭৫ শতাংশ পযন্ত ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইয়োলোর বেইলি রোড শাখার সেলস ম্যানেজার ইকবাল হাসান বলেন, তিন মাসের জমে থাকা পোশাক এখন বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পুরানো পোশাকের সঙ্গে নতুন পোশাকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলরে শুরু হয়েছে মুনসুন সেল অফার। এ অফারে সব পণ্যে থাকছে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ ছাড়। সব পণ্যে অর্ধেক দাম অফারে বিক্রি করছে রঙ বাংলাদেশ।
৫০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে দেশীয় বড় ব্র্যান্ড সেইলর, মেনস ক্লাব, রিচম্যান, ট্রেন্ডস, লুবনা, জেন্টল ব্রেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড।
নিজেদের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সব পণ্যে ৪০ শতাংশ ছাড়ে পোশাক বিক্রি করছে ক্যাটস আই। একই রকম ছাড় দিচ্ছে অক্সিজেন, রেড অরিজিনসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড।
ক্যাটস আইয়ের বসুন্ধরা শাখার সেলস কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, 'কারখানায় নতুন পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। শো-রুম ও কারখানার খরচ মেটাতে পুরানো সব পণ্যে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। মানুষকে মার্কেটমুখী করাও এ ছাড়ের একটি কারণ।'
বাটা-এপেক্সে ছাড়
দেশে জুতা ও স্যান্ডেলের সবচেয়ে বড় নাম বাটা ও এপেক্স ঈদকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ ছাড় দিয়েছে বিভিন্ন মডেলের ওপর। অধিকাংশ মডেলে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে ক্রেতা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে বাটা।
অন্যদিকে, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার তাদের নির্দিষ্ট মডেলে দিচ্ছে ডাবল ডিল অফার। এ ডিলের আওতায় এক জোড়া জুতা কিনলে সঙ্গে অন্য একটি প্রোডাক্ট ও অর্থ ফেরৎ পাচ্ছেন ক্রেতারা।
এ অফারের আওতায় কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশের বেশি পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এপেক্সের সবচেয়ে বড় আউটলেট বসুন্ধরার ক্যাশিয়ার মো. রাজিব।
তিনি বলেন, 'সাধারণ সময়ে দৈনিক ২৫-২৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হলেও এখন তা ১০ লাখের কম হচ্ছে। ফলে ছাড় দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।'
২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে ইতালির ব্র্যান্ড লোট্টো। ইএমআই ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধে আরও ১০-১৫ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে লোট্টোর জুতা, স্যান্ডেলসহ পোশাকে।
বসুন্ধরা আউটলেটের ব্যবস্থাপক মো. খোকন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সাধারণ সময়ের তুলনায় ২৫-৩০ শতাংশ কাস্টমার আসছেন। বিপুল পরিমাণ স্টোর জমে আছে। ফলে ছাড় দিতে হচ্ছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি বেশ ভালো।'
ইলেকট্রনিকস পণ্যে ছাড়
অন্যান্য রিটেইল পণ্যের তুলনায় বিক্রি কিছুটা বেশি হলেও ছাড় আছে ইলেকট্রনিকস পণ্যেও। র্যাংঙ্কস তাদের সব রেফ্রিজারেটরে ৩০ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারে ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছে অন্যতম বড় ব্র্যান্ড স্যামসাং। যমুনা ইলেকট্রনিকস তাদের সব পণ্যে দিচ্ছে ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
মিনিস্টার ও ভিশন রেফ্রিজারেটর তাদের পণ্যে দিচ্ছে ফ্লাট ২০ শতাংশ ছাড়। অন্যদিকে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন তাদের ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারে দিচ্ছে পণ্য কিনে লাখপতি হওয়ার অফার ও ক্রেডিট কার্ডে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রির মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। প্রথম তিন মাসে বিক্রির সুযোগ ছিল না। ফলে কোম্পানিগুলোর স্টোর ও ক্রেতাদের চাহিদা বেড়েছে। ক্রেতা টানতে ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে।
ব্যতিক্রম আড়ং
দেশের প্রায় সব রিটেল ব্র্যান্ড বিপুল ছাড় দিলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আড়ং। বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম হলেও ছাড় নেই আড়ংয়ের পণ্যে। পাঞ্জাবি, শাড়িসহ সব পণ্যই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সব শো-রুমে।
তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি অর্ধেক বলে জানিয়েছেন আড়ং বসুন্ধরা শাখার একজন সিনিয়র বিক্রয় কর্মী।
তিনি বলেন, 'আড়ংয়ের মোট বিক্রির ৭০ শতাংশই রোজার ঈদে সম্পন্ন হয়। এবার সেটি হয়নি। ফলে পণ্য স্টোরও করা হয়নি। তবে অনলাইনের মাধ্যমে ফ্রি অর্ডার নিয়ে ১০ মে থেকে পণ্য বিক্রি করছে আড়ং। তাই স্টক স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নেই। মার্কেটের ডিমান্ডের অতিরিক্ত পণ্য নেই।'